পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৩৮

এখানে, যে ঘটনাগুলো বলা হল, একটা রাত্রের মধ্যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে- আমরা অন্তত এখানে ৬ জনের কথা শুনলাম, তাঁরা জীবন দিয়েছেন এবং গুণ্ডারা আক্রমণ করছে। শুধু গুণ্ডারা আক্রমণ করলে কিছু বলতাম না, তাদের পেছনে পুলিশ আছে, তাদের পেছনে সরকারী যন্ত্র আছে, এই জিনিস এখানে চলেছে। সুতরাং এইভাবে কি করে গণতন্ত্র বাঁচবে। দুটো নির্বাচন হয়ে গেল, এরই মধ্যে নির্বাচন হল, কিন্তু নির্বাচনের আগে আমরা দেখেছি চারি ধারে ১৪৪ ধারা জারী করে রাখা হয়েছে, এটা কখনও শুনিনি ২৩ বছরের কংগ্রেসী রাজত্বেও। স্বাধীন যেদিন থেকে হয়েছি, সেদিন থেকে যে নির্বাচন হয়ে যাবার পর আমরা উৎসব আনন্দ করতে পারব না, নির্বাচনকে বিশ্লেষণ করতে পারব না, পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে রাখতে পারব না, ১৪৪ ধারা দিয়ে আমাদের কণ্ঠরোধ করা হল, বলা হল আমরা এই বিষয়ে অনুমতি দিতে পারি না। এখন এই রিকম একটা অবস্থার মধ্যে আমরা মনে করি যে, এখানে গণতন্ত্রকে আমরা এইভাবে হত্যা করব, গণতান্ত্রিক অধিকার যেটুকু আছে সেটাকে কেড়ে নেব, এইভাবে বিনা বিচারে মানুষকে আমরা আটক করে রাখব। আবার শুনছি পি ডি অ্যাক্ট হবে, তাতে হাজার হাজার ধরে রাখা হবে, প্রতিপক্ষকে এইভাবে ঘায়েল করবেন, তাদের অ্যাসেম্বলিতে আসতে দেবেন না, তারা বিচারধীন হবে, একটা ভোট দেবার জন্য এই যদি চলতে থাকে এবং তারাই যদি আবার শাসক দলের হয়, তাহলে যদি সন্দেহের কিছু অবকাশ সেখানে আমাদের থাকে যে এরা কি সত্যিই আন্তরিকতার সঙ্গে এই প্রস্তাব রেখেছেন, না লোক দেখানোর জন্য এটা তাঁরা করছেন। আমাদের পশ্চিম বাংলার মানুষের মত তারা জানে, এমন কি ভারতবর্ষের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক মানুষের মত তাঁরা জানে, তাদের মত প্রতিফলিত হয়েছে এক মাস ধরে, সেইজন্য তাঁরা এই প্রস্তাবটি নিচ্ছেন। এর মধ্যে আন্তরিকতা যদি থাকে তাহলে সেটা কার্যকরী ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাব। কিন্তু মাননীয় স্পীকার মহাশয়, আমি ওপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি যে, ওঁরা যদি এই পদ্ধতিতে শাসনব্যবস্থা চালান, এর যদি খানিকটা পরিবর্তন না করেন তাহলে আমরা বুঝব যে, সত্যিকারের কোন সমর্থন হবে না, এ কাগজের প্রস্তাব তাঁদের কাছে থাকবে। এখানকার দাবিগুলি কি- আমরা সবাই পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, যে সরকার ওখানে হয়েছে তাকে মেনে নেওয়া হোক। মাননীয় স্পীকার মহাশয় আপনার মনে আছে, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সাধারণভাবে অনেক আগে বলেছিলেন, তখন বাংলাদেশ সরকার হয়নি, আমি কাকে রেকগনাইজ করব, কাকে মেনে নেব। তারপর সরকার গঠিত হয়েছে, এখন আর সেকথা বললে চলবে না। তাঁরা আজ ওখানে গেরিলা কায়দায় লড়াই এর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অসংগঠিত মানুষ আজ সংগঠিত হবার চেষ্টা করছেন, পরস্পর মিলেমিশে কাজ করবার চেষ্টা হচ্ছে, তাদের সেই লড়াইকে গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলেছে, সেজন্য আমরা চেয়েছিলাম আর বিলম্ব কেন, এই প্রস্তাবে ১৫ দিনের মধ্যে আমরা দিল্লীকে বলি যে, তোমরা বাংলাদেশকে মেনে নাও, কিন্তু আমরা দেখলাম টাইম লিমিট না করাই ভাল, ওদের কিছু অসুবিধা করতে পারে, সেজন্য আমরা এই প্রস্তাবে লিখলালাম যে, এক্ষুনি রিকগনিশন দেওয়া হোক। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যেটা এর সঙ্গে ওতঃপপ্রোতভাবে জড়িত, সেটা হচ্ছে ওদের আগে চাই অস্ত্রশস্ত্র। খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, সেসব তো আমাদের দিতেই হবে, কারণ অসংখ্য শরণার্থী আছে তাদের দিতে হবে, কেন্দ্রীয় সরকার সেগুলি করেছেন বলে শুনেছি, বিভিন্ন কমিটি আছে তার জন্য, কিন্তু সবচেয়ে বেশি আগে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র গোলাগুলি। তাদের হয়ত কিছু রাইফেল আছে যেগুলি সৈন্যদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে, কিন্তু সেগুলি চালাবার মত গুলী নেই। তারা জীবন দেবর জন্য প্রস্তুত, কিন্তু গুলী নেই। আমরা যদি তাদের সেটা না দিতে পারি, একটা হাওয়াই জাহাজ নিচে নেমে এসে গুলী করছে, তাকে প্রতিহত করার জন্য চাই অ্যাণ্টিএয়ারক্র্যাফট গান, এসব তাদের নেই, এসব যদি তাদের না দিতে পারি তাহলে তারা কি করে লড়াই করবে। শুধু সহানুভূতি জানিয়ে, রেডিওতে গান করে ওদের সত্যিকারের সাহায্য করতে পারব না। সেজন্য আমরা একমত হয়ে এই প্রস্তাব দিচ্ছি। তৃতীয়ত যারা নাকি ওখান থেকে বাধ্য হয়ে চলে আসছে, পরিস্থিতি অন্য রকম হলে তারা বেশির ভাগ ফিরে যাবে, তাদের সম্বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। তাদের শুধু টাকা দিলে হবে না তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি বর্ষা এস যাচ্ছে, আমরা জানি কি দুর্গতি হবে। ৬০ লক্ষ বাস্তুহারা পশ্চিম বাংলায় এসেছে, বেশির ভাগ বাইরে গেছে, এখানে কিছু আছে। সেজন্য খাদিলকার দিল্লীতে বলেছেন আমাদের একশো কোটি টাকা খরচ হবে, অতএব ইউএনও, আন্তর্জাতিক সংস্থা এর