পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
560

শত্রর অস্ত্রগলো বিনষ্ট করে দেবে। শত্রকে ধ্বংস করা সম্ভব হবে না। কারণ তাদের সংখ্যা বেশী তাদের অস্ত্র বেশী, তাদের বিমান রয়েছে, আর আমাদের কাছে বিমান ছিলোনা। এছাড়া সম্বল তাদের অনেক বেশী।

 কিন্তু এই সাথে সাথে পরিষ্কার ছিলো যে বাইরে লেখা কলাসিক্যাল ওয়ারফেয়ার করে দেশ মুক্ত করতে হলে বহুদিন যুদ্ধ করতে হবে ইতিমধ্যে আমাদের দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের সবচেয়ে বড় জনসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে। আর বিশেষ কিছু উদ্ধার করার থাকবেনা। সেজন্য এপ্রিল মাসের শেষের দিকে এটাও আমার কাছে পরিষ্কার ছিলো যে আমাদের একটি নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে সময় কমাবার জন্যে। সেই পদ্ধতিতে বড় একটি গেরিলা বাহিনী গঠন করে ভেতর থেকে শত্রর আঘাত করতে হবে এবং সাথে সাথে নিয়মিত বাহিনীর ছোট ছোট ইউনিট কোম্পানী বা প্লাটুন দিয়ে শত্রকে আঘাত করতে হবে এবং বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্যে তাকে বাধ্য করতে হবে- সে যেন কনসেনট্রেটিড না থেকে ডিসপার্জড হয়।এই বিচ্ছিন্নতার ফলে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতাজনিত শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সে ছোট ছোট সংযোগের রাস্তা, তার রিইনফোস মেণ্টের রাস্তা ধ্বংস করে তাকে ছোট ছোট পকেটে আইসোলেট বা বিচ্ছিন্ন করা যাবে।

 এজন্য আমার অনেক নিয়মিত বাহিনীরও প্রয়োজন ছিলো। এই প্রয়োজনের কথা আমি মে মাসের শুরুতে সরকারকে লিখিতভাবে জানাই। এবং এর ভিত্তিতে মিত্রদের কাছ থেকে সাহায্যও চাই। তাতে আমরা উদ্দেশ্য ছিলো- (ক) কমপক্ষে ৬০ থেকে ৮০ হাজার গেরিলা বাহিনী ও (খ) ২৫ হাজারের মতো নিয়মিত বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। এই বাহিনী সত্বর গড়ে তুলতে হবে।কারণ, একদিকে গেরিলা পদ্ধতি এবং সঙ্গে সঙ্গে শত্রকে নিয়মিত বাহিনীর কমাণ্ডো ধরনের রণকৌশল দিয়ে শক্তি বণ্টন করার বাধ্য করতে হবে যাতে তার শক্তি হ্রাস পায়।

 এই পদ্ধতি আমরা কার্যে পরিণত করি। ক্রমশ: গড়ে উঠলো একটি বিরাট গণবাহিনী- গেরিলা বাহিনী। জুন মাসের শেষের দিক থেকে গেরিলাদের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। প্রথমে বিভিন্ন জায়গায় ঘাঁটি বানানো হয়।এবং জুন মাসের শেষের দিক থেকে আমাদের গণবাহিনী বা গেরিলা বাহিনী এ্যাকশনে নামে। তবে, জুলাই-আগষ্ট মাসের আগ পর্যন্ত শত্রবাহিনী তাদের ওপর গেরিলা বাহিনীর প্রবল চাপ বুঝতে পারেনি। যদিও শুরু থেকে আমরা কিছুসংখ্যাক যুবককে ট্রেনিং দিয়ে ভেতরে পাঠিয়েছিলাম। তার চট্টগ্রাম বন্দরেও গিয়েছিলো, ঢাকায়ও এসেছিলো। তবে গেরিলাদের শত্ররা জুলাই মাস থেকে অনুভব শুরু করে।

 এর সাথে সাথে আরেক দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। আমাদের নৌবাহিনী ছিলো না। আমার কাছে নিয়মিত নৌবাহিনীর বহু অফিসার, ওয়ারেণ্ট অফিসার ও নাবিক আসেন। ফ্রান্সের মতো জায়গা থেকে কয়েকজন পাকিস্তানের ডুবোজাহাজ ছেড়ে আমাদের সঙ্গে যোগদান করেন। আমি তাদেরকে ভিত্তি করে এবং আমাদের বড় শক্তি যুবশক্তিকে ব্যবহার করে নৌকম্যাণ্ডো গঠন করি। এই নৌকম্যাণ্ডো জলপথে শত্রর চলাচল ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।

 ১৯৭১ সালের ১৪ ই আগষ্ট থেকে আমাদের এই নৌকম্যাণ্ডোদের আক্রমণ শুরু হয়। তারা যে বীরত্ব কৃতিত্ব দেখিয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে তার নজীর নেই। তারা মঙ্গলায় বহু জাহাজ ডুবায়। তারা শত্রর জন্যে বিভিন্ন অস্ত্র-সামান নিয়ে যেসব জাহাজ আসছিল চট্টগ্রামে সেগুলো ধ্বংস করে। এজন্যে অত্যন্ত দুঃসাহসের প্রয়োজনে ছিলো। তারা শত্রর দটো বন্দর করে দেয় এবং নদীপথেও তাদের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়।

 আমদের কৌশল অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে পমাণিত হয়। সেপ্টেম্বরের শেষনাগাদ শত্রুরক্তহীন হয় ওঠে। তার ২৫ হাজারের মতো সৈন্য বিনষ্ট হয়। বহু যানবাহনের লোকসান হয়।৩রা ডিসেম্বর পর্যন্ত শত্রর এ অবস্থা দাঁড়ায় যে একজন বক্রার রিং- এর দ্বিতীয় রাউণ্ডে ক্লান্ত হয়ে ঘুরছে এবং একটা কড়া ঘুষি খেলে পড়ে যাবেতার যোগাযোগ অবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিছিন্ন হয়ে পড়েছিল। যেভাবে আমার উদ্দেশ্য ছিলো সেভাবে বিভিন্ন