পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
434

শাজাহান, মজিদ, মিজান শিখে নিল জাহাজটি চালাবার পদ্ধতি। মালয়েশিয়ানদের সসম্মানে জাহাজ থেকে উঠিয়ে যত্ন সহকারে তাদেরকে রাখলাম গলাচিপার একটি হোটেলে। জাহাজটাকে আমরা আমাদের যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করলাম।

 ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ। হাতেম আলী, আলমগীর, আজাদ, বারেক, ওদের সকলের নিকট ব্যক্তিগত চিঠি পাঠালাম পটুয়াখালী আক্রমণ করার প্ল্যান দিয়ে।

 ডিসেম্বরের ১০ তারিখ। রাত ১০ টার সময় বারেক তার দল নিয়ে পটুয়াখালীর উত্তর পার দিয়ে, আমি লোহালয়া অর্থাৎ পটুয়াখালীর পূর্ব দিক দিয়ে, হাতেম আলী ও আলমগীর দক্ষিণ দিক দিয়ে এবং আজাদ পটুয়াখালীর পশ্চিম পার দিয়ে আক্রমণ চালাবে। পাঁচ কমাণ্ডারের একটা বৈঠক আহবান করলাম বগাবন্দরে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বগাবন্দর বাউফল থানার অন্তর্গত এবং পঞ্চম আলীর দল বাউফল থানা দখল করে নিয়েছিল। তখন পর্যন্ত গলাচিপা, বাউফল, বামনা ও বেগাতী থানা মুক্তিবাহিনীর দখলে।

 খেপুপাড়া আক্রমণঃ ৬ই ডিসেম্বর আমরা খেপুপাড়া আক্রমণ করার পরিকল্পনা করলাম। জাহাজ এবং আরও একটা লঞ্চ নিয়ে রওয়ানা হলাম। খেপুপাড়ার ২ মাইল দূরে তিনটা দলে বিভক্ত হলাম। শাজাহান (এয়ার ফোর্স-এর) যাবে জাহাজে। লঞ্চটা ওখানেই থাকবে। শাজাহানের সাথে থাকবে এল-এম-জিসহ ১৫ জন রাইফেলধারী। সে খেপুপাড়ার থানার ঘাটে জাহাজ ভিড়াবে স্বাভাবিক ভাবে। অন্যরা পজিশন নিয়ে থাকবে। থানার শত্রুপক্ষ ভাববে তাদেরই গানবোট। জাহাজটা অনেকটা গানবোটের মতই দেখতে। বিশেষ করে রাত্রে। পরিষ্কার উর্দুতে শাজাহান থানার দারোগাকে ডাকবে এবং সকলকে জাহাজে উঠে আসার নির্দেশ দেবে। শাজানের দেহাকৃতি পাঞ্জাবীদের মতই ছিল। শাজাহান পাকিস্তান আর্মির ক্যাপ্টেনের অভিনয় করবে। জাহাজের সামনে ওরা এসে শাজাহের নির্দেশ মতো ফল-ইন করবে। সাথে সাথে জাহাজ থেকে এলমে-জি এবং রাইফেলের গুলিতে শেষ করা হবে সবগুলোকে। আমরা এর আগেই দুটো দল নিয়ে থানা ঘিরে ফেলব এবং থানার দিকে এলোপাতাড়ি গুলি করে থানায় ঢুকে পড়ব। পরিকল্পনাটা ছিল এমনি সুন্দর। শওকতকে একটা ছোট খালের পুল পার হয়ে থানার উত্তর দিক দিয়ে পজিশন নিতে পাঠালাম। আমি একটা দল নিয়ে থানার পূর্ব দিক দিক দিয়ে একটা ছোট খালের পুল পার হয়ে থানার ৫০ গজের মধ্যে প্রস্তুত থাকব। শওকতের সাথে ইউসুফ, দেলোয়ার সহ ২৫ জনের একটা দল এবং আমার সাথে বাবুদা, হাবীব, রবীনসহ ২৫ জনের একটা দল। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, সরদার জাহাঙ্গীর একটা দল নিয়ে গলাচিপা এসেছিল। তার দলের সদ্য ছিল ৯ জন। তারা আমার দলে যোগ দিয়ে দলকে শক্তিশালী করল। ক্যাপ্টেন মেহেদীর নির্দেশক্রমে গলাচিপা ও পটুয়াখালী থানার মুক্তিবাহিনীর অন্যান্য ছোট দলগুলিও আমার একক নেতৃত্ব মেনে নিয়ে কাজ করা শুরু করেছিল।

 হাবীব খেপুপাড়ার ছেলে। সে সকলের সামনে, তার পিছনে আমি, আমার পিছনে বাবুদা। খেপুপাড়ায় কোনদিন যাইনি। হাবীব ছিল একমাত্র পথ-ঘাট চেনা ছেলে। পুলের উপর উঠতে যাব, অমনি শত্রুর পক্ষের পেট্রোল পার্টির সামনে পড়ে গেলাম। ওরা আমাদের উপর গুলি করল। কিন্তু আমাদের কারও গায়ে গুলি লঅগাতে পারে নাই। তার পরই আরম্ভ হল থানা থেকে গুলি করা। আমরা আর পুল পার হতে পারলাম না। ওদিকে আমাদের জাহাজ থেকে পরিকল্পনা কার্যকরী হবার আগে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে ওরাও থানার দিখে গুলি ছুড়লো। আমরা সারারাত থানা ঘিরে রাখলাম। সকালে আমি চলে এলাম। শওকতের উপর সমস্ত ভার দিয়ে সমস্ত দল ওখান থেকে সরিয়ে আনলাম। চলে এলাম বগাবন্দর। আমার সাথে আল্লাম বাবুদা, মাস্টার সাহেব, লতিফ, বাবুল, ফোরকান, দেলোয়ার এদের কয়েকজনকে।

 বগাবন্দর থেকে পাক জলযানের উপর আক্রমণঃ বগা এসে পৌছালাম ৮তারিখ রাত আটটার সময়। পটুয়াখালী থেকে বগাতে টেলিফোন এলো যে পাক বাহিনী পালিয়ে যাচ্ছে। বগা তখন মুক্ত এলাকা। ওখানে পঞ্চম আলীর দলের ১৫/১৬ জনের ঘাঁটি ছিল। আমাকে পেয়ে ওরা খুশী হল। বগা পোস্ট অফিসে গিয়ে