পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
535

শাহবাজপুর, সরাইল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হতে আদেশ দেন। এই সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানীদের একটি গাড়ী তেলিয়াপাড়া থেকে মেজর ভূঁইয়াকে অতিক্রম করে চলে আসে। 'এস' ফোর্স কমাণ্ডার নিজেদের গাড়ী মনে করে গাড়ী থামান। গাড়ী থামলে দেখা গেল গাড়ীতে পাকসেনা। পাকিস্তানী সুবেদারের সাথে কর্নেল শফিউল্লাহর হাতাহাতি শুরু হয়। পাকসেনার গুলীবর্ষণে কর্নেল শফিউল্লার কোমরের পিস্তলটি বিধ্বস্ত হলো কিন্তু অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে যান। মেজর নাসিমসহ ১১ জন গুরুতরভাবে আহত হন। মেজর মতিন ১১ বেঙ্গলের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। ৭ ডিসেম্বর শাহবাজপুর আক্রমণ করে শত্রুমুক্ত করেন। ৮ ডিসেম্বর মেজর ভূঁইয়া ও ‘এস’ ফোর্সের দলটি সরাইল হয়ে আগুগঞ্জের দিকে অগ্রসর হয়।

 পাকবাহিনীর ১৪ ডিভিশন সূদৃঢ় ঘাঁটি নির্মাণ করেছিলো। ১০ ডিসেম্বর ১৮ রাজপুত রেজিমেণ্ট পাকিস্তানী ব্যূহ ভেদ করে আগুগঞ্জে ঢুকে পড়ে। 'এস' ফোর্স ও তিন নম্বর সেক্টর সৈন্যরা বিপুল বিক্রমে এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১০/১১ ডিসেম্বর পাকসেনারা আগুগঞ্জ ছেড়ে ভৈরব চলে যায় এবং ভৈরব ব্রিজটি ধ্বংস করে। ১১ ডিসেম্বর ভারতীয় ১৯ পাঞ্জাবকে হেলিকপ্টার যোগে নদীর অপর পাড়ে নামানো হয়। দ্বিতীয় বেঙ্গল ও তিন নম্বর সেক্টর সৈন্যরা পায়ে হেঁটে নরসিংদী অগ্রসর হয়। ১১ বেঙ্গল ভৈরব অবরোধ করে রাখে।

 কুমিরাতে পাক ঘাঁটি ছিলো খুবই শক্তিশালী। ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম দশম বেঙ্গলের এক কোম্পানী কুমিরায় রেখে পাহাড় পার হয়ে হাটহাজারী যাত্রা করেন। ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী হাটহাজারী পৌঁছে যায়। চতুর্থ বেঙ্গল চট্টগ্রাম-রাংগামাটি সড়ক দিয়ে হাটহাজারীর সন্নিকটে এসে পড়ে। নবম বেঙ্গলও এখানে এসে পৌঁছায়। ১৫ ডিসেম্বর হাটহাজারীতে সন্নিকটে এসে পড়ে। নবম বেঙ্গলও এখানে পৌঁছায়। ১৫ ডিসেম্বর হাটহাজারীতে অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানী অফিসার মেজর হাদী এক কোম্পানী পাকসেনাসহ আত্মসমর্পণ করে। অপরদিকে পকসেনারা কুমিল্লা ছেড়ে ফৌজদারহাটে এসে অবস্থান নেয়। সম্মিলিত বাহিনী ফৌজদারহাট আক্রমণ করে। ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম অবস্থানরত পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করেন।

 এক নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন মাহফুজের নেতৃত্বে ছাগলনাইয়া দখল করে। ক্যাপ্টেন মাহফুজ 'কে' ফোর্সের সাথে যোগ দিয়ে ফেনী-চট্টগ্রাম সড়ক ধরে একটি দল মুহুরী নদী ধরে এবং অপর দলটি চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

 ক্যাপ্টেন মাহফুজ সম্মিলিত বাহিনীর সাথে ৯ ডিসেম্বর জোরারগঞ্জ এসে পৌঁছায়। জোরারগঞ্জ যুদ্ধে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের ফলে পিছু হটতে থাকে। শুভপুর ব্রিজটি পলায়নপুর পাকবাহিনী ধ্বংস করে দেয়।

 সীতাকুণ্ড দখলের জন্য ক্যাপ্টেন মাহফুজ ডান দিক থেকে অগ্রসর হয় এবং মিত্রবাহিনী সম্মুখভাগে এগিয়ে চলে। যৌথবাহিনী চন্দ্রকান্তের মন্দিরে এসে পৌঁছলে পাকসেনারা আর্টিলারীর সাহায্যে প্রবলভাবে বাধা দেয়। ১১ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ডের পতন হয়। ১৪ ডিসেম্বর এই বাহিনী কুমিরায় অবস্থানরত দশম বেঙ্গলের সাথে যোগদান করে।

 চতুর্থ কোর ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে দ্রুতগতিতে ঢাকার ভেতরে ঢুকে পড়ে। অপর একটি দল চট্টগ্রামের দিকে ধাবিত হয়। দ্বিতীয় কোর ও মুক্তিবাহিনী মধুমতি অতিক্রম করে অগ্রসর হতে থাকে। একটি দল মাগুরার দিক ও অন্য দলটি যশোর দখলের পর খুলনার দিকে অগ্রসর হয়। ১৪ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী ফরিদপুর দখল করে। দৌলতপুরের পতন হয় একই দিনে। পাকসেনাদের কুষ্টিয়া যশোরের দিকে পালানোর পথ বন্ধ হয়ে যায়।

 উত্তর-পশ্চিম দিকে লালমনিরহাটের পতন হয়। এর আগে জয়মনিরহাট যুদ্ধে লেঃ সামাদ শহীদ হন। ১২ ডিসেম্বর ঘোড়াঘাট দখল হয় এবং মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী বগুড়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। গোবিন্দপুর পরদিন শত্রুমুক্ত হয়। ১৪ ডিসেম্বর বগুড়ার পতন হয়।