পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৪৮

তো তাদের সমর্থন জানিয়েছেন বলে শুনিনি। আমরা তো শুনিনি তাদের পক্ষে এই আন্দোলনে বাংলাদেশের সংবাদ আছে, মিটিং-এর ক্ষেত্র আছে, বিরাট ময়দান আছে-অনেকেই তো সমর্থন জানিয়েছেন প্রকাশ্যে, কিন্তু ওদের পক্ষ থেকে কাউকে তো সেই বিরাট আন্দোলনকে অভিন্দন জানাতে শুনিনি। সেটা যদি আজও না শুনে থাকি কালকে যদি তার পরিচয় দেন তাহলে আমরা খুশি হব। কিন্তু সেই পরিচয় আমরা পাইনি। সেই জন্য এই হাউসের সামনে যদি আমাদের সকল কর্তব্য স্মরণ করার সঙ্গে এটাও সেখানে আমরা মনে করি যে, আমাদের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া সত্ত্বেও দ্বিমতের চেহারা আছে, তাহলে কি এই কথা বলা অন্যায় হবে যে, সরকার পক্ষ থেকে যখন এত অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা বলা হচ্ছে, তখন যে মুসলিম যোদ্ধার গাড়ি নিয়ে এসেছে এখানে, সেই গাড়ি কেন এসডিও বাজেয়াপ্ত করেছে সামান্য রেশন কার্ড চাইবার জন্য তারা আমাদের এই হাউসের সদস্য গভর্নমেণ্ট নেতাদের কাছে গেছেন, তাদের বলা হয়েছে দরখাস্ত করুন, মশারি চাওয়া হয়েছে যে সমস্ত যুবক সেখানে থেকে লড়ে এসেছে গায়ে ক্ষত আছে, যারা হাসপাতালে আছে তারা কিছু সাহায্য চেয়েছে, তাদের বলা হয়েছে দরখাস্ত করুন। একজন একটা সরকারী হাসপাতাল থেকে পরশু দিন আমার কাছে টেলিফোন করেছিলেন যে, তার ব্যবহার্য একটু সাবানও তারা পাননি। আমাদের সেটুকু যোগান দিতে হবে। সরকারী সদিচ্ছার প্রমাণ এর মধ্যে দিয়ে পাওয়া যায় না, যদি তা প্রমাণ করতে হয় তাহলে তার ব্যবস্থাতেও করা উচিত। প্রস্তাব ভাল জিনিস, কিন্তু প্রস্তাবের সঙ্গে তার ব্যবস্থা নেবার দায়িত্ব আশা করি মুখ্যমন্ত্রী যিনি এই প্রস্তাব পেশ করেছেন, তিনি লক্ষ্য রাখবেন। শেষ পর্যন্ত যদি কেন্দ্রীয় সরকার না মানেন-এখানে এই হাউসে আহ্ববান করা হয়েছে যে, যেন বাংলাদেশে যে গণআন্দোলন চলছে কেন্দ্রীয় সরকারকে তারা যেন চাপ দেন এবং বাধ্য করেন যাতে আমাদের এই দাবী মেনে নেন। সেখানে আমরা সেই সততার পরিচয় দিতে বলবো যে, যদি ধর্মঘট করার প্রয়োজন হয়, যদি বাংলাদেশে সাধারণ ধর্মঘট করার প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের মানুষ গণআন্দোলন মাধ্যেমে যেভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে এবং রায় দিতে অভ্যস্ত সেই পথ যদি নিতে হয়, আশা করবো যে, সরকার পক্ষের সমস্ত দল যারা আজকে এই প্রস্তাবের পক্ষে, তারাও সেই সাধারণ ধর্মঘটে তাদেরও সমর্থন জানিয়ে, আজকের এই প্রতিশ্রুতির পরিচয়স্বরূপ রাখবেন।

 শ্রী শংকর ঘোষঃ মাননীয় স্পীকার মহাশয়, আজকে যে প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রী উত্থাপন করেছে আমি তা সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করছি। বাংলাদেশে যে আন্দোলন হচ্ছে, সেই আন্দোলনের নজীর ইতিহাসে নেই এবং এই যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক সামাজবাদী ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন।

 মুজিবুর রহমান প্রথমে সশস্ত্র বিপ্লবের কথা ভাবেননি। মুজিবুর যখন আন্দোলন আরম্ভ করেছিলেন তখন তিনি অসহযোগ আন্দোলন করেছিলেন। পাকিস্তানে তখন কোন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল না। মুজিবুর রহমানকে তাই গণআন্দোলন করতে হয়েছিল, তাতে আয়ুব খাঁ ক্ষমতা হারায়। তারপর ইয়াহিয়া খাঁ আসেন এবং সেই গণআন্দোলনের জন্য ইয়াহিয়া খাঁকে নির্বাচনের প্রমিশ্রুতি দিতে হয়। সেই নির্বাচনে মুজিবর রহমানের দল বাংলাদেশে ১৬৯টি আসনের ভেতর ১৬৭ টি আসন পায়।

 এত বড় বিরাট জয় নির্বাচনের ইতিহাসে কোন দিন হয়নি। এর কারণ আছে। মুজিবুরের যে সংগ্রাম সেই সংগ্রাম সর্বাত্মক সংগ্রাম ছিল। সেই সংগ্রাম কেবলমাত্র অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, রুটিরুজির সংগ্রাম ছিল না, কেবলমাত্র পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছিল না, সে সংগ্রাম সাংস্কৃতিক সংগ্রাম ছিল, সে সংগ্রামের ভিত্তি ভাষা আন্দোলন ছিল এবং সেই সংগ্রাম সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক সংগ্রামের সমন্বয়। তারই জন্য বাংলাদেশ একটা অভূতপূর্ব একতা দেখা যায়। এই জন্য মুজিবুরের সংগ্রামকে সর্বস্তরের মানুষ সহায়তা করল। আজকে আমরা মুজিবরের সংগ্রাম থেকে যে শিক্ষা লাভ করেছি সেটা হল এই যে, যে দেশে গণতন্ত্র নেই সেখানে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের কথা আসে।