পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
446

 রাত দুটোর পরই নায়েব সুবেদার গফুর ২" মর্টার নিয়ে প্রথম পাক অবস্থানের উপর আঘাত হানতে শুরু করেন। এদিকে পাকসেনাদের প্রচণ্ড বাধা অতিক্রম করে আমি ও লেঃ বেগ কিছুতেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারছিলাম না। রাত ৪টার দিকে কালিগঞ্জ থেকে পাকসেনাদের আর একটি প্লাটুন নির্বিবাদে শ্যামনগর চলে আসে। উভয়পক্ষে প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলতে থাকে। দু'পক্ষেরই মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শেষ পর্যন্ত আমাদের ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে পাকসেনারা চরমভাবে মার খেয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সকাল ৯ টায় শ্যামনগর আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সংঘর্ষে ৪ জন পাকসেনা নিহত এবং ৪ জন আহত অবস্থায় আমাদের হাতে বন্দী হয়। এই সংঘর্ষের পর শ্যামনগর থানা আমাদের নিয়ন্ত্রণে এলেও সুবেদার ইলিয়াসসহ ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা এই যুদ্ধে শহীদ হন এবং ৬ জ কে পাকসেনারা ধরে নিয়ে যায়। ঐ দিন সকালে ২৫ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। আমরা শ্যামনগর থানায় স্বাধীন বায়লার পতাকা উত্তোলন করি। স্বাধীন বাংলা থেকে প্রকাশিত “জয়বাংলা' পত্রিকার ২১ আগস্ট ১৯৭১-এর সংখ্যায় এ সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছিল।

 ফ্রগম্যানের তৎপরতাঃ ৯ নং সেক্টরের ফ্রগম্যানরা নদীপথে তৎপরতা চালিয়ে বেশ সাফল্য অর্জন করতে থাকে। এইসব দক্ষ ফ্রগম্যানরা ভারতীয় তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

 ফ্রগম্যানদের ৩০ জনের একটি দলকে আসাদুল্লাহর নেতৃত্বে শমসেরনগর পাঠানো হয়। উক্ত দলটি মঙ্গলা ও চালনা বন্দরে পাকিস্তানী বাণিজ্যিক নৌকাহিনীর উপর হামলা চালানোর জন্যে প্রস্তুতি নিতে থাকে। অপর দল ক্যাপ্টেন জিয়ার নেতৃত্বে ত্রিকোণ দ্বীপে যেখানে পাকিস্তানীদের গোপন ঘাঁটি আছে বলে মনে করা হচ্ছিলো সেখানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিকূল আবহাওয়া এবং অন্যান্য বাস্তব অসুবিধার জন্যে “ত্রিকোণ' দ্বীপে হামলা চালানো সম্ভব না হলেও, প্রথম দল চালনা এবং মঙ্গলাতে পরিকল্পনা অনুসারে সাফল্যের সথে আক্রমণ চালায়। এরপর সিদ্ধান্ত হলো, ১৬ই সেপ্টেম্বর হামলা চালানো হবে। চালনা বন্দরে তখন ৮ টি জাহাজ এলোমেলোভাবে নোঙ্গর করা ছিলো। এটি জাহাজের জন্যে দু'জন করে ফ্রগম্যান নির্দিষ্ট করা হলো এবং চারটি করে মোট আটটি 'লিম্পেট মাইন' প্রতি দলে দেয়া হলো।

 সেপ্টেম্বরের ১৫/১৭ তারিখ ২টা ৩০ মিনিটে ১৬ জন ফ্রগম্যান পশুর নদীতে নেমে পড়ে। ১৪ জন ফ্রগম্যানকে রিজার্ভে রাখা হলো।রাত তখন ৪টা বেজে ৩০ মিনিট। দ্রুতগতিতে ১৬ জন ফ্রগম্যান ৮টি জাহাজে ‘লিম্পেট মাইন' লাগিয়ে চলে আসে। ভোর ৫টা বেজে ৩০ মিনিট চালনা বন্দর থেকে গগনবিদারী আওয়াজ শোনা যায় অত্যন্ত সফল ঐ অভিযানে ৮টি জাহাজের মধ্যে সেদিন ৭টি জাহাজই ধ্বংস হয়েছিলো।

 ১৬ই অক্টোবর নৌবাহিনীর আলমের নেতৃত্বে চালনা বন্দরে আর এক বড় রকমের অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে ফ্রগম্যানরা চারটি জাহাজ ধ্বংস করেছিলো। জাহাজ চারটির মধ্যে বিশেষ করে 'লাইটনিং' এবং ‘আল-মুরতজার ধ্বংসের কথা উল্লেখযোগ্য। এই অপারেশনে ফ্রগম্যান আনোয়ারের সাহসিকতা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়।

 নৌবাহিনীর রহমতুল্লাহর নেতৃত্বে ফ্রগম্যানের অপর দল নভেম্বর মাসেও অত্যন্ত সফল অভিযান চালায়। রহমতুল্লাহ নৌবাহিনীর একজন দক্ষণ অফিসার। তাঁর আত্মত্যাগ, সাহসিকতা, নিরলস নিষ্ঠা এ দেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

 অক্টোবর মাসে ৯ নং সেক্টরের বেশ কয়েকটি তরুণ অফিসার যোগদান করেন। লেঃ মোহাম্মদ আলী, লেঃ আহসান উল্লাহ এবং লেঃ শচীদ্রের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। অফিসার তিনজন আমার নেতৃত্বে কালিগঞ্জ, পারুলিয়া প্রভৃতি স্থানের অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

 কালিগঞ্জ অপারেশনঃ নভেম্বরের ২০ তারিখে কালিগঞ্জে পাকবাহিনীর সাথে একটি সংঘর্ষ হয়। কালিগঞ্জ ওয়াপদা কলোনীতে পাকসেনাদের একটি কোম্পানী অবস্থান করছিলো। এছাড়া ছিলো পশ্চিমা রেঞ্জার এবং বেশ