পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
564

বিভিন্ন সেক্টরের কমাণ্ডার নিয়োগ করিঃ (১) এক নম্বর সেক্টরে প্রথম মেজর (বর্তমানে কর্নেল) জিয়াউর রহমান, পরে মেজর রফিক। (২) দুই নম্বর সেক্টরের কমাণ্ডার মেজর (বর্তমানে কর্নেল) খালেদ মোশাররফ, পরে তিনি যখন ‘কে’ ফোর্স-এর কমাণ্ডার হয়ে যান তখন বেশ কিছুদিন তিনি দুটাই কমাণ্ড করছিলেন, তিনি আহত হওয়ার পরে মেজর আবু সালেক চৌধুরী কমাণ্ড করেন 'ক' ফোর্স এবং ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দার। (৩) তিন নম্বর সেক্টরের কমাণ্ডার ছিলেন প্রথমে মেজর (বর্তমানে কর্নেল) শফিউল্লাহ, পরে যখন তিনি 'এস' ফোর্সের কমাণ্ডার হয়ে যান তখন মেজর (বর্তমানে লেঃ কর্নেল) শফিউল্লাহ, নূরুজ্জামান-বর্তমানে যিনি জাতীয় রক্ষী বাহিনীর ডাইরেক্টর-তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। (৪) চার নম্বর সেক্টরে কমাণ্ডার ছিলেন মেজর (বর্তমানে কর্নেল) চিত্তরঞ্জন দত্ত, যিনি সকল নিয়মিত অফিসার যারা চাকুরীতে রয়েছেন তাদের সকলের মধ্যে সিনিয়র। আইয়ুব আমলে তাকে সুপারসিড করা হয়েছিল। (৫) পাঁচ নম্বর সেক্টরে ছিলেন মেজর (বর্তমানে কর্নেল) মীর শওকত আলী, যিনি যুদ্ধের প্রারম্ভে চট্টগ্রামে ও পার্বত্য চট্টগ্রামে যুদ্ধ করেন। (৬) ছয় নম্বর সেক্টরে ছিলেন উইং কমাণ্ডার (বর্তমানে গ্রুপ ক্যাপ্টেন) বাশার, তিনি বৈমানিক কিন্তু হলে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। (৭) সাত নম্বর সেক্টরে কমাণ্ডার ছিলেন মেজর (পরে লেঃ কর্ণেল) কাজী নূরুজ্জামান। তিনি পেনশনে ছিলেন ও আমার মতো যুদ্ধাবস্থায় এ্যাকটিভ লিস্টে কাজে যোগদান করেছিলেন। আবার পেনশনে চলে গেছেন। (৮) আট নম্বর সেক্টরের শুরুতে কমাণ্ডার ছিলেন মেজর (বর্তমানে কর্ণেল) ওসমান চৌধুরী এবং আগস্ট মাস থেকে মেজর (বর্তমানে কর্ণেল) মনজুর। (৯) নয় নম্বর সেক্টরে কমাণ্ডার ছিলেন প্রায় শেষের দিক পর্যন্ত মেজর এম. এ. জলিল। তিনি এখন চাকুরীতে নেই। তারপরে ছিলেন মেজর জয়নাল আবেদীন। (১০) দশ নম্বর সেক্টর (নৌকমাঙ্গে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ও আভ্যন্তরীণ নৌপথ)। এতে নৌকমাণ্ডোর বিভিন্ন সেক্টরে নির্দিষ্ট মিশনে সংশ্লিষ্ট কমাণ্ডারের অধীনে কাজ করতেন। (১১) এগারো নম্বর সেক্টরে ছিলেন মেজর (পরে লেঃ কর্ণেল) আবু তাহের, ইনি জখমের জন্যে বোর্ড আউট হয়েছেন। এছাড়া, তিনটি ব্রিগেড ফোর্স-জেড ফোস ও এস ফোস কমাণ্ডার ছিলেন যথাক্রমে জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ ও শফিউল্লাহ। হেডকোয়ার্টারে ডেপুটি চীফ অব ষ্টাফ ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন (বর্তমানে এয়ার কমাণ্ডার) এ, কে, খোন্দকার। চীফ অব স্টাফ রব সাহেব পূর্বাঞ্চলে থাকতেন। ওখানে আমার হেডকোয়ার্টারের একটি অংশ ছিল। ওখানে যতগুলো সমস্যা- প্রশাসন ও রণপরিচালনা সম্পর্কিত-তিনি সরাসরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন যেটা নীতি গ্রহণ সম্পর্কিত হত সে বিষয়ে আমার নির্দেশ চাওয়া হত।

 প্রশ্নঃ নিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা কত ছিল এবং কি ধরনের অস্ত্রে তারা সজ্জিত ছিল? গণবাহিনীর মোট সংখ্যা কত দাঁড়িয়েছিল?

 জেনারেল ওসমানীঃ নিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা বাড়াতে বেগ পেতে হয়েছিল। অস্ত্র নিয়ে বেগ পেতে হতো। বেশীর ভাগ সময় সকলের সদিচ্ছা থাকলেও অনেক জিনিস আমরা পেতাম না। আমার চেষ্টা ও চিন্তা এই ছিল যে, আমি বিভিন্ন অস্ত্র কত তাড়াতাড়ি যোগাড় করতে পারি। কারণ ভারতীয়রা যদি তরা ডিসেম্বর যুদ্ধে না নামতো তাহলে তখন যে পরিস্থিতি ছিল তাতে আমাকে আরো ছয় মাস যুদ্ধ করতে হতো। এতে দেশের আরো অনেক ক্ষতি হত। এজন্য শত্রুকে আরও সত্বর ধ্বংস করার জন্য অনেকগুলো অস্ত্রের আমাদের প্রয়োজন ছিল। সর্বশেষ একটি দেশের সাথে আমার সংযোগ হয়েছিল। সেই দেশটি তখনই অস্ত্র দিতে প্রস্তুত ছিল যদি আমার নিজের বিমান ঘাঁটি থাকতো। সে জন্যে আমি জেড ফোর্সকে (বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রথম ব্রিগেড) সিলেট পাঠিয়েছিলাম। অনেকেই জানতেন না হঠাৎ কেন জেড ফোর্সকে সিলেটের উপর চাপালাম। তারা কেবলমাত্র স্ট্র্যাটেজিক কারণই জানতেন। আমার উদ্দেশ্য ছিল দুটো, বিমানঘাঁটি যত তাড়াতাড়ি পাই তত তাড়াতাড়ি আমি হয়তো অনেক জিনিস সরাসরি আনতে সক্ষম হবো। এছাড়া শত্রুর শক্তিকে অন্যদিকে আকর্ষণ করাও আমার উদ্দেশ্য ছিল।

 যাহোক, যুদ্ধের শুরুতে খুব তাড়াতাড়ি একটা বিরাট বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব মনে হত না। কিন্তু আমার মুক্তিবাহিনীর সৈনিকদের, নিয়মিত বাহিনীর অফিসার ও অধিনায়কদের চেষ্টায় আমি যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত প্রায় কুড়ি থেকে বাইশ হাজার সৈন্য সম্বলিত নিয়মিত বাহিনী গড়ে তুলেছিলাম। তারা সাধারণ ইনফ্যানট্রি অস্ত্রে সজ্জিত ছিলেন।