পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৪৫

শেষ হবে না। এ সংগ্রামকে জনযুদ্ধ হতেই হবে তাকে সফল হতে হলে; যার একদিকে সংগঠিত সশস্ত্র সেনাবাহিনী আর অন্যদিকে জনসাধারণ। এই জনযুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতে বাধ্য। এই সংগ্রাম মদদ দিতে হলে আমাদেরও সেইভাবে সাহায্য দেবার দরকার আছে। ভারত সরকারকে যদি বাস্তব কার্যকরী সাহায্য দিতে বাধ্য করতে না পারি তাহলে আমরা কর্তব্যচ্যুত হব। এই প্রস্তাবে পশ্চিম বাংলা সরকার এবং মানুষকে সে কথা জানানো হয়েছে। এ কথা যেন মুখের কথা না হয়, এটা যেন কার্যকরী আন্দোলনের রূপ নেয়। সরকারপক্ষের সদস্য ও সরকার এবং সমস্ত মানুষকে এই অনুরোধ আমি করছি। আন্দোলন গড়ে তুলতে এ রাজ্যের মানুষকে আমি আহব্বান জানাচ্ছি।

 শ্রী সামসুদ্দিন আহমেদঃ মাননীয় স্পীকার মহাশয়, আজকে বাংলাদেশের উপর মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যে প্রস্তাব এনেছেন সেই প্রস্তাবে আমি সর্বান্তঃকরণে সমর্থক করে দু-একটি কথা বলতে চাই। স্যার, আমার কনস্টিটিউয়েন্সি একেবারে সীমান্তে অবস্থিত, তার নাম কালিয়া চক। এই কনস্টিটিউয়েন্সির ভেতর আমি নিজের চোখে দেখেছি অনেগুলি শিবির সেখানে খোলা হয়েছে। এই সমস্ত শিবিরে ঘুরে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে যে বিবরণ আমি পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ঐ জঙ্গী শাসকগোষ্টী কি রকম অমানুষিকভাবে স্বাধীনতাকামী তথা গণতন্ত্রের বাহক বাঙ্গালী জনসাধারণের কণ্ঠরোধ করতে কি অত্যাচার চালাচ্ছেন তার বিবরণ যাঁরা এসেছেন তাঁদের কাছ থেকে শুনেছি। এসব কথা বলতে গিয়ে তাঁরা অঝোরে, কেঁদেছেন। স্বামী, স্ত্রী হতে, শিশু মা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখানে এসেছেন। হয়ত স্বামী রয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশে, স্ত্রী কোন প্রকারে চলে এসেছেন আমাদের পশ্চিমবঙ্গে। এ রকম করুণ বিবরণও আমি পেয়েছি।

 আমি এই প্রসঙ্গে একথা বলতে চাই যে, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী আমরা এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সেই জঙ্গী শাসনের অধীনে বহুদিন থাকার পর নানারকম অনাচার, অত্যাচার সহ্য করার পর বাংলাদেশে তথা পূর্ব বাংলার জনমুখ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। সুযোগ পেয়েছিল নির্বাচনের মাধ্যমে এবং তার জবাব জনসাধারণ দিয়েছিল। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী আমরা এবং গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমরা বলতে চাই যেমন পৃথিবীর মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হয়ে শান্তিতে আজ নিজের কথা চিন্তা করতে পারছে। তাদের মুখ থেকে শুনে আজ এ কথা বলতে চাই, তাদের অনেক এম এল এ.এম পি-র সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে যে বিবরণ পেয়েছি এবং অনেকে পেয়েছেন, আমার বিশ্বাস তারা যে লড়াই করেছে সে লড়াই তারা করতে চায়নি সশস্ত্রভাবে। তারা চেয়েছিল অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে, শান্তির মাধ্যমে গণতন্ত্রের মাধ্যমে তাদের স্বায়ত্তশাসন, যাতে তারা নিজেদের কথা নিজেরা চিন্তা করতে পারে সেই রকম সুযোগ সুবিধা নেওয়ার কথা তারা চিন্তা করেছিল। কিন্তু আমরা জানি এবং খবরের কাগজ থেকে দেখেছি এবং তাদের কাছ থেকে শুনেছি যে নেতা মুজিবুর রহমান যে প্রস্তাবগুলি রেখেছিলেন সে বিষয়ে আলোচনা করার অভিনয় করার জন্য সেই জঙ্গীশাহী ইয়াহিয়া সাহেব এসেছিলেন এবং তার সঙ্গে তার সারেদ ভুট্টো সাহেবও এসেছিলেন। তারপর আলোচনা চলতে চলতে হঠাৎ ভুট্টো সাহেব আন্তর্হিত হলেন এবং ইয়াহিয়া সাহেবও আন্তর্হিত হলেন এবং তার বদলে রেখে গেলেন-কি রেখে গেলেন? রেখে গেলেন সশস্ত্র ঐ সৈনিকদের যারা শিশু, মাতা, স্বামী, পুত্র সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মরল। সবচেয়ে দুঃখের কথা যে, সেখানে যারা শিক্ষক, শিক্ষিত সমাজ এবং যারা ছাত্র যারা যুবক, যারা আইনবিদ, যারা বৈজ্ঞানিক, যারা ইঞ্জিনিয়ার, সবাইকে তারা গুলি করে মেরেছে। তাদের এক একটা করে ধরে শুট ডেড করেছে। কোন প্রশ্ন নেই, কোন ট্রায়াল নেই, তাদের গুলি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীর মুখ থেকে শোনা কথা যে, যাকে সন্দেহ করা হয়েছে রাস্তার উপর তাকে গুলী করা হয়েছে। যাকে সন্দেহ করা হয়েছে ছাত্র তাকে গুলী করা হয়েছে। যাকে দেখছে সে ভয়ে পালাচ্ছে কিন্তু সে ছাত্র নয় তবুও তাকে গুলী করে মারা হয়েছে। এমন কি আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে সন্দেহ হয়েছে যাকে, তাকে গুলি করে মারা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, সবাই তো আর পার্টির সমর্থক নয়, প্রতিটি মানুষ তো পার্টির সভ্য নয়, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হয়ে তাদের নিজেদের মত ব্যক্ত করেছিল। এই রকমভাবে তারা বলি হয়েছে সেই জঙ্গী শাসনের কাছে। আমার এই বক্তব্য হচ্ছে, আমরা প্রবণতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এই আইনসভায় অনেক কথা বলে চলেছি। অনেক প্রশ্ন উঠেছে,