পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
568

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খন্ড

সংযোজন

শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৯। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তৎপরতার আরও বিবরণ ‘দৈনিক বাংলা’
১২ ডিসেম্বর, ১৯৭২
১৯৭১

ছোট ছোট বিমান দিয়েও প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়েছিল বাংলাদেশের বৈমানিকরা
ক্যাপ্টেন আবদুস সাত্তার

 মে মাসের মাঝামাঝি আমি আগরতলায় মিলিত হই মরহুম ক্যাপ্টেন খালেক, বর্তমান বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন ও ক্যাপ্টেন সরফুদিনের সাথে। ক্যাপ্টেন খালেক ছিলেন পিআইএ’র ট্রাইডেণ্ট বিমানের একজন কমাণ্ডার। পিআইএতে বাঙ্গালীদের অভাবঅভিযোগের একজন প্রবক্তা হিসাবেও তিনি সুপরিচিত ছিলেন।

 অল্প কয়েকদিনের মধ্যে মধ্যে আগরতলায় আমাদের দলে যোগ দিলেন ক্যাপ্টেন মুকিত। ক্যাপ্টেন মুকিত আদিতে ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পাইলট। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পরে তিনি বিমান বাহিনী ছেড়ে পিআইএতে যোগদান করেন। মুকিতের যোগদানের ফলে আমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। তখন থেকে আমাদের একমাত্র ধ্যান-ধারণা ও প্রচেষ্টা ছিল কেমন করে একটা ছোট বিমান বাহিনী গড়ে তোলা যায়।

 জুলাই মাসের দিকে পাকিস্তান বৃক্ষ বিভাগের পাইলট আকরাম আহমেদ ও ঢাকা ফ্লাইং ক্লাবের সদস্য আহমেদুল আমিন আমাদের সাথে মিলিত হন। আকরাম আহমেদ ও আহমেদুল আমিনের আগরতলা গমনের ২/৩ দিনের মধ্যেই ক্যাপ্টেন খালেক, ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন ও আমাকে ভারতীয় বৈদেশিক দফতর দিল্লীতে ডেকে পাঠালেন। দিল্লীতে আমদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল ভারতীয় বিমান বাহিনীর ও বৈদেশিক দফতরের উচ্চপদস্থ অফিসারদের অনুধাবন করানো যে ছোট ছোট দিয়েও কার্যকরী একটা বিমান বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব। বিমান বাহিনী প্রসঙ্গে আমাদের আরও পরিকল্পনা ছিল- ছোট ছোট বিমানে ফ্লোটিংর ডিভাইস সংযোজন করে শত্রুসৈন্যদের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা ও তাদের শক্ত ঘাঁটির উপর অতর্কিতে আঘাত সজ্জিত ছোট বিমানে ভূমিতেই অবস্থানরত ১১ খানা নাইজেরীয় মিগ-১৯ বিমান ধ্বংস করার ঘটনা দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করলাম। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পরে দিল্লীর উচ্চপদস্থ অফিসাররা আমাদের সাথে একমত হলেন এবং তারা মুজিবনগরস্থ বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বর্তমান বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার কমোডর আবদুল করিম খোন্দকারের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ স্থাপন করলেন। পরবর্তী পর্যায়ে এয়ার কমোডর খোন্দকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও নেতৃত্বে জন্মলাভ করল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। ২৮শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে নাগাল্যাণ্ডের ডিমাপুরে আমরা বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সের জন্মদিবস পালন করি।

 বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে তখন এর প্রতিষ্ঠাতা এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার ছাড়া আরও কয়েকজন বৈমানিক ছিলেন- মরহুম ক্যাপ্টেন খালেক, ক্যাপ্টেন সাত্তার (লেখক), ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন, ক্যাপ্টেন মুকিত, ক্যাপ্টেন আকরাম ও ক্যাপ্টেন সরফুদ্দিন। পাকিস্তান বিমান বাহিনী ছেড়ে যারা এসেছিলেন বদরুল আলম। আরও ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগকারী ৬৭ জন এয়ারম্যান। আমাদের বিমান ছিল ডাকোটা আটার ও এলুভেট হেলিকপ্টার।