পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৩৩

থাকা-খাওয়ার খরচ যতদূর সম্ভব কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছেন। আমরা যে খুব ভালভাবে পারছি তা নয়। হঠাৎ দিনের পর দিন যদি হাজার হাজার লোক আসতে থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের আশ্রয় এবং খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা এটা সম্ভব নয়। কাজেই তাদের হয়ত কষ্ট হচ্ছে। কতদিন এই যুদ্ধ চলবে এবং কত লোক আসবে তার কোন ঠিক নেই। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছি পশ্চিম বাংলায় যত লোক আসবে তাদের দেবার মত স্থান আমাদের নেই অর্থাৎ এমন ভূমি নেই যেখানে তাদের জন্য শিবির তৈরি করতে পারি। কাজেই আমরা তাঁদের অনুরোধ করেছি আমাদের এখানে ৫ লক্ষ লোকের স্থান রেখে অর্থাৎ ট্রানজিট ক্যাম্পের মত করে তারা যদি অন্যান্যদের অন্য প্রদেশে নিয়ে যান তাহলে ভাল হয়। এটা পশ্চিম বাংলার কথা নয়, এটা সারা ভারতবর্ষের কথা এবং সারা পৃথিবী থেকে তাদের জন্য সাহায্য এবং সহানুভূতি আসছে।

 শ্রীজ্যোতি বসুঃ মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়, বাংলাদেশ সম্পর্কে মূখ্যমন্ত্রী যে প্রস্তাব এনেছেন আমি তাকে সমর্থন জানাচ্ছি। সমর্থন জানাতে গিয়ে আমি বলব যে, আমরা সকলে মিলে চেষ্ট করেছি যাতে করে সরকার পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষ এক হয়ে এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারি। কারণ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চয় এটা জানেন যে, আমাদের এখানকার কি মতপার্থক্য আছে। এবং সেটা ভয়ঙ্কর মতপার্থক্য। আমরা যারা বিরোধী দল এখানে আছি কংগ্রেস দলের সঙ্গে এবং তাঁদের যাঁরা সমর্থন করছেন তাঁদের সঙ্গে কোন বিষয়ে আমরা একমত নই। তথাপি এই বিষয়ে যা নিয়ে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে তা আমরা সকলেই সমর্থন করি। এর পাশে এস দাঁড়াবার জন্য আহবান জানাচ্ছি। এটাকে আমি মনে করি যে এমন একটা বিষয় শুধু পৃথিবীর পক্ষে নয়, আমাদের গণতন্ত্রের পক্ষে, আমাদের আগিয়ে যাবার পক্ষে ঐ যে একসঙ্গে হয়ে এইরকম এইরকম একটা আন্দোলন, সংগ্রাম, লড়াই হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য তাকে যদি জেতাতে না পারি তাহলে আমাদের সমূহ বিপদ, নিজেদের দেশের গণতন্ত্রের হবে- এই জন্যই আমরা চেষ্টা করছি। তাতে যদি আমাদের ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তা আমাদের করতে হবে এবং ঐ বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ তারা নিশ্চয় তাদের বিচার করবেন শুধু এই প্রস্তাব পড়ে নয়, দেখে নয়, ভবিষ্যত এই প্রস্তাব কার্যকরী করার জন্য আমরা কি ব্যবস্থা অবলম্বন করেছি। তাই দেখে তাঁরা বুঝবেন যে, আমাদের কি আন্তরিকতা আছে এর পিছনে। এই প্রস্তাব যাতে কাগজের প্রস্তাব না হয়ে থাকে সেই প্রচেষ্টা আমাদের করতে হবে দৃঢ়তার সঙ্গে আমি একথা ঘোষণা করছি যে, এটা শুধু কাগজের প্রস্তাব হবে না এই প্রতিশ্রুতিতেই আমরা একসঙ্গে এই প্রস্তাব গ্রহণ করছি। এই প্রস্তাবকে কার্যকরী করার জন্য আমরা সচেষ্ট হব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আমি এটা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, অনেক দিন হয়ে গেল প্রয় এক-দেড় মাস হল এই সংগ্রাম বাংলাদেশে হচ্ছে। এইরকম বহু আবেদন-নিবেদন ঐ গণতান্ত্রিক মানুষ সমস্ত সরকারের কাছে করেছে যাতে আমরা তাদের সমর্থন জানাই যাতে তাঁদের বিপদের সময় পাশে এস দাঁড়াই। যাঁরা এই প্রস্তাব সমর্থন করছেন তাঁরা নিশ্চয় এই কথা মনে করেন যে, বাংলাদেশের মানুষ একটা ন্যায়ের লড়াই করছেন, অন্যায় কিছু করছেন না-তাঁদের দেশকে বাঁচাবার জন্য, বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাবার জন্য তাঁদের স্বাধীনতা, তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য তারা লড়াই করছেন। এটা সবাই জানেন যে, কিছু কিছু প্রচার হচ্ছে যেটা অন্যায় প্রচার যে, ওখানকার মানুষ যারা আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য বাংলাদেশের মানুষ তারা হয়ত পাকিস্তানকে এক অংশ থেকে আর এক অংশে বিচ্ছিন্ন করবার জন্য লড়াই করছে পাকিস্তানকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। আমি লক্ষ্য করেছি অনেক মুসলিম ভাই আছেন যাঁদের মধ্যে এই প্রচার চলেছে যে, পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানকে টুকরো টুকরো করার জন্য এই লড়াই শুরু হয়েছে। এটা একেবারেই ঠিক নয়, তা আমরা এই প্রস্তাবে রাখবার চেষ্টা করেছি। এটা আমরা জানি পৃথিবীকেও জানতে হবে যে, এই পাকিস্তান টুকরো টুকরো হচ্ছে সামায়িকভাবে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী হচ্ছে ওখানকার মিলিটারী শাসকগোষ্ঠী ঐ ইয়াহিয়া গোষ্ঠী। বহুদিন ধরে তারা এইরকম করছে। তারা মিলিটারি শাসন চালাচ্ছে। তারা গণতন্ত্রকে মেনে নিতে চায় না এবং এই জন্যই পাকিস্তান টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

 কারণ একটা অংশ এবং তারাই হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেই অংশের মানুষের সামান্যতম অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার; তাদের ভাষার অধিকার, তাদের অন্যান্য যেসব বিষয়ে অধিকার আছে সেগুলি যদি না মানেন