পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
475

কর্নেল তাহেরকে ভারতের পুনার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তারগণ কর্নেল তাহেরকে দেখে বলেছেন- তিনি যদি জ্ঞান হারাতেন তবে তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সেদিনের সেই কামালপুরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধে পাকবাহিনী ১৩৫ জন সৈন্য হারায়। ধ্বংস হয়েছিল ৬টি ট্রাক, ১টি জীপ এবং বহুসংখ্যক হাতিয়ার।

 তারপর লেঃ কর্নেল তাহেরের অনুপস্থিতে এই সেক্টরটি সংযুক্তভাবে নেতৃত্ব দেন মেজর আজিজ, লেং মান্নান ও এয়ারফোর্সের অফিসার জনাব আবু তাহের সাহেবের বড় ভাই জনাব আবু ইউসুফ। এই সময়ে কর্নেল আহত হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিনিয়তই কামালপুর আক্রমণ করতে থাকে।

 ১৬ই নভেম্বর তারিখের এক আক্রমণে খানসেনাদের মেজর রিয়াজ আহত হয় ও ১২ জন খান সেনা নিহত হয়।

 ২০শে নভেম্বর তারিখের আর এক আক্রমণে এই দিনের আগের রাত্রে পাকবাহিনীর রিইনফোর্সমেণ্ট করার সময় ৮০ জন পাকসেনা মারা পড়ে। এই সময় প্রতিটি আক্রমণের সময়ে কামালপুরকে ঘেরাও অবস্থায় রেখে আক্রমণ করা হয়।

 ১লা ডিসেম্বর আর এক আক্রমণের সময় সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় পাকবাহিনীকে। এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার যে, কোম্পানী কমাণ্ডার হেলালসহ মেজর তাহেরের সহোদর বড় ভাই জনাব আবু ইউসুফ, ছোট ভাই কমাণ্ডার সাইদ (এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট), বেলাল বাহার (এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট) ও আনোয়ার হোসেন (এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট)- এই পাঁচ ভাই প্রত্যেকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।

 ৪ঠা ডিসেম্বর কয়েকজন অফিসারসহ বেলুচ, পাঠান এবং পাঞ্জাবী সৈন্য-মোট ১৬২ জন পাক সৈন্য মুক্তিফৌজ ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

 পাক বাহিনীর শিবিরে গিয়ে অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সঞ্জু বাকযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তারই জয় হয়। পাকবাহিনীর অফিসারকে দিয়ে সারেণ্ডারপত্র সই করিয়ে সঞ্জুই প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উড়ায়। তারপর ৬ তারিখে বক্সীগঞ্জ ও মোরাপুর মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। ৭ তারিখে দখল হয় দেওয়ানগঞ্জ ও বাহাদুরাবাদ ঘাট। এই বাহাদুরাবাদ ঘাট দখল কারী কমাণ্ডার ফয়েজুর রহমান জামালপুরের দিকে অগ্রসর হন। তারপর তুমুল সংঘর্ষে ৪০ জনের মতে পাকসেনা নিহত এবং ৬০০ জনের উপর শত্রুসেনা বন্দী হলে ১১ই ডিসেম্বর সকাল বেলা তিনিই জামালপুরের বুকে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উঠান। তারপর মেজর আজিজ লেঃ কর্নেল তাহেরের পরিকল্পনা অনুযায়ী টাঙ্গাইলের পথে রওনা হন।