পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

444 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড এ সকল শিবিরে ছেলেদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে থাকি। এই সময় মুজিব বাহিনীর হাই কমান্ডের নির্দেশে ভারতের দেরাদুনে মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তারপর প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করি। ১৯৭১-এর আগষ্ট মাস থেকে আমরা চালনা ও মংলা বন্দরে বিদেশী শিপ, গানবোট ও খুলনা ১৫ই সেপ্টেম্বর পাইকগাছা থানার রাডুলী ইউনিয়নের বাঁকা গ্রামে পাকসেনা ও রাজাকাররা মিলিতভাবে কয়েকটি গানবোটসহ আমাদের শিবির আক্রমণ করে। তারা অতি সন্তপণে এই আক্রমণ চালায়। দুই ঘন্টা গুলিবিনিময়ের পর আমরা পিছু হটি। এই যুদ্ধে কামরুল(খোকন), মালেক, এনায়েত, আইনুদ্দীন, শঙ্কর শহীদ হয়। অপর পক্ষে পাকসেনা ও রাজাকারদের বহু সৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়। ১৭ই সেপ্টেম্বর আশাশুনি থানার গোয়ালডাঙ্গা নামক স্থানে রাজাকার ও প্যারামিলিশিয়া বাহিনীর সাথে এক সম্মুখসমর হয়। এই যুদ্ধে প্রায় ৪০/৫০ জন রাজাকার ও প্যারামিলিশিয়া নিহত হয় এবং আমরা ৭০/৭৫টি রাইফেল উদ্ধার করি। আমাদের পক্ষে এই যুদ্ধে মনোরঞ্জন শহীদ হয়। খুলনা জেলার আশাশুনি থানার চাপড়ায় রাজাকারদের একটা শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। প্রত্যেক সপ্তাহে ১/২ বার আমরা এই ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাতাম ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করতাম। ১৯৭১-এর অক্টোবরের মাঝামাঝিতে খুলনা জেলার তালা থানার মাগুরাতে একটা শিবির স্থাপন করি। ঐ মাসের শেষদিকে সূর্যাস্তের একটু আগে কয়েক গাড়ী মিলিটারী অতি সন্তৰ্পণে এসে আমাদের শিবির ঘেরাও করে। আমরা মিলিটারীর আক্রমণ প্রহিত করার চেষ্টা করলে তা ব্যাহত হয়। ফলে আমরা পিছু হটি। এই যুদ্ধে সুশীল, আকবর, বক্কার শহীদ হয়। পাকসেনারা চলে গেলে মাগুরায় এক কবরে ৩টি লাশ সমহিত করা হয়। খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার কপিলমুনিতে রাজাকার ও প্যারামিলিশিয়াদের একটা মজবুত ঘাঁটি ছিল। ইতিপূর্বে আমরা এই ঘাঁটি আক্রমণ করে ব্যর্থ হই। নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে ঐ ঘাঁটি আক্রমণ করি। ৭২ ঘন্টা দিবারাত্রি সমানে যুদ্ধ চলার পর উক্ত ঘাঁটির পতন হয়। এই যুদ্ধে মোট ১৫২ জন প্যারামিলিশিয়া, রাজাকার ও খানসেনা নিহত হয়। আমাদের পক্ষে গাজী, আনোয়ার (আনু) শহীদ হয় এবং খালেক, তোরাবসহ কয়েকজন আহত হয়। ডিসেম্বরের ১২ তারিখে আমরা খুলনা শহরের ১০ মাইলের ভিতরে পৌছাই এবং ২/১ জন করে শহরের ভিতরে খোঁজখবরের জন্য ঢুকিয়ে দেই। ১৪ই ডিসেম্বর তারিখে খুলনা বেতারের মিলিটারী ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালাই। ইতিমধ্যে যশোর ক্যান্টনমেন্টের পতন হয় এবং সেখানকার যাবতীয় মিলিটারী খুলনায় এসে আশ্রয় নেয়। ইতিমধ্যে আমরা বেশ কয়েকবার খুলনা ঢুকতে গিয়ে ব্যর্থ হই। ১৬ই ডিসেম্বর সারারাত যুদ্ধ করার পর ১৭ই ডিসেম্বর সকাল নয়টায় আমরা খুলনা শহরে প্রবেশ করতে সক্ষম হই এবং খুলনা শহীদ হাদিস পার্কে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলে মুক্তিবাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করি। স্বাক্ষরঃ স, ম, বাবর আলী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য Հ8-Ն-ԳՎ) সাক্ষাৎকারঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) নূরুল হুদা মেজর জলিলকে ৯ নং সেক্টরের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রাথমিক পর্যায়ে পাক ঘাঁটি শ্রীপুর,বসন্তপুর এবং কৈখালী দখলের জন্য তার বিপরীতে টাকী, হিঙ্গলগঞ্জ এবং শমসের নগরে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা