পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
436

হাবিলদার মধু এবং ক্যাপ্টেন জিয়া মিলে ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ঐসব গ্রামে গিয়ে ৮ জন ডাকাত খতম করি এবং অস্ত্র উদ্ধার করি।

 জুন মাসের ২০/২২ তারিখ হবে। পাঁচখানা গানবোট ও ২টি জাহাজে করে প্রায় ৫০০ পাকসেনা এবং ৪০০ রাজাকার মোড়লগঞ্জে উপস্থিত হয়। মোড়লঞ্জে আমাদের যে ঘাঁটি ছিল সেখান থেকে যাতীয় অস্ত্র এবং সব বাহিনী নিয়ে আমি সুন্দরবনের পুরানো ঘাঁটিতে নিরাপদে চলে যাই। পাকসেনা এবং রাজাকাররা ওখানে গিয়ে আমাদের ক্যাম্প সহ বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং অসংখ্য লোককে হত্যা করে। পরে রাজাকারদের রেখে পাকসেনারা চলে যায়। এরপরে আমরা সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প করা শুরু করি। ক্যাপ্টেন জিয়া এখান থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ আরম্ভ করেন। শরণখোলা দক্ষিণ অঞ্চল সুন্দরবনের ববিতে সুবেদার আনোয়ার এবং হাবিলদার আজিজ (ফুলমিয়া) ২০০-এর উপরে মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের সাথে তিনি যোগাযোগ করেন এবং জুন মাসের শেষের দিকে রায়েন্দা থানা আক্রমণ করেন সুবেদার আজিজের নেতৃত্বে। ওখানে আনোয়ার সহ আরও ক'জন শহীদ হন। ঐ মাসেই ক্যাপ্টেন জিয়া ভারতে চলে যান অস্ত্রের জন্য।

 শরণখোলা, মোড়লঞ্জ থানাতে রাজাকাররা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে থাকে। হিন্দুসহ ন্যাপ এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বাড়িঘর ভোগদখল এবং নারীদের উপর অত্যাচার করতে থাকে। লোকজন ধরে হত্যা শুরু করে। এই অবস্থায় আমাদের বাহিনী নিয়ে গেরিলা কায়দায় মাঝে মাঝে আক্রমণ চালাতে থাকি এবং বিক্ষিপ্তভাবে রাজাকারদের খতম করতে থাকি। ইতিমধ্যে হাজার হাজার লোক ঘরবাড়ি মান-ইজ্জত হারিয়ে সুন্দরবনে আশ্রয় নিতে থাকে ভারত যাবার জন্য।

 ক্যাপ্টেন জিয়া ১৩ ই আগস্টে ভারত থেকে প্রচুর অস্ত্র নিয়ে আমাদের এখানে আসেন। সেই সাথে ৫০ জন ট্রেনিংপ্রাপ্ত গেরিলা এবং ন্যাভাল কমাণ্ডো নিয়ে আসেন। ১৪ ই আগস্ট সুন্দরবন এলাকাতে তিনি সকল মুক্তিযোদ্ধার কনফারেন্স ডাকেন। ওখানে তিনি বাংলাদেশে সরকারের নিয়োগপত্র দেখান। সেখানে ৪ টি জেলার গেরিলা কমাণ্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ ছিল। সভায় ১০০০-এর মত মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিল। তিনি এই সভাতে সম্পূর্ণ যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে কতকগুলি বিভাগ এবং উপবিভাগ খোলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শৃংখলায় নিয়ে আসেন। বিভাগগুলি ছিলঃ (১) অপারেশন বিভাগ (২) খাদ্যের বিভাগ (৩) অর্থ সংগ্রহ বিভাগ (৪) যোগাযোগ বিভাগ (৫) বেতন বিভাগ (৬) হাসপাতাল বা চিকিৎসা বিভাগ (৭) ভারতের সাথে যোগাযোগ বিভাগ (৮) শরণার্থী দেখাশোনা এবং পাঠানোর জন্য বিভাগ (৯) ট্রেনিং বিভাগ (১০) রিক্রুটিং বিভাগ। খুলনা জেলায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সামরিক সাব- কমিটিও গঠন করা হয়। নিম্নলিখিত লোক নিয়ে কমিটি গঠিত হয় (১) ক্যাপ্টেন জিয়া- কমাণ্ডিং অফিসার (২) সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড- শামসুল আলম তালুকদার (৩) আবুল কালাম মহিউদ্দিন- সিকিউরিটি অফিসার (৪) আবুল আসাদ - অপারেশন অফিসার (৫) শহীদুল আলম বাদল- অস্ত্রাগারের দায়িত্ব (৬) নূর মোহাম্মদ হাওলাদার- কনস্ট্রাকশন বিভাগ (৭) মোস্তফা হেলাল- খাদ্যের ভারপ্রাপ্ত। বাগেরহাট মহকুমার জন্যঃ (১) নায়েক সুবেদার মধু-কমাণ্ডিং অফিসার (২) সাতক্ষীরার আফজাল (৩) মোড়লগঞ্জ থানার জন্য আলী, (৪) শরণখোলা থানার জন্য হাবিলদার আজিজ (ফুলু)। এছাড়া বাগেরহাটের উত্তর অঞ্চলে এবং খুলনার উত্তর অঞ্চলে যোগাযোগের জন্য লোক নিযুক্ত করা হয়। বরিশালে ক্যাপ্টেন শাজাহান (ওমর) পটুয়াখালীতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর সাথে যোগাযোগের জন্য লোক নিযুক্ত করেন। ক্যাপ্টেন জিয়া হাবিলদার মধূ এবং আজিজকে অস্ত্র ভাগ করে দেন এবং বাকি অস্ত্র নিজের কাছে রাখেন।

 সুন্দরবনের ঘাঁটিকে খুলনা বিভাগের সামরিক হেডকোয়ার্টার ঘোষণা করা হয়। ঐ সভাতেই ১৩ ই আগস্টে মোড়লঞ্জ থানা আক্রমণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৫ ই আগস্ট সন্ধ্যায় ক্যাপ্টেন জিয়া নিজেই ১০০-এর মত মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মোড়লগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন, মোড়লঞ্জের পশ্চিমে টাউন হাইস্কুল নামক স্থানে রাত ৩ টায় এসে পৌঁছান। ১০০ লোককে পাঁচটি দলে বিভক্ত করা হয়। কুটিবাড়ি রাজাকার ঘাঁটি দখল করার