পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
28

পাকিস্তানী ৯ পদাতিক বাহিনীর মোকাবিলায় ভারতীয় পক্ষে ছিলো জেনারেল রায়নার কমাণ্ডে নবগঠিত ২ কোর। এই কোরের আওতায় দুটি ডিভিশন ছিল মেজর জেনারেল দলবীর সিং-এর নেতৃত্বে ৯ পদাতিক ডিভিশন এবং মেজর জেনারেল মহিন্দর সিং বারার-এর নেতৃত্ব ৪ মাউণ্টেন ডিভিশন। জেনারেল রায়নার সহায়তায় আরো ছিল দুটি ট্যাংক রেজিমেণ্ট এবং ডিভিশনের সহায়ক গোলন্দাজ বাহিনী।

 ৩। উত্তর সেক্টর: এই সেক্টর গঠিত হয়েছিলো ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার কিছু অংশ নিয়ে। পাকিস্তানীদের পক্ষে এই সেক্টরের দায়িত্ব ছিল ব্রিগেডিয়ার এ কাদেরের নেতৃত্বে ৯৩ ব্রিগেড এবং এর আওতায় ৩১ বালুচ ও ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেণ্ট, আধা সামরিক বাহিনী (নবগঠিত ইপিসিএপি-এর দুটি উইং), কয়েকটি মুজাহিদ ইউনিট এবং একটি মর্টার ব্যাটারি। এই এলাকার উত্তরাংশ পাকিস্তানীদের প্রধান শক্তি ছিল লে. কর্নেল সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে ৩১ বালুচ রেজিমেণ্ট। এদেরকে ময়মনসিংহের উত্তরাঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিলো। উল্লেখ্য যে, সুলতান মাহমুদই ছিলো সবচাইতে বেশী সংখ্যক বাঙালীকে হত্যার প্রধান হোতা। কমলপুর-খকশীগঞ্জ জামালপুর এবং হাতিবান্ধা শেরপুর জামালপুর বরাবর যে এলাকা রয়েছে তার প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ছিলো এই রেজিমেণ্টের ওপর। এছাড়া ডালু-হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ বরাবর এলাকার দায়িত্ব এরা পালন করতো।

 এই সেক্টরের বিপরীতে ভারতীয় মেঘালয় এলাকায় ছিলো ১০১ কমুনিকেশন জোন। এই জোনের আওতাধীন ভারতীয় সৈন্যরা আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচল, নাগাল্যাণ্ড এবং মিজোরামে দায়িত্ব পালনরত সৈন্যদের চলাচল ও রক্ষাণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করতো। এই এলাকায় ভারতীয়দের যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত না থাকায় বিরাট বাহিনীর পক্ষে এখানে দীর্ঘস্থায়ী তৎপরতার চালানো সম্ভব ছিল না। তাই এই সেক্টরে ভারতীয় সৈন্য সংখ্যা ছিলো সীমিত। এলাকাটি প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় মেজর জেনারেল গুরবক্স সিং। তাঁর অধীনে ছিলো ব্রিগেডিরা হরদেব সিং ক্লেয়ার-এর নেতৃত্বে ৯৫ মাউণ্টেন ব্রিগেড গ্রুপ এবং ২৩ পদাতিক ডিভিশন থেকে আনীত একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন। এখানে ভারতীয় বাহিনীকে সহযেগিতা করেছে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে টাঙ্গাইল এলাকার সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধারা।

 ৪। ইস্টার্ন সেক্টর: মেঘনায় পূর্ব পার্শ্বের এলাকা নিয়ে গঠিত এই সেক্টরের জেলাগুলো হচ্ছে সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাকিস্তান এই সেক্টরে তাদের ১৪ ডিভিশন এবং ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশন মোতায়েন করেছিলো। মেজর জেনারেল আবদুল মজিদের নেতৃত্বে ১৪ ডিভিশনের সৈন্যরা কুমিল্লা পর্যন্ত এলাকার দায়িত্বে ছিলো। ২০২ ব্রিগেড সিলেট, ২৭ ব্রিগেড ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়া, ১১৭ ব্রিগেড কুমিল্লা, ৩১৩ ব্রিগেড ব্রাহ্মণবাড়িয়া উত্তরাঞ্চল ও মৌলভীবাজার এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো। ৫৩ পদাতিক ব্রিগেড ছিলো লাকসাম ও ফেনীর দায়িত্বে।

 চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার দায়িত্বে ছিল পাকিস্তানের ৩৯ পদাতিক ডিভিশন। কমাণ্ডার ছিলেন মেজর জেনারেল রহিম খান।

 ভারতের পক্ষে এই সেক্টরের দায়িত্বে ছিলো লে. জেনারেল সগত সিং-এর নেতৃত্বাধীন ৪র্থ কোর। তার অধীনে ছিলো মেজর জেনারেল কৃষ্ণরাও- এর অধীনে ৮ম মাউণ্টেন ডিভিশন, মেজর জেনারেল গনজালভেস-এর ৫৭ মাউণ্টেন ডিভিশন এবং মেজর জেনারেল আর, ডি হিরার অধীনে ২৩ মাউণ্টেন ডিভিশন। বাংলাদেশের ৮টি ব্যাটালিয়ন এবং আমাদের ১ থেকে ৫ নম্বর সেক্টরের সকল ট্রপসকে সগত সিং- এর অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছিল। অভিযান সংক্রান্ত দায়িত্ব ছাড়াও ৪র্থ কোরের ওপর আগরতলা শহর, বিমান ঘাঁটি এবং ঐ এলাকায় বিমান বাহিনীর সকল প্রতিষ্ঠান রক্ষার ভার ছিলো।

 প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশ পাকিস্তানীদের ১৪ ডিভিশনের কেবল ৪টি পদাতিক ডিভিশন ছিলো। ২৮শে মার্চের মধ্যে ৯ এবং ১৬ ডিভিশন দুটি এখানে চলে আসে। এরপর বাংলাদেশে তারা আরো দুটি ডিভিশন গড়ে