পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
449

 সেক্টরের দয়িত্ব নেবার পর পরই প্রাথমিক পর্যায়ে মানকারচর থেকে ডালু পর্যন্ত সরাসরি আমার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসি। অবশিষ্ট এলাকা ভারতীয় বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিংহের কমাণ্ডে থাকে। ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিংহের হেডকোয়ার্টার ছিল তুরাতে। ট্রেনিং ক্যাম্পের প্রধান ও ছিলেন তিনি। সেক্টরে এসে লক্ষ করলাম মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন পাক পয়েণ্টে বি-এস-এফ বাহিনীর নির্দেশে সরাসরি আক্রমণ পরিচালনা করছে। তৃতীয়তঃ বাহিনী বিশৃঙ্খল, বিপর্যস্ত। মুক্তিবাহিনীকে পুরোপুরি বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবং দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের জন্য বাহিনীকে পুনর্গঠিত করতে শুরু করলাম। সম্মুখসমর বাদ দিয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রণ চালাবার নির্দেশ দিলাম। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হত্যা না করে বন্দী করে নিয়ে আসা এবং মুক্তিবাহিনীর বি- এস- এফ ক্যাম্পে দমন নিষিদ্ধ ঘোষণা করলাম এবং যুদ্ধনীতির সাথে সাথে ছেলেদেরকে রাজনীতি- সচেতন ও করে তুলতে শুরু করলাম।

 সেপ্টেম্বর মাসে পর্যন্ত আমার সে রে প্রায় বিশ হাজারের মত মুক্তিযোদ্ধা কাজ করছিল। সর্বমোট বাহিনীর মধ্যে তিন হাজার নিয়মিত এবং ১৭ হাজারের মত গণবাহিনী ছিল।

 মুক্তক্ষেত্রে আমি নিয়মিত ও গণবাহিনীকে একত্রে অপারেশনে পাঠিয়েছি। অপারেশনের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি নিয়মিত ও গণবাহিনীকে একত্রে অপারেশনের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি নিয়মিত আবং গণবাহিনীকে পৃথক করে ফিল্ড অপারেশনে পাঠানো ঠিক নয়। যারা অল্প দিনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল তাদেরকে পৃথকভাবে ফিল্ডে পাঠালে নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে থাকলে অভিজ্ঞতা তারা লাভ করতো সে অভিজ্ঞতা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছিলো- আমি ঐ সব কারণে একটি মাত্র ফোর্স করলাম। আমি আরও সিদ্ধান্ত নিলাম নিয়মিত বাহিনী পুরোপুরি গড়ে না ওঠা পর্যন্ত গেরিলা পদ্ধতিতেই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার।

 সামরিক দিক থেকে ময়মনসিংহের চাইতে টাংগাইল অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ময়মনসিংহ রেখে টাংঙ্গাইল- জামালপুর হয়ে ঢাকা পৌঁছানো বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করলাম। রংপুর এবং বগুড়া ৭নং সেক্টরের অধিনে থাকলেও যোগাযোগের সুবিধার জন্য ঐ সেক্টরের অনেক অপরেশন আমার মাধ্যমেই হয়েছে। আগষ্ট মাসেই টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আমার মাধ্যমেই হয়েছে। আগস্ট মাসেই টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আমার সেক্টরের অধীনে আমার কমাণ্ডে থাকেন। ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকাতে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক মেজর অফিসারের দেশপ্রেম, সাহস ও কর্মনিষ্ঠা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণযোগ্য। সেপ্টেম্বর মাসেই ভারতীয় বাহিনীর ৯২ মাউণ্টের ব্রিগেড আমার সাহায্যে আসে। ব্রিগেডের কমাণ্ডার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার। এই ব্রিগেডে তিনটি ইসফ্যাণ্টি এবং ২টি আর্টিলারী রেজিমেণ্ট ছিল। এই বাহিনীতে কর্নেল শোড়ি একটি ব্যাটালিয়ন কমাণ্ড করতেন। এই ব্রিগেডটি আসায় আমার এবং আমার বাহিনীর সাহস, উদ্দীপনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ভারতীয় অফিসারবৃন্দের সাহস, কর্মতৎপরতা এবং অমায়িক ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করে।

 আমার আওতায় রৌমারী থানা বরাবরের জন্য মুক্ত ছিল। এখানে একটি মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্প খুলি এবং ট্রেনিং দেওয়ার শুরু করি। নভেম্বর মাস পর্যন্ত সকলের হাতে অস্ত্র দেওয়া না গেলেও দশ হাজারের মত মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত হয়েছিল। এই থানাতে প্রশাসন ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃবর্গের কাদা ছোড়াছুড়ির ফলে পূর্ণ প্রশাসন ব্যাবস্হা চালু করা সম্ভব হয়নি।

 মেজর জিয়াউর রহমান তাঁর ব্রিগেড নিয়ে চলে গেলে রৌমারী থানাকে মুক্ত রাখা বেশ মুশকিল হয়ে পড়ছিল। কারল পাক ঘাঁটি চিলমারী থেকে পাকিস্তানীরা যে কোন সময় এসে রৌমারীর উপর হামলা চালাতে পারে। আর তাই চিলমারী শত্রুমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহন করলাম।

 চিলমারী যুদ্ধঃ সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে প্রায় দুই ব্যাটালিয়ন মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় মাউণ্টেন ব্রিগেডের একটি সেকশন সঙ্গে নিয়ে অতর্কিত চিলমারী আক্রমণ করলাম। এখানে পাকিস্তানীদের দুটি কোম্পানী