পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
311

দিকে জগদলহাটে পাকবাহিনীর ঘাঁটির উপরে আক্রমণ চালাই। জগদলহাটেও পাকবাহিনীর সঙ্গে আমাদের ভীষণ যুদ্ধ হয় কিন্তু তাদের তীব্র আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে চুইনদীর পশ্চিম পারে চলে আসি।

 অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে অমরখানা ও জগদলহাটে পুনরায় আক্রমণ করা হয়। কিন্তু পাক-বাহিনীকে প্রতিহত করা যায় নাই। অক্টোবর মাসের ২য় সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রথম কমিশনপ্রাপ্ত ২য় লেঃ এ, মতিন চৌধুরী ও ২য় লেঃ মাসুদুর রহমান আমার সাব-সেক্টরে যোগদান করে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ভিতরে পচাগড়, পুটিমারী, বোদা, ঠাকুরগাঁও ও বীরগঞ্জে এবং দিনাজপরের এফ এফ বাহিনীকে হালকা অস্ত্র ও গ্রেনেড দিয়ে পাঠান হয়। সেই সময় পাকবাহিনী-রাজাকারদের ডিফেন্সের উপর আমাদের কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধাগণ সেকশন ভিত্তিতে ভাগ হয়ে পাকবাহিনীর গতিপথে রেইড ও এ্যামবুশ করে। আমাদের এ্যামবুশে পাকবাহিনীর বহু সৈন্য হতাহত হয়। এইভাবে নভেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত পাকবাহিনীর উপর হামলা, রেইড ও এ্যামবুশ চলতে থাকে।

 ২২শে নভেম্বর রাতে আমার তিন কোম্পানী নিয়ে পুনরায় অমরখানা আক্রমণ করি। এই যুদ্ধে ভারতীয় আর্টিলারী পাকবাহিনীর ঘাঁটির উপরে খুব শেলিং করে। তীব্র আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী হটে যায়। আমরা অমরখানা দখল করি। এই যুদ্ধে বি-এস-এফ বাহিনী আমাদেরকে কভারিং ফায়ার দিয়ে যথেষ্ট সাহায্য করে। সেই দিনই ভারতীয় ১২-রাজপুতানা রাইফেলস রেজিমেণ্ট অমরখানার সম্মুখে অবস্থান নেয়। নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখে চুই নদীর পশ্চিম পারে আমদের ডিফেন্সের পিছনে ভারতীয় ৭নং মারাঠা রেজিমেণ্ট অবস্থান নেয়। মুক্তিযুদ্ধের মোড় পরিবর্তন হয়ে যায়।

 ২৩শে নভেম্বর রাতে ভারতীয় বাহিনীর সহযোগিতায় আমরা জগদলহাট আক্রমণ করি। উভয়পক্ষে ভীষণ গুলি বিনিময় ও আর্টিলারী শেলিং হয় কিন্তু সেদিন জগদলহাটে আমাদের সাফল্য লাভ হলো না। আমাদের পক্ষে সেই যুদ্ধে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হয়। ২৪শে নভেম্বর পুনরায় জগদলহাট আক্রমণ করি। আমাদের আক্রমণে পাক বাহিনী জগদলহাট ডিফেন্স ছেড়ে দিয়ে পচাগড় অভিমুখে পশ্চাদপসরণ করে। জগদলহাট আক্রমণে ভারতীয় ১২- রাজপুতানা রাইফেলস রেজিমেণ্টের 'এ' কোম্পানী আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে যুদ্ধ করে। জগদলহাট দখলে আমাদের ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত্বরণ করে। তার মধ্যে হাওলাদার সকিমউদ্দিন বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে শাহাদাত্বরণ করে। কয়েকজন আহত হয়।

 এই সময়ে চুই নদীর পশ্চিম পারে অমরখানা ও জগদলহাটে বরাবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈন্যগণ পজিশন নেয়। ২৪শে নভেম্বর সম্মিলিত বাহিনী জগদলহাট থেকে পচাগড় অভিমুখে রওনা হয়। পথে পচাগড় থেকে ১ মাইল দূরে থাকতে পাকবাহিনী আমাদের উপর বিক্ষিপ্তভাবে শেলিং ও গুলি করতে থাকে। ফলে সেখানে ডিফেন্স নিতে হয়। উক্ত জায়গায় আমাদের তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত্বরণ করে ও সাতজন আহত হয়। তার মধ্যে ২য় লেঃ এম, মতিন চৌধুরীও গুরুতরভাবে আহত হয়।

 পঁচাগড়ে পাকবাহিনীর খুব মজবুত ঘাঁটি ছিল। এখানে পাকবাহিনীর প্রায় তিন ব্যাটালিয়ন সৈন্য নিয়োজিত ছিল। পাকবাহিনীর পচাগড়ের চতুর্দিকে পাক্কা বাংকার ও মজবুত ট্রেঞ্চ ছিল।

 ২৬ শে নভেম্বর রাতে আমাদের মুক্তিবাহিনীর ১ ব্যাটালিয়ন ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২ ব্যাটালিয়ন যৌথভাবে পাক-বাহিনীর পাকা ঘাঁটি পচাগড় আক্রমণ করে। সারারাত যুদ্ধ চলে কিন্তু পাকবাহিনী পচাগড় ডিফেন্সে থাকতে সমর্থ হয়। এই রাতে ভারতীয় বাহিনীর ১০০ জনের মতো জোয়ান ও ২২ জন মুক্তিবাহিনী হতাহত হয়। ২৭ তারিখ সারা দিনরাত যুদ্ধ চলে। সেদিন ভারতীয় বিমান বাহিনী পঁচাগড়ে পাকবাহিনীর উপর বিমান হামলা চালায় এবং ২৮ তারিখ দিনেও আক্রমণ অব্যাহত থাকে। ২৮ তারিখ রাতে পুনরায় ভারতীয় বাহিনীর তিন ব্যাটালিয়ন ও মুক্তিযোদ্ধা ১ ব্যাটালিয়ন ও ৩ শত এফএফ তাদের উপর আক্রমণ চালায়। সেই রাতে ভারতীয় আর্টিলারী রেজিমেণ্ট ৬০টি গান থেকে একসাথে শেলিং করে। উক্ত রাতে ৬ হাজার গোলা পাক