পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
71

খাদ্যদ্রব্য অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পিছু হটতে থাকে। গুতুমা, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া অঞ্চলে এইভাবে যুদ্ধ চলতে থাকে। আমরা বিলেনিয়া এলাকাতে সোনাছড়ি ক্যাম্প স্থাপন করি। অক্টোবর মাসের ২০ তারিখে ১ নং সেক্টর কমাণ্ডার মেজর রফিক সাহেবের আদেশে আমাকে Artillery OP, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫৭ মাউণ্টেন রেজিমেণ্টে রিপোর্ট করতে হয়। সেখানে তিনদিন তাদের কমাণ্ড প্রসিডিউর শিক্ষা নিতে হয়। ২৪শে অক্টোবর আমাকে অবজারভার ডিউটিতে পাঠানো হয়। সেটা হলো করেরহাটে পাক বাহিনীর সৈন্য অবস্থান, তার উপর আর্টিলারীর ফায়ার করানো-রাত দুইটার সময় নয়টিলা অঞ্চল এলাকা থেকে ভোর ছটা থেকে আর্টিলারীর ফায়ার করানো- রাত দুইটার সময় নয়টিলা অঞ্চল এলাকা থেকে ভোর ছটা থেকে আর্টিলারী ফায়ার শুরু করানো হয়। পাকিস্তানীদের অবস্থানগুলোর উপর প্রথম মিডিয়াম রেজিমেণ্টের ফায়ার আরম্ভ হয়। তখন 'আর্টিলারী কমাণ্ডিং অফিসার বলেছেন, আজ পাকিস্তানী কো মন এয়াদ আগেয়া।

 আমার দায়িত্ব শেষ করে ২৪ ঘণ্টা পরে আর্টিলারী কমাণ্ডারের কাছে পৌছি। কমাণ্ডিং অফিসার, ব্রিগেড কমাণ্ডার মেজর জেনারেল, সেক্টর কমাণ্ডার সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমার সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেন এই কাজ সমাধা করতে আমার অসুবিধার কথা। পথে আমার অসুবিধার কথা তাদের কাছে বর্ণনা করলাম। সবকিছু বর্ণনা করা এখানে সম্ভব নয়।

 ব্যাটারী কমাণ্ডার মেজর ওয়াতর সিং, ক্যাপ্টেন বি, কে, ফালিয়া, মেজর চৌধুরী তাঁদের সাথে অবস্থান করতে থাকি। তাঁরা আমাকে সর্বতোভাবে সাহায্য, সহযোগিতা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধেও তাঁরা আমাদেরকে অনেক সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। ১০ই নভেম্বরে মুন্সিরহাট ও ফুলগাজী এই সমস্ত এলাকার যুদ্ধে পরশুরাম থানার অন্তর্গত অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছিল। কিন্তু পাক বাহিনী কোথা থেকে আক্রমণ চালাচ্ছে তার সঠিক কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। তাদের অবস্থান সম্বন্ধে জানতে চেষ্টা করলে একমাত্র OP ছাড়া কোন উপায় নেই। কমাণ্ডিং অফিসার সিদ্ধান্ত নিলেন পাক বাহিনীর অনুসন্ধান নিতে হবে। তিনি আমার কাছে জিজ্ঞেস করলেন, মনির সাব, কেয়া হোগা। আমি বললাম, আপনি আমাকে একটা অর্য়ারলেস নিয়ে আবার আদেশ দেন, আমি যাব। তিনি বললেন, আপনার জীবনের ঝুঁকি কে নেবে? আমি নিজেই ঝুঁকি নিয়ে যাব বলে বললাম। তিনি আমাকে বলেন নিজের ঝুঁকির কথা কাগজে লিখে দেয়ার জন্য। তিনি আমাকে একা যেতে দিলেন না। তারপর আমরা Op group চলে গেলাম সিদ্ধিনগর। একটা বৃক্ষের উপর রাত বারটা থেকে ভোর ছটা পর্যন্ত পাকিস্তানীদের অবস্থান জানার জন্য বসে থাকি। কিন্তু কোন সন্ধান না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে চলে গেলাম খেদাবাড়ী-সৌভাগ্যবশত সেখান থেকে একটা উঁচু বৃক্ষ দেখতে পাই। তার উপর উঠলে মুন্সিরহাট পরিস্কার দেখা যায়।

 ১৬ নভেম্বর আমরা Artillery largel record করছিলাম। দেখতে পেলাম ফেনী হতে একটা ট্রেন পরশুরামের দিকে যাচ্ছে। ট্রেনটা দেখে আমাদের অনেক সাহায্য হয়েছে। গাড়ী উত্তরদিকে যাচ্ছে। আমাদের কাজ অব্যাহত থকে। Gun ranging অবস্থায়। বোমা রেলওয়ে লাইনের উপর পড়ে। রেল লাইনের একটা fish plate নষ্ট হয়ে যায়। ট্রেনটা যখন ফেরত আসে তখন ওখানে এসে তিনটা বগি পড়ে যায়। ওটা দেখে আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই। পুরনো মুন্সিরহাটে পাকিস্তানীদের Artillery gun position-এ মিত্রবাহিনীর গোলার আঘাতে gun position ও চালক উভয়েই ধ্বংস হয়।

 ১৭ই নভেম্বর ভোর থেকে পাকিস্তানীরা মুন্সিরহাট, ফুলগাজী, পরশুরাম অঞ্চল ছেড়ে ফেনীর দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়। ১৮ই নভেম্বর ফুলগাজী মুক্তিযোদ্ধাদের দকলে আসে। পাক বাহিনী ফেনী অঞ্চল থেকে long range কামানের সাহায্যে আত্মরক্ষা fire করে। এদিকে পরশুরাম অঞ্চলে পাক বাহিনীর ৬০/১০০ সৈন্য কয়েকজন অফিসারসহ মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানী সৈন্যগণ ফেনী থেকে আর্টিলারী আক্রমণ অব্যাহত রাখে। ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত এভাবে যুদ্ধ চলতে থাকে।