পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

466 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড মুজাহিদ নিয়ে গঠিত এক ঘাঁটি ছিল। সেই দুর্ভেদ্য ঘাঁটিকে প্রথমে আমরা টার্গেট করলাম। কিন্তু কয়েকবারই আমরা ব্যর্থ হই। এর পরপরই মরণ পণ করে তিনটি প্লাটুনে বিভক্ত হয়ে তিনদিক থেকে আক্রমণ করি। প্রথম প্লাটুনের নেতৃত্ব দেন বর্তমান মেজর মতিয়র রহমান, ২নং প্লাটুনের নেতৃত দিই আমি নিজে এবং ৩নং প্লাটুনের নেতৃত্ব দেন নায়েক আব্দুর রহমান (বাংলাদেশ রাইফেল)। আমার ২নং প্লাটুন সামনের দিকে ছিল। তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যায়। অয়ারলেস সেটের সাহায্যে আমরা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ রক্ষা করে চলি। এই যুদ্ধে আমাকে নেতৃত্ব দেওয়া ছাড়াও মেডিক্যাল অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। পাক বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন শহীদ হন। প্রচন্ড আক্রমণের ভিতর দিয়ে শহীদ বীরের মৃতদেহ আমি নিজে বহন করে নিয়ে আসি। বাকী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উৎসাহের সহিত সামনের দিকে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিই এবং আমি নিজে তাদের সংগে যুদ্ধ করি, যার ফলে তারা সাহস হারায়নি। মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের মনোবল অটুট থাকে। তিনদিকের প্রচন্ড আক্রমণে খানসেনারা দিশেহারা হয়ে ১৫ জনের মত খতম হয়। বাকিরা সন্ধ্যার অন্ধকারে পালিয়ে মোহনগঞ্জ থানার দিকে চলে যায়। উক্ত স্থানে মুক্ত করে একটি প্লাটুনকে এখানে ডিফেন্সের জন্য রেখে বাকি দুই প্লাটুন ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাসহ পরের দিন মোহনগঞ্জ আক্রমণ করি। উক্ত ধরমপাশা থানা মুক্ত হবার পর আমার সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর মতিয়র রহমান আমার বীরত্বের পরিচয়সূচক বীর প্রতীক উপাধিতে আমাকে ভূষিত করেন- যা বাংলাদেশ সরকার শেষে মঞ্জর করেছেন। মোহনগঞ্জ আক্রমণ করে প্রায় ২৫জন খানসেনাকে হত্যা করি এবং উক্ত থানা মুক্ত করি। এরপর আমাদের কাজ পরিবর্তনের জন্য নির্দেশ পাই। ভৈরব বাজার থেকে কেন্দুয়া পর্যন্ত যে রেল যোগাযোগ আছে তা বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ পাই। এরপর ক্রমান্বয়ে কেন্দুয়া, আঠারোবাড়ি, নীলগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, করিমগঞ্জ, মদন প্রভৃতি স্থানে যুদ্ধ করি ও অসংখ্য খানপশুদের হত্যা করে উল্লেখিত স্থানগুলি মুক্ত করি। তখন ব্যাটালিয়ন অ্যাডজুট্যান্ট, এ্যাডমিনিসট্রেটিভ অফিসার ও অন্যান্য গুরুদায়িত্ব পালন করি। দেশ মুক্ত হবার পর সেক্টরের যাবতীয় কাগজপত্র সেক্টর হেডকোয়াটার ময়মনসিংহে জমা দিয়ে আমার পুরানো চাকরিতে যোগদান করি। স্বাক্ষরঃ মোসলেহউদ্দীন আহমদ সাক্ষাৎকারঃ মিজানুর রহমান খান 〉〉-〉S-〉ba○ মহেন্দ্রগঞ্জ ছিল ১১ নং সেক্টরের হেডকোয়াটার। ২১শে জুলাই আমি মহেন্দ্রগঞ্জ সেক্টরে যোগ দিই। আগষ্ট মাসের শেষের দিকে মেজর তাহের মহেন্দ্রগঞ্জ ১১ নং সেক্টরে যোগ দেন। মেজর তাহের আসার পর তিনি আমাদের ৪৮ জন নিয়ে একটি স্পেশাল পার্টি তৈরী করেন। আমরা তুরাতে ট্রেনিং নেওয়া সত্ত্বেও মেজর তাহের আমাদের বিশেষ ভাবে ট্রেনিং দেন। আমাদের কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন হেলাল (সৈয়দ সদরুজ্জামান)। আমাদের পার্টি হেলাল পার্টি হিসাবে পরিচিত ছিল। আমরা ৪৮জন কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। মেজর তাহের আমাদেরকে সব সময় সম্মুখযুদ্ধের জন্য রিজার্ভে রাখতেন। প্রতিটি প্রথাগত যুদ্ধে বা সম্মুখযুদ্ধে আমরা অংশ নিয়েছি। ক্যাপ্টেন মান্নান ছিলেন সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। লেঃ মিজান, লেঃ আলম সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে সেক্টরে যোগ দেন। ১৫/১৬ই আগষ্ট আমাদের ১৩৫ জনকে পাঠানো হয় কামালপুর আক্রমণের জন্য। কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন সেনাবাহিনীর সুবেদার মনসুর। অন্যদিকে লেঃ মাহফুজ তার কোম্পানী নিয়ে ছিলেন। লেঃ মাহফুজ মহেন্দ্রগঞ্জ সাবসেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেছেন। পরবর্তীতে লেঃ মাহফুজ ডালু সাবসেক্টরে নভেম্বর মাসে এক অপারেশনে নিহত হন। ভোর রাতে আমরা কামালপুর আক্রমণ করি। দিনের আলোতে আমরা পরস্পরকে দেখতে পাচ্ছিলাম। সংঘর্ষ আধঘন্টা স্থায়ী হয়। এই সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হয়। পাকিস্তানীদের ৮/৯ জন নিহত হয় বলে জানা যায়।