পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
472

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খন্ড

তোমার সেদিকে যাওয়া প্রয়োজন হবে না। তুমি বরং এখানে লোকাল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং অন্যান্য সবকিছু তদারক কর। যা হোক আমি আমি লোকাল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং সবকিছু যা যা অর্গানাইজ করার দরকার ছিল সবকিছু অর্গানাইজ করার চেষ্টা করলাম। আমি আমাদের ছেলেদের জামালপুর হাই স্কুলে ক্যাম্প করে তাদেরকে সেখানে থাকতে দিলাম। ইতিমধ্যে আমি সংবাদ পেলাম যে, জামালপুর থেকে মাইল দেড়েক দুরে পাক রাজাকার থেকে উদ্ধারকৃত ৩০০টির মত হাতিয়ার জড়ো করেছে এবং কোথায়ও সেগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। আমি সেখানে গেলাম এবং তাদের সাথে কথা বললাম। তারা জানালো এই সমস্ত হাতিয়ার পাবনা যাবে। পরে আমি সেগুলো সীজ করলাম। হাতিয়ার গুলো নিয়ে তারপরের দিন ময়মনসিংহে আসি। এসে দেখি ময়মনসিংহ ও মুক্ত। এটা আনুমানিক ১০ই ডিসেম্বর। আমার হেড কোয়ার্টার টাউন হলে খুলি এবং আমার ফৌজ অর্গানাইজ করি। তারপর সিভিল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালানোর জন্য আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিই।

১১নং সেক্টরের আরও যুদ্ধ বিবরণ[১]

 মেজর তাহের আগস্ট মাসে ১১ নং সেক্টরে আসেন। কিন্তু এর আগে বিখ্যাত পাকবাহিনীর কামালপুর বাংকারে সদাসর্বদা ক্ষুদ্র ক্ষুদ আঘাত হানতে থাকে অল্প সামরিক শিক্ষাপ্রাপ্ত অথচ গভীর মনোবলের ভিত্তিতে গঠিত বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। এখানে মাঝে মাঝে বিভিন্ন সময়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের জুনিয়র অফিসাররাও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। এসময়ে তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা কামালপুর শত্রু শিবিরে ছোটখাট গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে কিছু কিছু করে পাক-সৈন্য হত্যা করে দস্যুদের সদা ব্যতিব্যস্ত ও সন্ত্রাসের মধ্যে রাখতো। এই সময় বাংলার স্বাধীনতার যুদ্ধক্ষেত্রে আর একটি অমর নাম শহীদ সালাউদ্দিন কামালপুর রণাঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া অন্যান্যের মধ্যে যাদের নাম উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের ক্যাপ্টেন হাফিজ ও লেঃ মান্নান এবং মুক্তিফৌজ কমাণ্ডারদের মধ্যে যারা নির্দিষ্ট ভুমিকা রাখেন, তারা হচেছন কমাণ্ডার মুক্তা, কমাণ্ডার হেলাল, কমাণ্ডার পান্না, কমাণ্ডার ফয়েজুর। এর মধ্যে হেলাল কোম্পানীর একটি দিক রয়েছে। সেটা হল পাক-বাহিনীর কামালপুর বাংকারে এই শক্তিশালী পাক-ঘাটিটিকে ১১ নং সেক্টর থেকে মোট ১৮ বার ছোট-বড় আক্রমণ করা হয়েছে। তার মধ্যে হেলাল কোম্পানী মোট ১৪টি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে এবং ৪ঠা ডিসেম্বর কামালপুর মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কোম্পানী এখানে যুদ্ধরত অবস্থায় ছিল।

 একদিন, সম্ভবতঃ ২৪শে জুলাই তারিখে, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের দু’জন জুনিয়র অফিসার ক্যাপ্টেন শহীদ সালাউদ্দিন ও লেঃ মান্নান কামালপুরে শত্রুশিবিরে বাংকারে সশরীরে উপস্থিত হয়ে দু’জন খানসেনাকে হত্যা করে একটা চাইনিজ ও একটা জি-থ্রি রাইফেল নিয়ে আসে।

 কামালপুরে রণাঙ্গনের একটি স্মরণীয় দিন ৩১শে জুলাই তারিখ। শেষ রাত্রের দিকে কামালপুর বাংকারে এক বিরাট ধরনের দুর্ধর্ষ আক্রমণ করা হলো। এই দুর্ধর্ষ আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সম্মুখভাগে ক্যাপ্টেন শহীদ সালাউদ্দিন, লেঃ মান্নান ও ক্যাপ্টেন হাফিজ। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ তুমুলভাবে লড়ে যাচ্ছেন এবং পিছন থেকে ব্যাক্তিগতভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালনা করছেন মেজন মঈনুদ্দীন। কর্নেল জিয়াও তাঁর সদর দপ্তর নিয়ে এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মোট কথা এই দুর্ধর্ষ আক্রমণটি সেদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি না হলে হয়তো সেই দিনই কামালপুর মুক্তিবাহিনীর দখলে আসতো- ভুল বুঝাবুঝি উৎরে যেয়ে তবুও হয়তো বা কামালপুর দখল করা সম্ভব হতো যদি সেদিন বাংলার বীর সন্তান ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন শহীদ না হতেন।

 যুদ্ধক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন হাফেজ একটি কোম্পানীকে কমাণ্ড করছিলেন। আর একটা একটি কোম্পানীকে কমাণ্ড করছেন স্বয়ং শহীদ সালাউদ্দিন। নির্দিষ্ট সময়ে শহীদ সালাউদ্দিন নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছলেন কিন্তু হাফিজ


  1. জুলাই ১৯৭২-এর সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় প্রকাশিত “লেঃ কর্ণেল আবু তাহের— স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সৈনিক” শীর্ষক খালেদুর রহমানরচিত প্রতিবেদন থেকে সংকলিত।