পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
559

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অনুসৃত রণনীত ও রণকৌশল দৈনিক বাংলা ৪-৯ ডিসেম্বর, ১৯৭২ ১৯৭১

জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকার
হেয়াদেত হোসাইন মোরশেদ

 প্রশ্ন:- মুক্তিবাহিনী কিভাবে সংগঠিত হয়েছিল এবং ২৬ শে মার্চের পর থেকে ৩রা ডিসেম্বর তারা কিান ধরনের রণনীতি ও রণকৌশল অবলম্বন করেছিলেন?

 জেনারেল ওসমানী: আপনাদের মনে আছে ২৬ শে মার্চ থেকে শত্রুকে প্রতিরোধ এবং বাঙ্গালীকে দমনে শত্রুদের কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে প্রথমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের বীর বাঙ্গালী সৈনিক, প্রাক্তন ই-পি-আর -এর বীর বাঙ্গালীরা এবং আনসার, মোজাহেদ ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর বীর জওয়ানেরা। সঙ্গে সঙ্গে এদরে সাথে এসে যোগ দিয়েছিলেন যুবক ও ছাত্ররা।

 সর্বপ্রথমে যুদ্ধ হয় নিয়মিত পদ্ধতিতে। আর এই পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালু থাকে মে মাস পর্যন্ত। শত্রুকে ছাউনিতে যথাসম্ভব আবদ্ধ রাখা এবং যোগাযোগ কেন্দ্রসমূহ তাকে কব্জা করতে না দেয়ার জন্য নিয়মিত বাহিনীর পদ্ধতিতে যুদ্ধ করা হয়েছিল। এ জন্যে পদ্ধতি ছিল- যত বেশী বাধা সৃষ্টি করা যায় তা সৃষ্টি করা হবে; যেসব ন্যাচারাল অবস্টাকল বা প্রতিবন্ধক রয়েছে তা রক্ষা করতে হবে এর সাথে সাথে শত্রুর প্রান্তভাগে ও যোগাযোগের পথে আঘাত হানা হবে। মূলত: এই পদ্ধতি ছিলো নিয়মিত বাহিনীর পদ্ধতি। আর সংখ্যায় কম হওয়াসত্ত্বেও নিয়মিত বাহিনী অত্যন্ত বীরত্বের সাথে এই পদ্ধতিতে যুদ্ধকরে। এই পর্যায়ে বেশ কয়েকটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ রয়েছে। যথা:- ভৈরব-আশুগঞ্জের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টার শত্রুবাহিনীকে চারদিন আটকে রাখা হয়।

 তবে একটা বিষয় আমি আলোকপাত করতে চাই। নিয়মিত বাহিনীর যেটা স্বাভঅবিক কৌশল তা আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার জন্যে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছিল। আমরা ছোট ছোট অংশে অর্থাৎ ছোট ছোট পেট্রোল বা ছোট ছোট কোম্পানী প্লাটুনের অংশ দিয়ে শত্রুবাহিনীর তুলনামূলক অধিকসংখ্যক লোককে রুদ্ধ করে রাখি এবং সাথে সাথে শত্রুর ওপর আঘাতও হানতে থাকি। এভাবে চট্টাগ্রাম ও অন্যান্য সর্বপ্রথমে যুদ্ধ শুরু হয়।

 সে সময় আমার ও আমার অধিনায়কদের কাছে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, আমার কেবলমাত্র নিয়মিত বাহিনীর পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে চলতে পারব না। কারণ আমাদের সংখ্যা তখন সর্বমোট মাত্র ৫টি ব্যাটালিয়ন। এছাড়া আমাদের সাথে প্রাক্তন ই-পি-আর- এর বাঙ্গলী জওয়ানেরা, আনসার, মোজাহেদ, পুলিশ ও যুবকরাও ছিলেন। যুবকদের অস্ত্র দেয়া একটু কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমরা ভেতর থেকে যে অস্ত্রগুলো নিয়ে গিয়েছিলাম সেগুলো দিয়ে তাদেরকে তাড়াতাড়ি মোটামুটি প্রশিক্ষণ নিয়ে দাঁড় করিয়েছিলাম। আমাদের বিরুদ্ধে তখন শত্রু বাহিনীর ছিলো তিন-চারটি ডিভিশন। এই তিনটি ডিভিশনকেই নিতম সংখ্যা হিসাবে ধরে নিয়ে আমরা দেখতে পেলাম যে এদেরকে প্রতিরোধ করা, ধ্বংস করা সোজা নয়, সম্ভব নয়। তাই এপ্রিল মাস নাগাদ এটি আমার কাছে পরিষ্কার ছিলো যে আমাদের একটি বিরাট গণবাহিনী এ রকম হতে হবে যেমন মানুষের পেটের অস্ত্রের মধ্যে একটি শক্তিশালী জীবানু অস্ত্রটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে ভেতরে থেকে শক্তিশালী গেরিলা বাহিনী