পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৪১

তাঁকেই আমি বলছি, আপনার এই মোশনকে সমর্থন করছে বলে আমরা সত্যিই আপনার কাছে ঋণী। তবে আপনি আপনার অন্তরে অন্তস্তল থেকে তো আপনি সত্যিকারের রাজনীতি করছেন, না আপনি সত্যিকারের নিরপেক্ষভাবে এবং অনেস্টলি এটাকে সমর্থন করেন।

 এখানে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে, কারণ আমরা জানি যে, ইয়াহিয়া খানকে মোটামুটিভাবে কারা সমর্থন করেছেন অস্ত্র দিয়ে। এমন কি দেখা গেছে যাঁরা এসেছেন ওপারে থেকে তাঁরাই বলেছেন যে, সেখানে চীনা সৈন্য দেখা। তিনি গণতন্ত্রের কথা বলেছেন- আমি বলব এই গণতন্ত্রের হত্যাকারী কে? ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭০ সালের মার্চ পর্যন্ত আপনার রাজত্ব করে গেছেন, কেবল রাজত্বই করেননি, আপনি হোম ডিপার্টমেণ্টের মালিক ছিলেন। আপনার কি মনে নেই যে, সেই সময় সাধারণ লোক রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে পারেনি। (বিরোধী পক্ষের বেঞ্চ হইতে তুমুল হট্টগোল)। আপনি তো সবই জানেন। আজকে আপনি সিআরপি আনার কথা বলেছেন। আমি বলব এই সিআরপি আনা হয়েছে আপনাদেরই গার্ড দেওয়ার জন্য আজকে আপনাদের বাড়ির চারপাশে, আপনাদের নেতাদের বাড়ির চারপাশে সিআরপি রাখার প্রয়োজন হয়েছে বলেই এই সিআরপি আনা হয়েছে। কাজেই ১৩ মাস রাজত্ব করার ফলেই আপনাদের এই সিআরপি রাখার প্রয়োজন হয়েছিল। তাই প্রেসিডেণ্ট রুলের আমলে সিআরপি এনে আপনাদের বডিগার্ড দেওয়া হয়েছে। আর এই ১৪৪ ধারা কাদের জন্য? আজকে যারা নিজেদের গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে না, মানুষকে খুন করা যাদের নেশা তাদের জন্যই এই ১৪৪ ধারা, সাধারণ মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে সেইজন্যই এই ১৪৪ ধারা করা হয়েছে।

 মিঃ স্পীকারঃ মিঃ সাত্তার, ইওর টাইম ইজ আপ। প্লীজ ফিনিস।

 শ্রী আবদুস সাত্তারঃ আচ্ছা স্যার, ঠিক আছে। তিনি একটা কথা বলেছেন যে বড় রকমের কোন ঝুঁকি নেই সাহায্য করার। আমি বলব কোন ঝুঁকি নেই সাহায্য করার তবে একটু ভয় আছে- জ্যোতিবাবু কি দয়া করে চীনকে একটু নিষেধ করে দেবেন যাতে করে কোন ঝুঁকি না নিতে হয় বা কোন বিপদ না আসে। এই বলেই আমি আমার বক্তৃতা শেষ করলাম।

 শ্রী সুবোধ ব্যানার্জিঃ স্পীকার মহাশয়, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার সামনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের উপর যে প্রস্তাব রেখেছেন আমি সর্বান্তঃকরণে তাকে সমর্থন করছি। সীমান্তের ওপারে লক্ষ্য লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের বুকের রক্ত দিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ যে সংগ্রাম করছেন সেই সংগ্রাম সফল হবেই। আর সেই সংগ্রাম সফল হলে তার ঢেউ, তার প্রভাব, সীমান্ত পার হয়ে আমাদের দেশে আসবে এবং তার ফলে আমাদের দেশের শোষিত মানুষও ঠিক ওদের মতই সশস্ত্র পথে গণমুক্তির জন্য নামবে; পুঁজিবাদ খতম হবে এবং এখানকার মানুষ শোষণমুক্ত হবে। কাজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু তাঁদের নয়; এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এই সংগ্রাম আমাদেরও সংগ্রাম, বিশ্বের যেখানে যত শোষিত মানুষ আছেন তাঁদেরও সংগ্রাম। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি এই সংগ্রামকে সমর্থন জানাই তার সাফল্য কামনা করি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী মানুষের প্রতি সংগ্রামী অভিনন্দন জানাই।

 স্পীকার মহাশয়, বাংলাদেশের এই স্বাধীনতার সংগ্রাম সম্পর্কে কতকগুলি প্রশ্ন উঠেছে এখানে। এ ব্যাপারে কিছু কিছু অপপ্রচার আমাদের দেশে চলেছে, আমাদের রাজ্যেও চলেছে। কেউ কেউ বলেছেন বাংলাদেশের এই সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম নয়, এই সংগ্রাম পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে বিছিন্ন হবার জন্য এক বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, যাকে বলে সিসেসনিষ্ট মুভমেণ্ট। না আমরা এই সংগ্রাম সেইভাবে দেখি না। এটা বিছিন্নবাদী আন্দোলন, না এটা জাতীয় স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম তা বিচার হবে কোন মাফকাঠি দিয়ে? কোন জনসমষ্টি হোমোজিনিয়াস নেশন অর্থাৎ একাভূত জাতি হিসাবে গড়ে ওঠার পর সেই জাতি থেকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী সঙ্কীর্ণ স্বার্থের জন্য যখন একটা অংশ বিছিন্ন হবার উদ্দেশ্য আন্দোলন করে তখন সেটাকে বলা হয় সিসেসনিস্ট মুভমেণ্ট। যেমন ঘটেছিল আব্রাহাম নিঙ্কনের সময় আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অঞ্চলে। গোটা