পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৩২

 মিঃ স্পীকারঃ পূর্ব বাংলার মুক্তি সংগ্রামের জন্য যাঁরা জীবন দেয়েছেন, তাঁদের সম্মানার্থে সবাইকে দাঁড়িয়ে দু’মিনিট নীরবতা পালন করবার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

 [The Members then rose in their seats and remained silent for two minutes.]

 শ্রী অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় ঃ আমার প্রস্তাবে অতি বিস্তৃতভাবে সবই বলা হয়েছে, আর বলার বেশি কিছু নাই। আপনারা সবাই জানেন যে, পাকিস্তানে দুটি অংশ-পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান- পরস্পর বিচ্ছিন্ন বহু দূরে অবস্থিত। পূর্ব পাকিস্তানের আধিবাসীদের বরাবরই এই অভিযোগ ছিল যে পশ্চিম পাকিস্তানের অধিবাসীরা সংখ্যালঘু হয়েও পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে সংখ্যায় তারা কম হয়েও পূর্ব পাকিস্তানের উপর প্রভুত্ব করছে, শোষণ করছে। এই অভিযোগ তাদের ছিল। এমন কি, মাতৃভাষা পর্যন্ত বিলোপ করার চেষ্টা করেছে। সেজন্য পূর্ব-পাকিস্তানের বাংলাভাষা নিয়ে সংগ্রাম হয়, অনেক জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। এবং আনন্দ ও গৌরবের বিষয়, বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি পূর্ব-পাকিস্তানে খুব ভাল হয়েছে।

 শ্রী সুবোধ ব্যানার্জি ঃ মূখ্যমন্ত্রী মহাশয় পূর্ব পাকিস্তান না বলে বাংলাদেশ বলুন।

 শ্রী অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় ঃ আমি তাতে আসছি, ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? তারপর ওদের অনেক আন্দোলনের পর সেখানে স্বৈর শাসন পরিসমাপ্তি করার জন্য ঘোষণা করা হয় যে, গণতন্ত্র অনুযায়ী গণভোটে সেখানে সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। যথানিয়মে সেখানে স্বৈরতন্ত্রের নেতৃত্বে গণভোট গৃহীত হল এবং তাতে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শুধু পূর্ববঙ্গে নয় সমস্ত পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেন, কেন্দ্রীয় সরকারে, কেন্দ্রীয় বিধানসভায়, আইনসভায়। সাধারণ গণতন্ত্রের নিয়ম অনুসারে সমস্ত পাকিস্তানে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বসতে দেওয়া উচিত ছিল। এবং আইনসভায় কাজ করার এবং মন্ত্রীমণ্ডলী গঠন করার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না দিয়ে সেখানে স্বৈরশাসক সেটা জোর করে ভেঙ্গে দিলেন, ভেঙ্গে দিয়ে তিনি চরম অত্যাচার শুরু করলেন।

 জনগণের যে সুস্পষ্ট রায় অর্থাৎ তাঁরা যে রকম ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন এ রকম ভোট পৃথিবীতে কে কোথায় পেয়েছে আমার জানা নেই। কিন্তু তাকে অগ্রাহ্য করে যখন জবরদস্তি স্বৈরশাসন চালান হল তখন অগত্যা পূর্ববাংলা স্বাধীনতা ঘোষণা করল। তাঁরা প্রথমে পূর্ণ স্বাধীনতা চাননি তাঁরা চেয়েছিলেন পূর্ববাংলায় পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং সেটা পাকিস্তানের মধ্যে থেকেই। কিন্তু এই অত্যাচারের ফলে তাঁরা পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন এবং তারপর বললেন এটা বাংলাদেশের সরকার। তারপরই ভীষণ অত্যাচার শুরু হল- অর্থাৎ গণহত্যা, নারী নির্যাতন, গৃহদাহ প্রভৃতি অমানুষিক অত্যাচার দিনের পর দিন ধরে চলেছে। এই অবস্থায় প্রতিবেশী রাজ্য হিসেবে আমরা চুপ থাকতে পারিনা বিশেষ করে আমাদের সঙ্গে যখন তাঁদের নাড়ীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের প্রস্তাবে যেকথা বলা হয়েছে আমি তার আর পুনরুল্লেখ করতে চাই না। আরা ভারত সরকারকে বলছি যত শীঘ্র সম্ভব এই যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে স্বীকৃতি দিন এবং তাঁদের সর্বপ্রকার সাহায্য দিন। এই সর্বপ্রকার সাহায্যের মধ্য দিয়ে আমরা অস্ত্রশস্ত্রের কথাও বলেছি। আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার এটা বিবেচনা করে দেখবেন অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা মানে যুদ্ধ ঘোষনা করা হবে কিনা। কিন্তু আমাদের দাবি অর্থাৎ বিধানসভার দাবি অবিলম্বে তাঁদের সর্বপ্রকার সাহায্য করা হোক। আমরা তাঁদের বীরত্বের জন্য প্রশংসা করেছি। আশ্চর্যের বিষয় একক নেতৃত্বের অধীনে থেকে এ রকমভাবে জনগণের সংগ্রাম করা এটা পৃথিবীতে দুর্লভ। এইজন্যই আমারা তাঁদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছি এবং তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। আমরা দেখেছি হিন্দু-মুসলমান মিলে ১২-১৩ লক্ষ লোক এখানে এসছে যাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে তাদের বসবাস অসম্ভব করে তোলা হয়েছে এবং নিষ্ঠুরভাবে মানুষকে খুন করা হচ্ছে। আপনারা জানেন আমাদের পশ্চিম বাংলা অত্যান্ত জনবহুল। ভারতবর্ষের মধ্যে যে দুটি প্রদেশ বর্তমানে জনবহুল তার মধ্যে একটি হচ্ছে কেরালা এবং আর একটি হচ্ছে আমাদের এই পশ্চিম বাংলা। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের এই পশ্চিম বাংলায় আমরা তাঁদের সাদরে আমায় দিচ্ছি এবং তাঁদের বাস করার,