পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
457

মুক্তিযোদ্ধদের বহুদিন মনে থাকবে। গেরিলা যুদ্ধের ছাত্রদের জন্যেও এগুলো মূল্যবান শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে।

 কামারপুরে শত্রুঘাঁটি থেকে ৫০০ গজ পশ্চিমে ধানুয়া কামালপুর গ্রাম, দক্ষিণ- পশ্চিম ও দক্ষিণে ঘাসীর গ্রাম ও উঠানের পাড়া। ধানুয়া কামারপুর, ঘাসীরগ্রাম, আর উঠানের পাড়া এই গ্রামের সারি এবং কামালপুরের মাঝে বিস্তীর্ন জলোমাঠ। শত্রুকে এই জলোমাঠে বের করে আনতে হবে। এই জলোমাঠই হবে তাদের মরণফাঁদ। এই উদ্দেশ্য সম্মুখে রেখে আমি ধানুয়া কামালপুর এবং ঘাষীরগ্রামে একটি নকল রক্ষাবৃহৎ রচনা করি। মুক্তিযোদ্ধ মাহফুজকে এই রক্ষাবূহ্য গড়ে তোলার ভার দেয়া হয়। (বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ পরবর্তীকারে একটি অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে শহীদ হন)। মাহফুজ রাতের অন্ধকারে গ্রামবাসীদের সহায়তায় বাংকার ও ট্রেঞ্চ তৈরী করে ধানুয়াকামালপুর ও ঘাসীরগ্রামে আশ্রয় নেয়।

 কামালপুর থেকে সোজা দক্ষিণে চলে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বকশিগঞ্জ-জামালপুরুটাংগাইল সড়ক। ঢাকা দখলের জন্য সর্বাত্মক আক্রমণে এই সড়কটির গুরুত্ব অপরিসীম। পাকিস্তানীরা এই সড়কের গুরুত্ব উপলদ্ধি করতো এবং সেজন্য তারা সড়কটির পাশে বিভিন্ন স্থানে মজবুত ঘাঁটি স্থাপন করেছিলো। এই সড়ক ধরেই ১৬ই ডিসেম্বর ১১ নং সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধার সর্বপ্রথম ঢাকা প্রবেশ করে।

 কামালপুরের শত্রুঘাঁটিকে তার যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। নকল রক্ষাব্যূহ থেকে কামালপুর ও বকশিগঞ্জের মাঝের সড়কাটিতে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক এণ্টি- ট্যাংক মাইন স্থাপন করে। এই মাইন বিস্ফোরণে পাকিস্তানীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আগস্ট মাসের শেষের দিকেই পাকিস্তানীদের নয়টি সরবরাহ ও সৈন্য বোঝাই ট্রাক এতে ধ্বংস হয়। ৬ই সেপ্টেম্বর বিকাল বেলা ধানুয়া কামালপুর রক্ষাব্যূহ গিয়ে মুক্তিবাহিনীরকেটি দলকে উঠানেরপাড়ার কাছে কামালপুর বকশিগঞ্জ সড়কের উপর এ্যামবুশ নেবার নির্দেশ দিই। সড়কের খুব কাছে গিয়ে কেমন করে অবস্থান নিতে হবে বার বার তার মহড়া দেয়া হয়। মাঝরাতে এ দলট তাদের নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে এ্যামবুশ পাতে। তাদের উপর নির্দেশ ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত এ্যামবুশ হলে শত্রু প্রবেশ না করে সে সময় পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবে। রক্ষাব্যূহ থেকে মহেন্দ্রগঞ্জ ক্যাম্পে ফিরে এসে আমি আর একটি কোম্পানীকে অস্ত্র নিয়ে রৈী থাকার নির্দেশ দিই। বামুনের পাড়া থেকে বনজংগলে পূর্ণ পথ দিয়ে কামালপুর ঘটিতে পৌছান যায়। ভোর সাড়ে চারটার সময় এই পথ দিয়ে এগিয়ে কামালপুর ঘাঁটি আক্রমণ করতে হবে। আমরা জানতাম কামালপুর ঘাঁটি আক্রান্ত হলে ভোর হওয়ার সংগে সংগে পাকিস্তানী একটি সাহায্যকারী দল বকশিগঞ্জ থেকে কামালপুরের দিকে রওনা হবে। উঠনের পাড়ার কাছে মুক্তিবাহিনীর দলটি তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কামালপুর ঘাঁটিতে পৌছান যায়। ভোর সাড়ে চারটার সময় এই পথ দিয়ে এগিয়ে কামালপুর ঘাঁটি আক্রমণ করতে হবে। আমরা জানতাম কামালপুরের দিকে রওনা হবে। উঠানের পাড়ার কাছে মুক্তিবাহিনীর দলটি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। রাতের অন্ধকারে আমাদের চারটি তিন ইঞ্চি মর্টার বান রোডের উত্তর পাশে স্থাপন করি। ভোর চারটা। বাম রোডের উপর বসে আছি। আক্রমণকারী দলটি কামালপুরের দিকে এগিয়ে গেছে। সারারাত আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। আসন্ন সংঘর্ষের উত্তেজনায় আমরা সমস্ত অবসাদ ভুলে গেছি। ভোর হয়ে আসছে। আক্রমণকারী দলটি কামালপুর ঘাঁটিতে পৌঁছে গেছে। হঠাৎ তাদের তীব্রাক্রিমণ ভোরের নিস্তব্ধতা ভেংগে দিল। আমাদের মর্টারগুলো কামালপুর পশ্চিম অংশে গোলা নিক্ষেপ শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর সকালের আলোতে দেখা গের বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা কামালপুর ঘাঁটি অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। ঘাঁটির পূর্ব অংশ তাদের দখলে। ঘাঁটির পশ্চিম অংশের বাংকার থেকে ক্রমাগত মেশিনগানের গুলি আসতে থাকে এবং সংগে সংগে মর্টারের গোলা। অল্পক্ষণের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারায় ও ১৭ জন আহত হয়। সকাল সাতটায় এ্যামবুশ স্থলে পাকিস্তানী সাহায্যকারী দলটির প্রথম ট্রাকটি এ্যামবুশকারী দলের স্থাপিত তাইন বিস্ফোরণে সম্পুর্ণরূপে ধ্বংস হয়। এতে বেশ কিছুসংখ্যক পাকিস্তানী সৈন্য নিহত ও আহত হয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত ট্রাকটির পেছনেই ছিলকেটি জীপ ও অপর একটি ট্রাক। এই গাড়ী দুটো থেকে শত্রুসেন্যরা ত্বরিত নেমে রাস্তার পাশে অবস্থান নেয় ও এ্যামবুশকারী দলটির সাথে গুলি বিনিময় শুরু হয়। এতে আরো পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। বেলুচ রেজিমেণ্টের মেজর আইয়ুব জীপ থেকে নেমে আসার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের