পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
435

পটুয়াখালীর সাথে যোগাযোগ করলাম। রাত নয়টার সময় দুটো লঞ্চে পাক জান্তার দল ও দালালদের দল পালিয়ে আসল পটুয়াখালী থেকে। কিন্তু তাদের যেতে হবে বগাবন্দরের নদী দিয়ে। বাউফলে ফোনে জানালাম সবকিছু। ফোন পেয়ে বাউফল থেকে একটা দল রওনা হল বগার দিকে। দুরত্ব ৮ মাইল। পটুয়াখালী থেকে যথারীতি আমরা খবর পেতে থাকলাম। পটুয়াখালীর তখনকার ডি-সি আব্দুল আউয়ালের সাথে যোগাযোগ করলাম এবয় খবরের সত্যতা প্রমাণ করলাম।

 আমরা ২০ জনের মত লোক রাইফেল হাতে বগা নদীর কূলে পজিশন নিলাম। রাত দশটার সময় লঞ্চ দুটো আমাদের রেইঞ্জের মধ্যে এমে গেল। গুলি ছুড়লাম। ওরাও ছুড়ল ৩/৪ টা এল-এম-জির ব্রাশ। লঞ্চ দুটো রাখতে পারলাম না। ফুল স্পীড-এ চালিয়ে রেইঞ্জের বাইরে চলে গেল।

 ৯ তারিখ সকাল ৮ টার সময় ভারতীয় বিমান বোম্বিং করল পটুয়াখালীতে। আমরা পটুয়াখালী চলে গেলাম। খবর পেয়ে অন্যান্য দলের কিছু কিছু মুক্তিবাহিনী চলে এসেছিল। থানা, পুলিশ ক্যাম্প সব দখলে নিয়ে নিলাম এবং প্রত্যেক পজিশন পয়েণ্টে পড়া গার্ড মোতায়েন করলাম। ওদিকে শওকত পরের বারে খেপুপাড়া আক্রমণ করে এবং থানার সমস্ত অস্ত্রশস্ত্রসহ খেপুপাড়া থানা দখল করে নেয়। ৯ই ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা পটুয়াখালীর সমস্ত থানা সহ পটুয়াখালী কে মুক্ত ঘোষণা করলাম। তখন আমার কমাণ্ডে প্রায় ১৫০০ মুক্তিবাহিনী।

সাক্ষাৎকারঃ শামসুল আলম তালুকদার

মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী ক্যাপ্টেন জিয়ার নেতৃত্বে শরণখোলা থানা আক্রমণ করলে পুলিশবাহিনী সাথে সাথে অস্ত্র দিয়ে দেয়-৩২ টি রাইফেল এবং আরও অনেক গোলাগুলি পাওয়া গিয়েছিল। ওখান থেকে ক্যাপ্টেন জিয়া কিছু অস্ত্র আমাকে দেন এবং বেঙ্গল রেজিমেণ্টের হাবিলদার আজিজকে (ফুলমিয়া) দেন।

 আমি আমার কিছু লোক, খাবার এবং অস্ত্র নিয়ে সুন্দরবনের ভোলা নদীর পশ্চিম পাড়ে শরণখোলা এবং চানপায়ে রেঞ্জ অফিসের মধ্যবর্তী স্থান ধানসাগর নামক অফিসের বিতরে প্রথম ঘাঁটি গাড়ি। পরিকল্পনা নিই গ্রাম আক্রান্ত হলে সবাইকে এই ঘাঁটিতে নিয়ে এসে পরবর্তীতে পাক বাহিনীর উপর গেরিলা আক্রমণ চালাবো।

 শরণখোলা থানা এবং মোড়লগঞ্জ থানার অঞ্চল অধিকাংশ হিন্দুগ্রাম। মওলানা ইউসুফের নেতৃত্বে জামাতে ইসলাম, মুসলিম লীগ এবং অন্যান্য পাকিস্তান পন্থীরা ঐ এলাকায় লুটপাট শুরু করে। আমার দলের লোকজন দিয়ে প্রায় ১০টি গ্রুপ করে কিছু অস্ত্র দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করি। মাওলানা ইউসুফের দল শুধু লুট নয় নারীধর্ষণও শুরু করে। আমরা প্রতিরোধ দিলে অবস্থা কিছুটা আয়ত্তে আসে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে শরণখোলা থানাতে রাজাকার বাহিনী তৈরী হয় পাক রাজস্ব মন্ত্রী মনসুরের নেতৃত্বে। মে মাসের মাঝামাঝি নায়েক সুবেদার মধু তার নিজস্ব দল নিয়ে মোড়লগঞ্জ থানায় যায়। মধু থানাতে পৌঁছুলে আমি এবং মধু যৌথভাবে কাজ শুরু করি। ৪০ জন রাজাকার ইতিমধ্যে মোড়লগঞ্জ থানাতে আসে।

 ২রা জুন আমরা যৌথভাবে মোড়লঞ্জ থানা আক্রমণ করি। ওখানে ভাসানী ন্যাপের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর শহীদ হলেন। রাজাকার ৩ জন খতম হয়। ভোর হয়েগেলে আমরা পিছু হটি। তারপর রাজাকাররা বাগেরহাট পালিয়ে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্নজন অস্ত্র নিয়ে গিয়েছিল। তার ফলে মোড়লগঞ্জ থানার সোনাখালী, ফুলহাতা, হ্যামড়া, পাঁচগাঁও, ঢুলিগাতি, গজারিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে ডাকাতি শুরু হয় ব্যাপকভাবে। হিন্দুবাড়ি লুটপাট, নারীধর্ষণ করে তার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। ক্যাপ্টেন জিয়া জুন মাসের মাঝামাঝি আমাদের সাথে যোগ দেন। তিনি তখন দক্ষিণ অঞ্চলের সর্বাধিনায়ক হন। আমি,