পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
70

দালালদের মাধ্যমে Propaganda করেছিল যে তাদের এক ব্যাটালিয়ন Commando তারা অবতরণ করাচ্ছে মুক্তিফৌজকে ধ্বংস করার জন্য। রাত বারটার সময় ক্যাপ্টেন শামসুল হুদার নির্দেশ অনুযায়ী Special Messenger আমাকে একটা চিঠি দেন। তাতে লেখা ছিল, এক ঘণ্টার মধ্যে position ছেড়ে কৃষ্ণনগর বাজারে report করতে- সমস্ত গোলাবারুদ শেষ করে কৃষ্ণনগরে যাবার জন্য এই Message পেয়ে ম্যাসেঞ্জারকে আমি গ্রেফতার করি এবং বললাম যে আমি নিজে শামসুল হুদার কাছে যাব এবং message clarify না করা পর্যন্ত তুমি এই জায়গা থেকে কোথাও যেতে পারবে না। আমি নিজে শামসুল হুদার সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাকে বললেন, “এটা একটা আশ্চর্য ঘটনা। Defence ছাড়ার কথা আমি বলি নাই। ব্রিগেডিয়ার সাবেক সিং বলেছেন।”

 আমার সন্দেহ হয়েছিল এটা পাকিস্তানী কোন গুপ্তচরের কাজ। ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা টেলিফোনযোগে ব্রিগেডিয়ার সাবেক সিংকে বললেন যে আমাদের সৈন্যরা ডিফেন্স ছেড়ে যেতে রাজী নয়। এমতাবস্থায় আমি কি করব? ব্রিগেডিয়ার বললেন, সবার কাছে আমার অনুরোধ জানিয়ে দেন, তারা যেন অতি সত্বর নির্দিষ্ট স্থানে একত্রিত হয়ে যায়, আমি সকালে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করব। এই আদেশ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা কৃষ্ণনগরে পৌঁছে।

 কৃষ্ণনগরে মেজর জিয়াউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তিনি একজন ICO- কে জিজ্ঞেস করলেন, Mortar Platoon? সে বলল, এখানে আসে নাই। ঐ লোকটাকে জিয়াউর রহমান অত্যন্ত দুঃখের সাথে জিজ্ঞেসা করলেন, Mortar Platoon-কে ছেড়ে তোমরা কেন এসেছ? পরে আমি সেখানে পৌছলাম। জিয়াউর রহমান আমাকে জিজ্ঞেস করলেনম মুনীর, defence ছারতে কে বলেছে? আমি বললাম, জানি না স্যার। ক্যাপ্টেন হুদা মেজর জিয়াউর রহমানকে বললেন, স্যার, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমাণ্ডার আদেশে defence ছাড়তে হয়েছে। আপনি ব্রিগেডিয়ার সাবেক সিং-এর সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করুন।

 ১৮ই জুন ব্রিগেডিয়ারের একজন সহকর্মী অফিসার কৃষ্ণনগরে আসেন এবং বলেন যে ব্রিগেডিয়ার সাহেব বিকেলে আসবেন। আপনার কোন চিন্তা করবেন না, সমস্ত সৈন্য নিয়ে আমরা পংবাড়ী চলে গেলাম। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর ব্রিগেডিয়ার সাবেক সিং, মেজর জিয়াউর রহমান, ক্যাপ্টেন রফিক, ক্যাপ্টেন অলি, ক্যাপ্টেন হুদা, ক্যাপ্টেন হামিদ পংবাড়ীতে আসেন। ব্রিগেডিয়ার সাবেক সিং প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে সবার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। তিনি মর্টার কমাােকে ডেকে পাঠান। ক্যাপ্টেন হামিদ আমাকে দেখিয়ে দেন। ব্রিগেডিয়ার আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আব বহুত নারাজ হো গেয়া কেউ, লড়াই খতম নেহি হায়, বহুত লড়াই করনা হায়। হাম পাকিস্তানী কা হাত মে ঘেরা জোয়ান কো মারনে নেহি দেংগা। তিনি আমাদেরকে নানা উপদেশ দেন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে বাংগালী অফিসারদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন। সেখানে আমাদের সাধারণ চা ও জলখাবার তিনি অত্যন্ত আনন্দের সাথে গ্রহন করেন। তিনি একজন বিখ্যাত ও বিচক্ষণ, সাহসী, বুদ্ধিমান ও প্রকৃত কমাণ্ডার হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।

 পংবাড়ীতে আমরা বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। পংবাড়ী থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গেরিলা কায়দায় অপারেশন চলতে থাকে। ছাগলনাইয়া থানা এলাকায় জুন মাসের শেষভাগে রিষ্টমুখ/রিকশামুখ ক্যাম্প তৈরী করা হয়। এখানে অবস্থানকালীন গেরিলা যুদ্ধ চলতে থাকে। ১৪ই আগস্ট ভোর বেলায় তিনটার সময় আমরা ক্যাপ্টেন হুদার আদেশে একটা কমাণ্ডো অপারেশন-এর ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমার মর্টার প্লাটুন চাঁদগাজিতে পাকিস্তানী সৈন্যদের ঘাঁটি আক্রমণের পরিকল্পনা নেয়। ভোর ৭টা ৪০ মিনিটে আমার পায়ে একটা গুলি লাগে। তার ফলে আমার দ্বিতীয় ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়ে আমি চিকিৎসা গ্রহণ করতে চলে যাই। সেইদিন পাক বাহিনীর মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই যুদ্ধের খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।

 ২৬শে আগস্ট পাকিস্তানীরা ছাগলনাইয়া থানার আমজাদহাটে প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরী করে। মুক্তিযোদ্ধারা মর্টার প্লাটুনের সাহায্যে তাদের উপর গোলাবর্ষন করে। পাকিস্তানীদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারা মুহুরী নদী পার হয়ে