পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
554

তেজগাঁওয়ে নামতে দেওয়া হবে। এবং সেজন্য তেজগাঁও বিমানবন্দর সারাতেও দেওয়া হবে। নৌবাহিনী কিন্তু সেদিনও ভীষন সক্রিয়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং চালানার উপর নৌবাহিনীর বিমানগুলি সেদিনও প্রচণ্ড আক্রমণ চালাল।

 ১২ ডিসেম্বর; পরদিন ও ভারতীয় বিমানবাহিনী ঢাকার উপর কোনও অক্রমণ করল না। সেদিন বিদেশীদের নিয়ে ঢাকা থেকে তিনখানা আন্তর্জাতিক বিমান এল কলকাতায়। অবরুদ্ধ ঢাকা থেকে মুক্ত মানুষেরা এল কলকাতায়। বিমানবাহিনী সেদিন অন্যত্র ভীষন ব্যস্ত। ভোররাতেই ছত্রীসেন দের নামানো হল টাঙ্গাইলে। ময়মনসিংহ দিক থেকে মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডটাও তখন দ্রুত এগিয়ে আসছে টাঙ্গাইলে। ভোররাত্রে ছত্রীসেনাদের নামানো হল নদীর দক্ষিণে। মীর্জাপুর আর টাঙ্গাইলের মাঝামাঝি।

 ভুয়া ছত্রীদের নামানো হয়েছিল প্রথম রাত্রে। কিছু পাকসেনা সেই ভুয়া ছত্রীসেনা খুঁজতে ছুটল।তারপর ভোররাতে নদীর উত্তরে নামাতে হল আসল ছত্রীসেনা। এক ব্যাটালিয়ন-অর্থাৎ প্রায় এক হাজার। মাটিতে নামতে তারা স্থানীয় অধিবাসীদের সাহায্য পেল। স্থানীয় সবাই সহযোগিতা করতে এগিয়ে এল। বিমান থেকে যে অস্ত্রশস্ত্র ফেলা হয়েছিল স্থানীয় অধিবাসীরা ছোটাছুটি করে তা সব সংগ্রহ করে দিল ছত্রীসেনাদের।

 উত্তর দিক তখন জামালপুরের পাকবাহিনীর একটা অংশ পিছু হটে আসছিল। এদের আগমনের খবর জানা ছিল না ভারতীয় বাহিনীর। কারণ, এরা প্রধানত রাতের অন্ধকারে কাঁচা রাস্তা দিয়ে আসছিল। আচমকা এই পাকবাহিনীটা এসে পড়ল ছত্রীসেনাদের সামনে। ওরাও আবার জানত না যে ভারতীয় ছত্রীসেনারা ওখানে নেমেছে। ভারতীয় ছত্রীসেনারাই প্রথমে দেখতে পেল পাকবাহিনীকে। দেখতে পেয়েই দমাদম গুলি চালাল। এবং সেই আচমকা আক্রমণে পাকবাহিনী একেবারে হতভম্ব হয়ে পড়ল। প্রথমেই তারা ছিটকে পড়ল। তারপর রিগ্রুপড় হয়ে আবার দক্ষিণে এগোবার চেষ্টা করল। কিন্তু ততক্ষণে ভারতীয় ছত্রীসেনারা পুরোপুরি তৈরী। লড়াই হল। পাকসেনারা কিছুক্ষণ লড়াইয়ের পরই পিছু হটার চেষ্টা হরল। কিন্তু তাও পারল না। কারণ ততক্ষণে ময়মনসিংহের দিক থেকে ১০১নং কমিউনিকেশন জোনের ব্রিগেডটাও এসে গিয়েছে পেছনে। বাধ্য হয়ে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করল।

 টাঙ্গাইলের ছত্রীসেনারা কিছুক্ষণের মধ্যেই ছোট্ট বিমানবন্দরটা দখল করে নিল। তারপর থেকেই প্রতি দশ মিনিট অন্তর সেখানে ক্যারিবু বিমানের অবতরণ শুরু হল। এল আরও সৈন্য। এল বহু অস্ত্রশস্ত্র। যুদ্ধের নানা সাজসরঞ্জাম। কয়েক ঘণ্টায় পর ১০১ নং কমিউনিকেশন জোনের ব্রিগেডটাও এসে যোগ দিল তাদের সঙ্গে। এবং দুই বাহিনী একত্রে এগিয়ে চলল ঢাকার পথে মির্জাপুরের দিকে।

 ওদিকে তখন ৫৭ নং ডিভিশনও পূর্ব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকার দিক। সেই দিন তারা নরসিংদী অতিক্রম করে বেশ কিছুটা এগিয়েছে। সেদিনই প্রথম ঢাকায় ভারতীয় কামানের গর্জন শোনা গেল। এবং সেই গর্জন শুনে নিয়োজিসহ ঢাকার পাকবাহিনী অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল।

 এদিকে কলকাতায় পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল জ্যাকবও আর কাণ্ড করে বসে আছেন। সকালে সাংবাদিক বৈঠক। জেনারেল জ্যাকব সেখানে সমগ্র যুদ্ধ পরিস্থিতি বোঝাচ্ছিলেন। সাংবাদিকরা তাঁকে এই ছত্রীসেনা নামাবার ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করল। জেনারেল জ্যাকব বললেন, হ্যাঁ ছত্রীসেনা নেমেছে। তবে কোথায় নেমেছে, কত নেমেছে আমাকে জিজ্ঞেসা করো না। বিদেশী সাংবাদিকরা এই ব্যাপারে যত প্রশ্ন করেন, জেনারেল জ্যাকব ততই প্রশ্নটাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারই মধ্যে তিনি ইঙ্গিতে এমন একটা ধারণা দিলেন যে এক ব্রিগেডের বেশি ছত্রীসেনা নামানো হয়েছে এবং ঢাকার কাছাকাছি বিভিন্ন এলাকায় তারা নেমেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলি এই খবর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে ছড়িয়ে দিল। খবরটা ঢাকায়ও গিয়ে পৌঁছল। এবং