পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
540

 ৩৩নং কোর। সদর দফতর-শিলিগুড়ি। প্রধান- লেঃ জেঃ এম, এল, থাপান। ৬ এবং ২০নং পার্বত্য ডিভিশন। তৎসহ রুশ পিটি-৭৬ এস ট্যাঙ্কেসজ্জিত একটা হাল্কা আর্মার্ড রেজিমেণ্ট, বৃটিশ ৫.৫ ইঞ্চি কামানে সজ্জিত একটি মাঝারি আর্টিলারি রেজিমেণ্ট এবং ব্রিজ তৈরি করার একটি ইনজিনিয়ারিং ইউনিট। ২০নং পার্বত্য ডিভিশন প্রধান ঘাঁটি করল বালুরঘাটের কাছে। ৬নং ডিভিশন কোচবিহার জেলায়।

 এই ৩৩নং কোরের আর একটা অংশের ঘাঁটি হল গোহাটিতে। পরিচিতিঃ ১০১নং কমিউনিকেশন জোন। প্রধানঃ মেঃ জেঃ জি এস, গিল। শক্তিঃ দুই ব্রিগেড পদাতিক সৈন্য। জামালপুরের কাছে প্রচণ্ড এক লড়াইয়ে জেনারেল গিল আহত হওয়ার পর এই বাহিনীর প্রধান হলেন মেঃ জেঃ জি, নাগরা।

 ৪ নং কোর। সদর দফতর-আগরতলা। প্রধান- লেঃ জেঃ সগত সিং ৮, ৫৭ এবং ২৩নং পার্বত্য ডিভিশন। তৎসহ দু স্কোয়াড্রন পিটি-৭৬ এস রুশ সাঁতারু ট্যাঙ্ক, বৃটিশ ৫.৫ ইঞ্চি কামানে সজ্জিত একটা মাঝারি রেজিমেণ্ট এবং ব্রিজ তৈরীর ইনজিনিয়ারিং ইউনিট। ঐ তিনটি পার্বত্য ডিভিশনকে ভাগ ভাগ করে বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে বিভিন্ন এলাকায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল।

 এটা ভারতীয় সেনাবাহিনীর হিসাব। এর সঙ্গে ছিল কর্নেল ওসমানির অধীনস্থ প্রায় ৬০,০০০ মুক্তিসেনা। এরা মোটামুটি দুভাগে বিভক্ত ছিলঃ মুক্তিফৌজ এবং মুজিববাহিনী বা মুক্তিবাহিনী (এফ-এফ) ট্রেনিংপ্রাপ্ত ও পুনর্গঠিত মুক্তিবাহিনীর সৈন্যরা নবপর্যায়ে জুন মাস থেকেই বাংলাদেশের ভেতরে লড়াই চালাতে শুরু করেছিল। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে এদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন মেঃ জেঃ বি, এন, সরকার। যুদ্ধ যখন পুরোদমে শুরু হয়ে গেল এবং যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষভাবে লড়াইয়ে অংশ নিলেন তখন বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নিয়ে গঠিত হল একটি কমাণ্ড। এই কমাণ্ডের প্রধান হলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেঃ জেঃ জগজিৎ সিং অরোরা।

 এখানে দুটো জিনিস বোধ হয় আগাম ব্যাখ্যা করে রাখা ভাল। ওপরের তালিকা থেকেই দেখা যাচ্ছে ভারত বাংলাদেশের চতুর্দিকে যে সৈন্য সাজালো তারা অধিকাংশই পার্বত্য ডিভিশনের। পার্বত্য ডিভিশন গঠনে যে কোনও অন্য ডিভিশনের মতই, কিন্তু যেহেতু প্রধানত পাহাড়ে লড়াই করার জন্য পার্বত্য ডিভিশন গঠিত হয় সেই জন্য তাদের অস্ত্রশস্ত্র হয় একটু হাল্কা ধরনের। ট্যাঙ্ক বা ভারী কামান পার্বত্য ডিভিশনে থাকে না। এই জন্যই বাংলাদেশে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করতে গিয়ে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রতিটি পার্বত্য ডিভিশনের সঙ্গে বাড়তি ট্যাঙ্ক ও আর্টিলারি রেজিমেণ্ট যোগ করে। এর মধ্যে বেশকিছু রাশিয়ান সাঁতারু ট্যাঙ্কও ছিল। দ্বিতীয়ত, পার্বত্য ডিভিশনের সঙ্গে সাধারণত বড় ব্রিজ তৈরী করার মত ইউনিট থাকে না। কারণ, পাহাড়ের উপরে নদী চওড়া হয় না। অথচ বাংলাদেশ চওড়া নদীতে ভরা। কতকগুলি নদী বিশাল। এই জন্য বাংলাদেশে অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি পার্বত্য ডিভিশনের সঙ্গে বড় বড় ব্রিজ তৈরীর ইনজিনিয়ারিং ইউনিটও দেওয়া হল।

 স্বাধীনত সংগ্রাম শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রনায়করা বাংলাদেশের জন্য তিন পর্যায়ে তিন কিস্তি সামরিক পরিকল্পনা তৈরী করে। প্রথম পর্যায়, ২৫ মার্চ থেকে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। এই পর্যায়ের পাকিস্তানী সামরিক পরিকল্পনা ছিলঃ সমস্ত শহরগুলিতে ঝটিতি বাঙালীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়, যাকেই স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে মনে হয় তাকেই শেষ করে দাও। দ্বিতীয় পর্যায়ে, অর্থাৎ যখন ট্রেনিংসহ পুনর্গঠিত মুক্তিবাহিনী গেরিলা কায়দায় আক্রমণ শুরু করল তখন পাক বাহিনীও বাংলাদেশে তার সামরিক পরিকল্পনা পাল্টালো। এই পর্যায়ে তারা শুধু সেনাবাহিনীর উপর নির্ভর করল না। গড়ে তুলল দুটো স্থানীয় বাহিনীও। এর একটা হল রাজাকার বাহিনী- সামান্য ট্রেনিংপ্রাপ্ত অত্যাচারীর দল। আর একটা আলবদর বাহিনী-প্রধানত ধর্মান্ধ যুবক এবং গুণ্ডাশ্রেণীর লোকদের নিয়ে গঠিত সামরিক বহিনী। গেরিলা এবং পাক বিরোধীদের খতম করার জন্য পাক সামরিক বাহিনী এই দুই দালাল বাহিনীর সাহায্য নিল। রাজাকার বাহিনীর হাতে অস্ত্রও দেওয়া হল-প্রধানত রাইফেল। নানা রকমের দায়িত্ব পেল তারা। যেমন, গেরিলাদের খুঁজে বের করা, গেরিলাদের সহকারী এবং