পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
500

সাময়িকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। ফলে তারা পিছিয়ে আসে। এই আক্রমণ এবং যুদ্ধে আমাদের পক্ষে একজন অফিসারসহ ৩১ জন যোদ্ধা শহীদ হন এবং দুইজন জুনিয়র কমিশন অফিসারসহ ৬৫ জন আহত হন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় যে, শত্রুপক্ষের প্রায় ৫০ জন নিহত ও ৬০ জন আহত হয়। এই আক্রমণ যদিও পুরোপুরি সফলকাম হয়নি তবুও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটা একটা স্মরণীয় আক্রমণ ছিল। এই যুদ্ধে এটা প্রমাণ হয় যে, বাঙ্গালী সৈন্যরা সম্মুখসমরে যথেষ্ট দক্ষতার অধিকারী এবং সাহসী। এ যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৈন্যদের দ্বারা কাঁটাতারের ঘেরা এবং মাইন বসানোকে উপেক্ষা করে আমাদের যোদ্ধারা যেভাবে অসীম সাহসিকতার সাথে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন তা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, স্বল্পকালীন সাময়িক ট্রেনিং নেওয়া যুবকরাও অসীম বীরত্বের অধিকারী। এ যুদ্ধে অসীম সাহস ও বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করায় নিম্নলিখিত কয়েকজনকে বাংলাদেশ সরকার বীরত্বের পুরস্কার দেনঃ (১) শহীদ ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ (বীর উত্তম), (২) ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম), (৩) লেফটেন্যাণ্ট আব্দুল মান্নান (বীর বিক্রম), (৪) সিপাই আবদুল আজিজ (বীর বিক্রম), (৫) সিপাই গোলাম মোস্তফা কামাল (বীর বিক্রম), (৬) নায়েক সুবেদার আঃ হাই (বীর প্রতিক), (৭) নায়েক শফিকুর রহমান (বীর প্রতীক), (৮) শহীদ ল্যান্সনায়েক সিরাজুল ইসলাম (বীর প্রতীক), (৯) ল্যান্স নায়েক রবিউল্লাহ (বীর প্রতীক), (১০) ল্যান্স নায়েক তাজুল ইসলাম (বীর প্রতীক), (১১) সিপাই তারিকুল ইসলাম (বীর প্রতিক), (১২) সিপাই শফিউদ্দিন (বীর প্রতীক), (১৩) সিপাই সাইদুর রহমান (বীর প্রতীক)।

 কিছুদিন পরই মেজর (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত লেঃ কঃ) মোঃ জিয়াউদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন (বর্তমানে মেজর) বজলুল গনি পাটওয়ারী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে আমাদের ব্যাটালিয়নে যোগদান করেন। মেজর জিয়াউদ্দিনকে ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডিং অফিসার নিযুক্ত করা হয়। ৮ই সেপ্টেম্বর 'ডি' কোম্পানী ক্যাপ্টেন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে কামালপুরের ১ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত ঘাসিপুর গ্রামে প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা গড়ে তোলে।

 ১০ই সেপ্টেম্বর শত্রুপক্ষকে দুই কোম্পানী সৈন্য মর্টার নিয়ে ঘাষিপুর আক্রমণ করে। ‘ডি’ কোম্পানী অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এ আক্রমণ প্রতিরোধ করে ও তাদের আক্রমণকে ব্যর্থ করে দেয়। শত্রুপক্ষের প্রায় ৪০ জন সৈন্য নিহত হয়। আমাদের পক্ষে তিনজন শহীদ এবং আটজন আহত হন। নায়েক সুবেদার মোজাম্মেল হক এবং ল্যান্স নায়েক ইউসুফ আলী পূর্বেও কয়েকটি যুদ্ধে বীরত্বের পরিচয় দেন। বাংলাদেশ সরকার তার বীরত্বের জন্য “বীর প্রতীক” উপাধি প্রদান করেন। এর দুইদিন পর আরও দুইজন অফিসার আমাদের ব্যাটালিয়নে যোগদান করেন, তারা হলেন ফ্লাইং অফিসার আলী খান এবং ডাঃ (বর্তমানে লেফটেন্যাণ্ট) মজিবর রহমান ফকির। লিয়াকত আলী খানকে ব্যাটালিয়নের এ্যাডজুটেণ্ট নিযুক্ত করা হয়।

 কোদালকাটির যুদ্ধঃ ১৬ই সেপ্টেম্বর ‘সি’ কোম্পানীর একটি প্লাটুন লেফটেন্যাণ্ট কাইয়ুম চৌধুরীর নেতৃত্বে রৌমারীর চর কোদালকাটিতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়। ২১শে সেপ্টেম্বর শত্রুর দুই কোম্পানী সৈন্য মর্টারের সাহায্যে চরকোদাল আক্রমণ করে। আমাদের সৈন্যরা অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার সহিত তাদের আক্রমনকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়। এ যুদ্ধে শত্রুপক্ষের প্রায় ৩৫ জন সৈন্য নিহত হয়। আমাদের পক্ষে ৫ জন নিহত হয়। ২৪শে সেপ্টেম্বর সকাল বেলা শত্রুপক্ষ পুনরায় ১ ব্যাটালিয়ান সৈন্য নিয়ে কোদালটি আক্রমণ করে। এবারে তুমুল যুদ্ধ হয় এবং আমাদের সৈন্যরা এবারেও তাদের আক্রমণকে ব্যর্থ করে দেয়। যুদ্ধে শত্রুপক্ষের প্রায় ৭০ জন নিহত হয়। আমাদের পক্ষে ১৫ জন আহত হয়। কোদালকাটির এ যুদ্ধে নায়েক সুবেদার আবুল হাশেম, হাওলাদার মকবুল হোসেন, ল্যান্স নায়েক আতাউর রহমান, ল্যান্স নায়েক আবদুল হক প্রমুখ সৈন্যগণ অপূর্ব বীরত্ব প্রদর্শন করেন। এ যুদ্ধে নিম্নলিখিত সৈন্যগণ সাহসিকতার পদকপ্রাপ্ত হনঃ (১) ল্যান্সনায়েক আবদুল হক (বীর বিক্রম) এবং (২) হাবিলদার মকবুল হোসেন (বীর প্রতীক)।