পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
318

আর বন্দী। প্রচুর হাতিয়ার ও গোলাবারুদ, রেশন ও অন্যান্য সরঞ্জাম হইয়াছে আমাদের হস্তগত। রাজাকার এবং দালালের তো কথাই নাই। কুড়ি-কুড়ি শ-শ প্রতিদিন আত্মসমর্পণ করিতেছে আর অজস্র হাতিয়ার- গোলাবারুদ দিয়া যাইতেছে জমা।

 ৯ অথবা ১০ই ডিসেম্বর। স্থান ভাতগাঁও ব্রীজ আর তার আশপাশ এলাকা। দুশমনদের নিকট হইতে আসিল ভীষণ বাধা। দুইটি ট্যাঙ্ক ধ্বংসসহ বহু মিত্র সৈন্য হতাহত হইল, যাহা এই এলাকায় এর আগে হয় নাই কখনো। অগত্যা একনাগাড়ে কয়েকদিন ওখানে থাকিতে হইল, মিত্রবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা হইল। সম্মুখের দিকে একেবারে চুপ থাকিয়া বাম হাতে খানসামা হইয়া হঠাৎ প্রবল আক্রমণ চালান হইল- যাহাতে অংশ নিল মিত্রবাহিনীর ছয়টি মাঝারিসহ ৬০টি কামান, একখানা হেলিকপ্টার, দুইটি ফাইটার ও একটি ট্যাঙ্ক বহর। মূহুর্তে বহু দুশমন সেনা হতাহত হইল, ধ্বংস হইল ৬ খানা ট্যাঙ্ক, বাকী দুশমন সৈন্য ঘাঁটি ছাড়িয়া লেজ গুটাইয়া নীলফামারীর দিকে দিল ছুট। ফলে প্রধান অংশ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া অবরুদ্ধ হওয়ার নিশ্চিত আশঙ্কায় দুশমনরা ভাঙ্গিয়া পড়িল। তাহারা ভাতগাঁওয়ের বিখাত ও গুরুত্বপূর্ণ মজবুত পুলটিকে একবারে ধ্বংস করিয়া আমাদের জন্য একটি বিরাট বাধা সৃষ্টি করতঃ সে এলাকায় হইতেও পাততাড়ি গুটাইল একেবারে সৈয়দপুরে। আমাদের তরফ হইতেও দুইমুখী পশ্চাদ্ধাবন চলিতে লাগিল নাছোড়বান্দা হইয়া। সৈয়দপুর প্রায় ঘেরাও। হঠাৎ দেখা গেল পাকবাহিনীর হাতে সাদা নিশান-শান্তির প্রতীক-আত্মসমর্পণের চিহ্ন। জেনেভা কনভেশন- নমস্য। তাই আমাদের অস্ত্র সংবরণ করিতে হইল- লড়াইয়ে দিতে হইল ইতি। দিনটি ছিল ১৬ই ডিসেম্বর।

স্বাক্ষরঃ মোঃ কাজিমউদ্দিন
ডি-এ-ডি
১২-৬-১৯৭৪

সাক্ষাৎকারঃ মোঃ নূরুজ্জামান[১]

 ২৭শে মে ভোরবেলা সেক্টর কমাণ্ডিং প্রধান ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ সাহেব, সুবেদার গোলাম মোস্তফা এবং আমি থানা হেডকোয়ার্টারে বসে ছিলাম। এমন সময় উলিপুর (থানা) নিবাসী বলে পরিচয়দানকারী দু'জন মৌলভী সাহেব পাকিস্তানী সৈন্যরা ধরলা নদী অতিক্রম করে নাই বলে জানায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পুনরায় পাটেশ্বরী ডিফেন্সে পাঠাতে অনুরোধ করে। হানাদার সৈন্যরা ধরলা নদী অতিক্রম করে নাই এই মর্মে তারা শপথ করে। উক্ত শপথের উপর ভিত্তি করে একটি ট্রাক, একটি পিকআপ গাড়ী ও একটি জীপগাড়ী বোঝাই প্রায় ১০০জন গেরিলাকে ঐ দিনই পুনরায় পাটেশ্বরী ডিফেন্সে পাঠানো হয়। গেরিলদের বহনকারী গাড়ী তিনটি পাটেশ্বরী ডিফেন্সের কাছাকাছি পৌঁছাতেই এ্যামবুশরত পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের ঘিরে ফেলে। ফলে গেরিলারা দিশেহারা হয়ে লাফিয়ে নিচে নেমে হানাদার সৈন্যদের সাথে খণ্ডযুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই গেরিলারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং বেশ কিছুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা হানাদার সৈন্যদের গুলিতে নিহত হন। গেরিলা যোদ্ধাদের অন্যতম প্রধান কমাণ্ডার মোজাহিদ ক্যাপ্টেন শত্রুসৈন্যদের অজস্র গুলির মুখেও সংঘর্ষস্থল পরিত্যাগ করে নাই। বেশ কিছুসংখ্যক হানাদার সৈন্যকে খতম করে তিনি বীরের ন্যায় মৃত্যুবরণ করেন। এই সংঘর্ষে নিহত মুক্তিযোদ্ধারা হলেনঃ ১। সিপাহী আবুল কালাম, সাবেক ই-পি-আর নং ১৯৩৭৭; ২। সিপাহী আবুল কাশেম, সাবেক ই-পি-আর নং- ৫৫৩৪; ৩। সিপাহী সেকেন্দার আলী, সাবেক ই-পি-আর নং- ১৪২৮০; ৪। এম এপ, দেলওয়ার হোসেন; ৫। এম, এফ ড্রাইভার আফজাল হোসেন; ৬। এম, এফ ড্রাইভার গোলাম রব্বানী; ৭। আতিকুর রহমান (কুক); ৮। সিপাহী আবুদল আলী, সাবেক ই-পি-আর; ৯। মোজাম্মেল হক (কুক); ১০। এম, এফ রবীজউদ্দিন ভুইয়া (ছাত্র); ১১। এম, এফ, আবুল কাশেম (ছাত্র); ১২।এম, এফ, আসাদুল্লা (ছাত্র); ১৩। এফ, এম, আব্দুল ওহাব (ছাত্র)।


  1. সাক্ষাৎকারটি প্রকল্প কর্তৃক ১৫-৭-৭৮ তারিখে গৃহীত।