পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
429

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খন্ড

সময় আমার আর একটি দল আশাসুনি থানা হেডকোয়ার্টার আক্রমণ করে। থানা স্টাফসহ দেড়শ’ রাইফেল, ২ জন পাঞ্চাবী পুলিশ, ৫৭ জন রাজাকার ধরে নিয়ে আসে। আশাসুনি থানার ব্যাঙদোহাতে আমার একটি দল আক্রমণ চালিয়ে ৩ জন পাঞ্চাবী পুলিশ ২ জন মিলিশিয়া এবং দেড়শ’ রাইফেলসহ ১০০ রাজাকার গ্রেফতার করা হয়।

 ২০শে নভেম্বর আমার হেডকোয়ার্টার বৈঠাঘাটাতে স্থানারিত করি। এসময় চালনা বাজারের সব রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। ২৮শে ডুমুরিয়া থানার বার আড়িয়া বাজার আক্রমণ করি। আজিজ সহ আমাদের ৩ জন মারা যায়। বিপুল অস্ত্রশস্ত্রসহ ১৬ জন রাজাকার আমরা ধরে নিয়ে আসি।

 ৮ই ডিসেম্বর মেজর জয়নাল আবেদীন ইঞ্জিনিয়ার আমার সাথে যোগ দেন। ১০ই ডিসেম্বর খুলনা বেতার ভবন আক্রমণ করি। সারারাত যুদ্ধ করি, কিন্তু জোয়ারের পানি আসার জন্যে আমরা ফিরে আসি। আমাদের ২ জন আহত হয়। এ সময় অয়ারলেস মারফত কর্নেল মঞ্জুর সাহেবের সাথে আমার যোগাযোগ হয় এবং তিনি খুলনা আক্রমণের পরিকল্পনা দেন। ১৫ই ডিসেম্বর ভোরবেলা খুলনা আক্রমণ করি। দু’ভাবে আক্রমণ করি-একটি জলপথে, অপরটি স্থলপথে। নদীপথে কমাণ্ডার ছিলাম আমি এবং স্থলপথে ছিলেন মেজর জয়নাল আবেদীন, বাবর আলী নেভী রহমতুল্লাহ। সকাল ৬টার দিকে খুলনা জেলা জয় করি এবং বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিই ১৬ ই ডিসেম্বর। আমার বাহিনীর কিছু সেনা (৫ জন) মারা যায়।

 বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাঞ্চাবী শোষণ থেকে মুক্তি লাভের জন্যে অস্ত্র ধরি।

স্বাক্ষরঃ এম. আরেফিন
২৮-৩-৭৩

সাক্ষাৎকারঃ মোঃ নুরুল হুদা
১৮-৯-১৯৭৩

 ২৬শে এপ্রিল পাকবাহিনী পটুয়াখালী দখল করে ও নানা স্থানে তারা ব্যাপক আক্রমণ ও অত্যাচার আরম্ভ করে। নগন্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওখানে অবস্থান করা আর সম্ভব হলো না। তাই অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য ভারতচলে গেলাম। পটুয়াখালী থেকে সুন্দরবন হয়ে ভারত যেতে আমাকে ও অপর দুজন সঙ্গী আতাহার ও ইউসুফকে অতিক্রম করতে হয়েছিল এক বিপদসঙ্কুল সুদীর্ঘ পথ। ভারত গিয়ে আমরা প্রথমে দেখা করলাম মেজর জলিল ও ক্যাপ্টেন হুদার সঙ্গে। তাঁরা তখন হাসনাবাদে। মে মাসের শেষের দিকে আমাদের ভর্তি করে দেয়া হলো ৯ নং সেক্টরের তকীপুর ক্যাম্পে। তখন তকীপুর ক্যাম্প ছিল ৯ নং সেক্টরের একমাত্র ক্যাম্প। ঐ অভ্যর্থনা ক্যাম্পে আমাদের নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৭০ জনে। কিছুদিন ওখানে থাকার পরে জুনের শেষের দিকে আমাদের পাঠানো হলো বিহারের চাকুলিয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। ওখানে আমাদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হলো। ৬ সপ্তাহের গেরিলা প্রশিক্ষণ শেষ করে ফিরে এলাম ৯ নং সেক্টরে।

 আগষ্ট মাসের এক রাত্রে আমরা বরিশাল সাব-সেক্টরের জন্য নিযুক্ত কমাণ্ডার ক্যাপ্টেন ওমরের (শাজাহান) নেতৃত্বে বাগদা বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলাম। আমরা বরিশালের বানারিপাড়া থানার বাড়াকুঠা স্কুলে শিবির স্থাপন করলাম। আসার পথে যশোরের একস্থানে আমরা পাকবাহিনীর বাধার সম্মুখীন হই। সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়ে আমরা অন্য পথে অগ্রসর হই। আমরা যখন ফরিদপুরের হুলারহাটের কাছাকাছি, তখন আমরা একটি বিমান ও একটি গানবোট দ্বারা অনুসৃত হই। কিন্তু ক্যাপ্টেন ওমরের বিচক্ষণতার জন্য আমরা ওদের চোখে ধুলো দিয়ে বরিশালের দিকে অগ্রসর হতে সক্ষম হই। যেহেতু আমাদের সমস্ত তৎপরতা প্রধানতঃ বরিশাল জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সে জন্য আমরা পথিমধ্যের সমস্ত সংঘর্ষ এড়িয়ে যাই।