পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

460 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ২০। ১১ নং সেক্টরে সংঘটিত যুদ্ধ সম্পর্কে | বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র Տի, ԳՖ অন্যান্যের বিবরণ Գ-Ն)- ՖՏԳ Տ) ১১নং সেক্টরের যুদ্ধ বিবরণঃ ১১ নং সেক্টর ছিল বাংলাদেশের বৃহত্তম সেক্টর ময়মনসিংহ জেলা, টাঙ্গাইল জেলা এবং রংপুর জেলার গাইবান্ধা মহকুমা নিয়ে গঠিত হয় এই সেক্টর। ভারতীয় সীমান্ত এলাকার ভারতীয় সিকিউরিটি পোষ্ট মাইনকারচর থেকে মহেশখোলা পর্যন্ত এটি বিস্তৃত ছিল। ময়মনসিংহ জেলার প্রায় সম্পূর্ণএলাকা ২৪ শে এপ্রিল পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। যদি তৎকালীন সামরিক নেতৃবৃন্দ সুষ্ঠুভাবে উপলদ্ধি করতে পারতেন তাহলে এই এলাকা মুক্তিযুদ্ধে আরও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারতো। কিন্তু এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি মুক্তিসেনারা তাড়াতাড়ি এলাকা ছেড়ে চলে যায় এবং পাকসেনারা স্থান দখল করে। নেতৃত্বহীন মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের পথে পা বাড়ায় এবং বেশীর ভাগ লোক ভারতের ডালু এবং মহেন্দ্রগঞ্জে সমবেত হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের অভ্যন্তরে অবস্থান করে উল্লেখযোগ্যভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ পড়ে তোলে। এদের মধ্যে টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী, ময়মনসিংহের ভালুকার আফসারউদ্দীন এবং সিরাজগঞ্জের লতিফ মির্জার নাম উল্লেখযোগ্য। এই সেক্টরে সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ কামালপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল-ঢাকা রোড। ঢাকা সড়ক ঢাকা আক্রমণের জণ্যে অত্যন্ত জরুরী পথ। এই সেক্টরের সামরিক গুরুত্ব প্রাথমিক অবস্থায় ভারতীয় বা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক নেতৃবৃন্দ কেউই উপলব্ধি করেননি। যার ফলে এই সেক্টর সর্বদা ৭১ সনের জুন মাস পর্যন্ত অবহেলিত ছিল। আগষ্ট মাসের পূর্ব পর্যন্ত এই সেক্টর একজন ভারতীয় অফিসার ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিংহের পরিচালনাধীন ছিল এবং কোন বাঙ্গালী অফিসারকে সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়নি। ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিংহ সেক্টরকে নিম্নলিখিত সাবসেক্টরে বিভক্ত করেন (ক) মাইনকারচর (খ) মহেন্দ্রগঞ্জ (গ) পুরাখাশিয়া (ঘ) ঢালু (ঙ) বাগমারা (চ) শিববাড়ি ও (ছ) মহেশখোলা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অধিনায়করাই সাবসেক্টর কমান্ডার ছিলেন। এই সমগ্র সাবসেক্টরের অধীনে দেশের অভ্যন্তরে কোন উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয়নি। যুদ্ধ সাধারনতঃ সীমান্ত এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, তাদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের অভ্যন্তরে সাবসেক্টর কমান্ডারদের উস্কানিতে ডাকাতি, রাহাজানি ও লুটতরাজ করছে বলে একটি সাংঘাতিক বদনাম রটে যায়। গেরিলা যুদ্ধে স্থানীয় জনসাধারণের সমর্থনে প্রয়োজনীয়তা ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিং অনুধাবন করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য প্রাতরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। অন্যপক্ষে পাকিস্থান দখলদার বাহিনী নিজেদের ক্ষমতা সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত করে। সমস্ত প্রবেশ পথ বন্ধ করার জন্য সীমান্তের সর্বত্র্য তারা সুদৃঢ় ঘাঁটি নির্মাণ করে। তারা এই সুযোগে রাজাকার ও আলবদর নামে প্যারামিলিটারী বাহিনী গঠন করতে সক্ষম হয়। এই অসুবিধা থাকা সত্বেও রংপুর জেলা সম্পূর্ণ রৌমারী থানা এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকা সবসময়ে মুক্তিবাহিনীর অধীন ছিল। এই এলাকা ছিল বাংলাদশের সবচেয়ে বৃহত্তম মুক্ত এলাকা। এই সেক্টরের অধীনে ভারতীয় বাহিনী মুক্তিবাহিনীর জন্যে একটি ট্রেনিং স্কুল খোলে। ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিং এই সেক্টর ছাড়া ও ট্রেনিং এর দেখাশোনা করতেন। সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন জায়গায় যুব শিবিরও স্থাপন করা হয়। এই শিবিরগুলি ট্রেনিং স্কুলের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সরবরাহ করতো। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে মেজর (বর্তমানে কর্নেল) জিয়াউর রহমান ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তিনটি ব্যাটালিয়ান নিয়ে ১১ নং সেক্টরে আসেন এবং তাঁকে প্রথম নিয়মিত ব্রিগেড

  • ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন হিসাবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীকালে লেঃ কর্নেল পদে উন্নীত হন।