পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৪৭

এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে তার সেই তথাকথিত গণতন্ত্র, সেটা বেসিক ডেমোক্রেসি তাঁরা বলতেন, তাঁরা সেইটা দিয়ে চালাবার চেষ্টা করেছিলেন, পুরো গণতন্ত্র দেন নাই, সীমাবদ্ধ গণতন্ত্র দিয়েছিলেন তাই চালাবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিশেষ করে পূর্ববাংলায় গণআন্দোলন তীব্রভাবে দেখা দিয়েছিল। সেই আন্দোলনের ইতিহাস বেয়ে ১৯৬৩ সালে ইতিপূর্বে সিক্সপয়েণ্ট প্রোগ্রাম ইনিসিয়েট করেন অল্প দিনের মধ্যেই সেই ছয়-পয়েণ্ট ধরে তাদের ১১ দফা দাবী তাঁরা তুলে ধরেছিলেন। এই দীর্ঘ ইতিহাসের পরিণতি হিসেবে আজ পূর্ব বাংলায় বিরাট গণআন্দোলন তথা মুক্তি আন্দোলন সেখানে শুরু হয়েছে। সুতরাং এটা হঠাৎ ঘটেনি। একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে হঠাৎ নির্বাচনে জয়ের ভেতর দিয়ে এটা ঘটেনি। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে রক্ত দিয়ে আমাদের বাংলাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্য বহন করেছে, এ পারে বহন করে নতুন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ভারতবর্ষ সৃষ্টি করেছিল ওপারেও তারা সেই ঐতিহ্য বহন করেছে, স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে, যেমন আমরা লড়েছিলাম। তাঁরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতার লড়াই-এর জন্য অগ্রসর হয়ে এসেছিলেন। সেইজন্য আমরা দেখছি এটা বিরাট আন্দোলনের চেহারা। দ্বিতীয়ঃ এই আন্দোলনে একটা জিনিস এসেছে-ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করছে। এই ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে লড়াই-এর চেহারা আর একটা টেনে নেওয়া দরকার-ন্যাশনাল কোশ্চেন সেখানে এখন আবির্ভূত হয়েছে। এই ন্যাশনাল কোশ্চেনের মূল কথা দুটি- প্রথমতঃ জাতিগতভাবে তাদের উপর শোষণ চাপানো হয়েছে। শোষণের ইতিহাস সেই আচরণের মধ্যে দিয়ে এখান এসেছে। আমি সেটা এখানে একটু তুলে ধরতে চাচ্ছি। পূর্ববাংলার অধিবাসীদের তারা জাতিগতভাবে কিভাবে অপেশান করছে, এক্সপ্লয়েট করেছে তারা তার একটি বিবরণ দিয়েছেন। রাজস্ব খাতে ব্যায় বাংলাদেশের সেখানে এক হাজার পাঁচ শো কোটি টাকা সেখানে পশ্চিম পাকিস্তান রাজস্ব খাতে ব্যায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন খাতে ব্যায় বাংলাদেশে তিন হাজার কোটি টাকা, আর পশ্চিম পাকিস্তানে হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক বাণিজ্যের আয় আসে শতকরা ২০ ভাগ বাংলাদেশে, আর শতকরা ৮০ ভাগ যার পশ্চিম পাকিস্তান। বৈদেশিক আমদানির শতকরা ২৫ ভাগ পৌঁছে বাংলাদেশে, আর শতকরা ৭৫ ভাগ যায় পশ্চিম পাকিস্তনে। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির শতকরা ৮৫ ভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকারে, আর শতকরা মাত্র ১৫ জন বাংলাদেশের অধিবাসী পায়। সামরিক বিভগের শতকরা ৯০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী, আর মাত্র ১০ জন বাংলাদেশের লোক। চালের দাম যেখানে ৫০ টাকা বাংলাদেশে, সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানে মাত্র ২৫ টাকা। আটার দাম পশ্চিম পাকিস্তানে যেখানে ১১৫ টাকা, বাংলাদেশে সেখানে ২৫ টাকা। সরিষার তেল বাংলাদেশের হচ্ছে ৫ টাকা, আর আড়াই টাকা হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানে। সোনার দাম বাংলাদেশে ১৭০টাকা, আর পশ্চিম পাকিস্তানে সেই সোনার দাম ১৩৫ টাকা। এবং এই যে বৈষম্য, এই বৈষম্য তারা তুলে ধরেছেন, এই যে জাতিগতভাবে তাদের উপর বৈষম্য দেখানো হচ্ছে- এই যে পক্ষপাতদৃষ্ট সরকার এবং তার অত্যাচারের যে কাহিনী সেটা আরও অনেকে বলেছেন তার পুনরাবৃত্তি আমি করতে চাই না- সেইজন্য সেখানে এই জাতীয় প্রশ্ন এসে গেছে। যে জাতীয় প্রশ্ন আমাদের দেশে সেইভাবে নেই, এবং এই জাতীয় প্রশ্ন থাকার জন্য সেখানে এই বিরাট সমর্থন দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস এবং এইভাবে জাতিগত শোষণ এবং শাসন-এর জন্যই সেখানে ঐ ঐক্য এবং জাতীয় সমর্থন গড়ে উঠেছে। এবং এই অবস্থায় আমরা আজ তাদের সমর্থণ জানাতে গিয়ে যে সমস্ত কথা বলেছি, আমরা আশা করি যে, যদিও উভয় পক্ষ থেকেই বলছি, তারা যা যে উদ্দেশ্য নিয়েই বলে থাকুন আশা করা যায় আগামী দিনে তার পরীক্ষা তারা দেবেন। আগামী দিনে, যারা আজ এখানে প্রতিবাদ করেছেন, তারা সমর্থন জানান। তারাও বাস্তব পত্রে তার পরিচয় দেবেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত বা আজকে উঠেছে বলে উল্লেখ করার দরকার এবং যেটা আমাদের কর্তব্য, এখানে গভর্নমেণ্ট পক্ষের সমস্ত দল এটা সমর্থন করছেন, কিন্তু আমি যতদূর জানি যে গভর্নমেণ্ট পক্ষের অন্ততঃ মুসলিম লীগের, যাদের ওখানে সে ভূমিকা আছে, সেই ভূমিকা থেকে তারা নিজেদের যদি পৃথক করতে চান, নিশ্চয় সেই অধিকার তাদের আছে এবং যখন এটাকে সমর্থন করছেন, আমি আশা করি তাদের ভূমিকা কোথায়, সেটা জানাবার জন্য, বাংলাদেশের যে একটিমাত্র মিশন আমাদের দেশে আছে, সেই মিশনে গিয়ে এরা