পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

496 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড আমার প্রথম অপারেশন হয় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কামালপুর (ময়মনসিংহ) বি-ও-পিতে। ঐ যুদ্ধে পাক বাহিনীর আনুমানিক ৩০ জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হয়। এ সংবাদ স্থানীয় জনগণ কর্তৃক পাওয়া যায়। আমাদের পক্ষের ২ জন শহীদ ও তিনজন আহত হন। ঐ যুদ্ধে পাক বাহিনী থেকে একখানি রাইফেল ও প্রচুর এ্যামুনিশন উদ্ধার করা হয় এবং একজন শত্রর লাশও উদ্ধার করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ব্যাটালিয়নকে মুভ করান হয় ৪ নং সেক্টরে (সিলেটের দিকে)। অক্টোবর মাসে ব্যাটালিয়ন বিভিন্ন স্থানে রেইড ও এ্যামবুশ করে, যেমন-চাবাগান, শ্রীমঙ্গল রেল ষ্টেশন, পাথরখোলা, রাজঘাট, খেজুরীচরা ইত্যাদি স্থানে। পাথরখোলাতে যুদ্ধ করার পর কিছু যুদ্ধবন্দীকে নিয়ে আসা হয় ও কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। নভেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহে সিলেটের জকিগঞ্জ ও আটগ্রাম রাস্তার দিকে আমার বাহিনী অগ্রসর হতে থাকে। নভেম্বর মাসের ৩য় সপ্তাহে সিলেটের কানাইঘাটের কাছে গৌরীপুরে এসে আমরা অপেক্ষা করি। কানাইঘাট ছিল পাক বাহিনীর ডিফেন্স। সেখানে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ১২৫ জন পাকসেনা নিহত ও ৬ জন বন্দী হয়। ৪টি মেশিনগান, ১৫টি এল-এম-জি ও ৩৬/৩৭টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। ঐ যুদ্ধে পাকবাহিনীর মেজর সারওয়ারও (৩১ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়ন) নিহত হয়। আমার বাহিনী ডিসেম্বর মাসের ৯/১০ তারিখে সিলেট এম, সি, কলেজে উপস্থিত হয়। ঐ এলাকায় ৫ দিন যুদ্ধ হয়। আমাদের ১২/১৩ জন নিহত ও ৩৬ জন সৈন্য আহত হন এবং পাকবাহিনীর ২০০-এর মত নিহত হয়। ১৭ই ডিসেম্বর সিলেট জেলায় পাক বাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। সাক্ষাৎকারঃ মেজর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন4 ১০ই জুন জেড ফোর্সে যোগদানের জন্য ৩য় বেঙ্গল রেজিমেন্টের এডভান্স পার্টি হিসাবে ৪ জন জে-সি-ও ও ১১৯ জন জোয়ান নিয়ে হিলি থেকে তেলঢালার উদ্দেশ্যে রওনা হই। ১৪ই জুন তেলঢালায় পৌছে। তেলঢালায় ১ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ৩য় বেঙ্গল ও ৮ম বেঙ্গলের অফিসার ও জোয়ানদেরকে একত্রিত করে যুদ্ধের জন্য পুনর্গঠন করা হয়। ছাত্র-যুবকদেরকেও সৈনিক হিসাবে ভর্তি করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২৮শে জুলাই পর্যন্ত পূর্ণোদ্যমে প্রশিক্ষণ চলে। ৩য় বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন তৎকালীন মেজর (বর্তমান কর্নেল) শাফায়াত জামিল সাহেব। আরও ছিলাম জেড ফোর্সের ‘এ’ কোম্পানী কমান্ডার আমি কোম্পানী কমান্ডার লেঃ নুরুননবী। ‘জেড ফোর্সের প্রথম অপারেশন হিসাবে ৩য় বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ময়মনসিংহ জেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট, দেওয়ানগঞ্জ বাজার ও দেওয়ানগঞ্জ চিনির কলের পাক-বাহিনীর ঘাঁটির উপর আক্রমণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২৯শে জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অধিনায়ক শাফায়াত জামিল এবং আমরা ‘এ’ ও ‘ডি’ কোম্পানী বাহাদুরাবাদ ঘাটের উদ্দেশে রওনা হই। সারা রাত ৩০ মাইল পায়ে হেটে বাহাদুরাবাদ ঘাটের অনতিদূরে ব্ৰহ্মপুত্র নদের অপর পাড়ে চরে পৌছি। সারাদিন জোয়ানগণ বিশ্রাম নেয়। বিকালে অধিনায়ক ও আমরা ২ কোম্পানী কমান্ডার এলাকা রেকি করি। ৩১শে জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ২ কোম্পানী বাহাদুরাবাদ ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। রাত্রি সাড়ে এগারটায় ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাটে পৌছি। রাত্রি ১২টার সময় আমরা ২ কোম্পানী অতর্কিতভাবে পাক ডিফেন্সের উপর আক্রমণ করি। পাকবাহিনীর সহিত ১ ঘন্টা গুলি বিনিময় হয়। পরে পাকবাহিনীদের গোলাবারুদ বোঝাই একটি বার্জ ডুবে যায় এবং পাকবাহিনীর ১০০ সৈন্যের মত হতাহত হয়। সেখানে আমরা

  • ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন হিসাবে কর্মরত ছিলেন।