পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

495 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড কোম্পানীও আমার বামদিকে গিয়ে অবস্থান নেয়। আমার কোম্পানীকে ফর্ম-আপ করে শত্রর উপরে চার্জ করি। ফলে আমার একজন শহীদ এবং কয়েকজন আহত হন। শত্রু পিছু হটতে বাধ্য হয়। তাদের পক্ষেও যথেষ্ট হতাহত হয়। সেদিন সেখানেই অবস্থান করার পর সন্ধ্যার সময় আমরা এম, সি, কলেজ অভিমুখে যাত্রা করি। পরদিন সকাল চারটার সময এম, সি, কলেজের টিলার উপরে এসে আমরা শত্রর গতিবিধি লক্ষ্য করছিলাম। শত্রুকিন্তু আমাদের উপস্থিতি সম্বদ্ধে একটুও সজাগ ছিল না। সুতরাং ডিফেন্সের ভিতর দিয়ে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করছিল। আমরা এক ফাঁক দিয়ে পজিশন নেয়ার বন্দোবস্ত করছিলাম কিন্তু যথেষ্ট পাঞ্জাবী সেনা একসঙ্গে দেখাতে নিজেকে আর দাবিয়ে রাখতে পারছিলাম না। তাই পজিশন না নিয়েই ছয়টা মেশিনগান দ্বারা তিন দিক থেকে ফায়ার শুরু করলাম। শত্রর মাথায় যেন বজ্র ভেঙ্গে পড়ল। তারা পাগলের মত এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিল। এর ভিতরেই বেশকিছু পাঞ্জাবী সৈন্য নিহত হয়। কিছু সৈন্য হাত তুলে স্যালেন্ডার করে। আর্টিলারী রেজিমেন্ট তাদের অস্ত্র নিয়ে তাড়াহুড়া করে স্মল আর্মস রেঞ্জের বাইরে চলে যায়। শত্রপক্ষে বেশকিছু হতাহতের পর তারা আমাদের অবস্থান থেকে আরও একটু উচু টিলা দখল করে। তাদের সমস্ত শক্তি তারা টিলার উপর নিয়োগ করে। এরপর আমাদের ‘ডি’ এবং ‘বি’ কোম্পানীর উপরে কয়েকটা মেশিনগান দিয়ে ফায়ার শুরু করে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে আটিলারী ফায়ারও চলতে থাকে। পরে ‘বি’ এবং ‘ডি’ কোম্পানীর যথেষ্ট ক্ষতি সাধিত হয়। তাদের একজন প্লাটুন কমান্ডার সুবেদার ফয়েজসহ বেশকিছু লোক নিহত হয়। যারা আহত হয়েছিল তাদেরকে আমরা পিছনে নিয়ে যাই। এভাবে আরও কতক্ষণ যুদ্ধ চলার পর ‘বি’ এবং ‘ডি’ কোম্পানী একটু আড়ালে গিয়ে অবস্থান করে। তারপর আমার উপর ‘ডি’ এবং ‘বি’ কোম্পানীর দায়িত্ব অর্পিত হয়। আমি শত্রকে আর এক পা-ও সম্মুখে এগুতে দিইনি। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর আমার দুইজন লোক আহত হয়। ১৫ই ডিসেম্বর থেকে ১৭ই ডিসেম্বর এগারটা পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর যুদ্ধ চলতে থাকে এবং আর্টিলার সমর্থনে আমরা কিছুদূর এগুতে সমর্থ হই। তারপরেই আসে আত্মসমর্পণের পালা। পাকবাহিনী তাদের সমস্ত হাতিয়ার আমাদের নিকট সমর্পণ করে। পরিশেষে বলতে হয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এমনি যুদ্ধ পরিচালনা করা বাঙ্গালী ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। যেখানে ছিল না বল, জন, অস্ত্রশস্ত্র সেখানে গড়ে ওঠে এক দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনী। এদের নেতৃত্বে পুরো জাতিই মুক্তিবাহিনীর রুপ ধারণ করে। বাঙ্গালী যে যেখানেই ছিল কিছু সংখ্যক লোক ছাড়া বাকী সবাই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সবশেষে আমি স্মরণ করি তাদেরকে, যারা মাতৃভূমির জন্যে নিজের শেষ রক্তটুকু বিলিয়ে দিয়েছেন। আমি স্মরণ করি তাদেরকে, যারা এই মুক্তিযুদ্ধের চরম দুঃসময়ে আমার সাথে ছিলেন এবং আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছেন। স্বাক্ষরঃ ক্যাপ্টেন এম, এ, কাইয়ুম চৌধুরী ○○-〉》-〉b"○ সাক্ষাৎকারঃ মেজর বজলুল গনি পাটোয়ারী* ....>あ°○ পাকিস্তানের ঝিলাম থেকে ১৯৭১-এর ২৫-২৬শে জুলাই শিয়ালকোট দিয়ে ভারতের পূর্ব পাঞ্জাব হয়ে কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে আমি পালিয়ে আসি। ভারতে পৌছানোর পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আমাকে ও আমার সঙ্গী আমার সঙ্গীদের নয়াদিল্লী নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১০ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ৭ই আগষ্ট মুজিব নগরে পৌছাই ৮ তারিখে পোষ্টিং হয়ে মেঘলয় সেক্টর ১১-এর প্রথম বেঙ্গলের সহঅধিনায়ক ও কোম্পানী কমান্ডার হিসাবে কাজে যোগ দিই। আমি ঐ বাহিনীর ‘ডি’ কোম্পানীর কমান্ডার ছিলাম-যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত।

  • ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন হিসাবে কর্মরত ছিলেন।