পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
১৭৪

 ভারতীয় ট্যাঙ্কগুলি কতখানি সীমান্ত অতিক্রম করেছিল এই প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্রটি বলেন- খুব সামান্য দূর। আর একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কতদূর তারা যেতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে তিনি মনে করেন না যে, এইরকম পরিস্থতি উদ্ভব হলে যাতে মার্কিন সৈন্যরা কম্বোডিয়াতে যতটা ভেতরে ঢুকেছিল ভারতীয় সৈন্যদের পাকিস্তানের ততদূর ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। আত্মরক্ষার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করা যখন প্রয়োজন, স্থানীয় কমাণ্ডারই তা ঠিক করবেন।

 এই মুখপাত্রটি বলেন, বাংলাদেশে কোন ভারতীয় সৈন্য নেই। এখন যে যুদ্ধ হচ্ছে তা মুক্তিবাহিনী ও পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের মধ্যে।

 মুখপাত্রটি বলেন, পাকিস্তানী সৈন্যরা আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় এলাকার ওপর গোলাবর্ষণ করে চলেছে। গতকাল পাকিস্তানী সৈন্যরা। কিষাণগঞ্জের পূর্বে এবং রাণাঘাটের দক্ষিণ-পূর্বে ভারতীয় ঘাঁটির ওপর গোলাবর্ষণ করে। ২২শে নভেম্বর মধ্য রাত্রে পতিরানের উত্তরে মাঝে মাঝে পাকিস্তানী সৈন্য ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। গত ২২শে নভেম্বর শিকারপুরের বিপরীত দিকে অবস্থিত পাকিস্তানী সৈন্য লাইট মেসিন গান ও ক্ষুদ্রাস্ত্র থেকে গুলীবর্ষণ করে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পাল্টা জবাব দেয়, পাকিস্তানী সৈন্যরা অপসারণ করে। ভারতীয় পক্ষে কেউ হতাহত হয়নি। একই দিনে রাণাঘাটের দক্ষিণ-পূর্বে পাকিস্তানী সৈন্য ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। ২২শে নভেম্বর পাকিস্তানী সৈন্য গঙ্গারামপুরে এবং কালুরঘাটের নিকটবর্তী অঞ্চলের ওপরও গোলাবর্ষণ করে।

 ২২শে নভেম্বর আসামের করিমগঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতীয় পর্যবেক্ষক বিমান যখন ভারতীয় এলাকার মধ্যে ঘুরছিল তখন পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। ভারতীয় বিমানের কোন ক্ষতি হয়নি। একই দিনে পাকিস্তানী সৈন্যরা করিমগঞ্জের উত্তরে একটি এলাকায় ভারতীয় টহলদারী সৈন্যদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। একজন সীমান্ত রক্ষী আহত হয়েছে। একুশে নভেম্বর পাকিস্তানী সৈন্যরা করিমগঞ্জের পশ্চিমে ভারতীয় ঘাঁটির ওপর গোলাবর্ষণ করে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এই গোলাবর্ষণের পাল্টা জবাব দেয়। কেই হতাহত হয়নি।

 ১৯শে নভেম্বর পাকিস্তানী নাশকদের পোঁতা দুটি বোমা বিস্ফোরণের ফলে কিষাণগঞ্জের প্রায় আটত্রিশ কিঃ মিটার উত্তর-পূর্বে ইসলামপুরে একটি স্কুলবাড়ী সৈন্যরা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 ২২শে নভেম্বর, পাকিস্তানী সৈন্যরা যুদ্ধবিরতি সীমারেখার ওপার থেকে গুরাইস-এর উত্তর-পূর্বে ভারতীয় টহলদারী সৈন্যদের ওপর লাইট মেসিনগান ও রাইফেলের গুলীবর্ষণ করে। একই দিনে ঐ এলাকার ওপর পাকিস্তানী সৈন্যরা সীমান্তের ওপার থেকে লাইট মেসিনগানের গুলিবর্ষণ করে।

 রাজৌরী ও নওশেরা সেক্টরে পাকিস্তানী সৈন্যরা গত ২২শে নভেম্বর উড়ির দক্ষিণ-পশ্চিমে ও নওশেরার উত্তর-পশ্চিমে যুদ্ধবিরতি সীমারেখার ওপার থেকে গুলীবর্ষণ করে। নওশেরা এলাকায় একজন সীমান্ত রক্ষী আহত হয়েছে। কারমিলের উত্তর-পূর্বে এবং উড়ির দক্ষিণ-পূর্বে পাকিস্তানীরা নতুন বাংকার তৈরী করছে। রাষ্ট্রসংঘ পর্যবেক্ষকদের কাছে এইসব যুদ্ধ-বিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে।