পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৫৩

দিন খাদ্য দিতে পারিনি, এই খবর আমার কাছে আছে। এবং আরও অনেক ঘটনা আছে। আমি আজকে এই প্রস্তাব সমর্থন করে একথা বলতে চাই যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যে চাপ দেওয়ার কথা উঠেছে, তাতে যেন এই দাবী থাকে যে, অবিলম্বে অর্থের সংস্থান করুন যাতে কোন অবস্থায়ই কোন দ্বিধা বা সংকটে না পড়াতে হয়। এই যে স্রোতের মত লোক আসছে তাদের জন্য কতকগুলি ব্যবস্থা যদি না করতে পারি তাহলে অন্যায় হবে, পাপ করা হবে, যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তা থেকে দূরে আসা হবে। এটা একটা গণতান্ত্রিক আন্দোলন অহিংস পথে হচ্ছে। আমাদের সুবোধবাবু একটা কথা উল্লেখ করেছিলেন। সেদিন ভারতবর্ষে যে স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছিলেন তাঁরা অধিকাংশই হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মী।

 আমার মনে হয় অনেক দিনের কথা বলে সুবোধবাবু হয়ত ভুলে গেছেন। সেদিন অসংখ্য কৃষক এই লড়াইয়ে সামিল হয়েছে এবং কৃষক রমণী মাতঙ্গিনী হাজরা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন। এ রকম অনেক উদাহরণ থাকলেও আজকে সেখানকার লড়াইয়ে তারা যে ত্যাগ, শৌর্য, বীর্যের উদাহরণ দেখিয়েছেন সেটা সত্যিই ভারববর্ষে মিলিবে না। আমি একদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষুদ্র সৈনিক ছিলাম এবং মাতঙ্গিনী হাজরা আমার কাছে প্রণম্য। কিন্তু রোসেনারা বেগম শৌর্যে, বীর্যে মাতঙ্গিনী হাজরাকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে আমি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। জহরব্রতের কথা হয়েছে। ৫০টি ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে লাফিয়ে পড়ে যেভাবে মরেছে তা অতুলনীয়। কাজেই আমি মনে করি সেখানে তাঁরা জহরব্রতের চেয়ে বড় ব্রত উদযাপন করেছেন। আমি তাদের নেতৃবর্গের কাছে শুনেছি এ রকম হাজার হাজার সুইসাইডিয়াল স্কোয়াড তৈরি হয়ে রয়েছে যারা জীবন দিতে পারবে। কাজেই আজকে তাদের মদদ দিতে হবে। আজকে যারা এসছে তারা অস্ত্র শস্ত্র চেয়েছে, তারা কেউ খেতে চায়নি। আমরা যদি খাদ্য দিতে চাই সেটা আমরা পৌঁছে দিতে পারব না। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে, আমি তাদের কাছ থেকে নিজে শুনেছি একটি ডাব খেয়ে দুই দিন লড়াই করেছে, এতখানা আখ খেয়ে তিন দিন লড়াই করেছে এবং এর জন্য তারা তৈরি। তারা চায় অস্ত্র শস্ত্র, যুদ্ধের সরঞ্জাম। মুক্তিফৌজের জন্য যা প্রয়োজন তা যদি আমরা তাদের দিতে না পারি, তাদের যদি রিকগনিসন না দিতে পারি তাহলে কোন ফল হচ্ছে না এবং ঐগুলি পৌঁছান যাচ্ছে না। আমি মনে করি, ভারত সরকার এই ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছেন এবং এতে কোন ফল হলে না। আমি আশা করি না আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার, যাঁরা জাতীয় সরকার বলে পরিচিত, তারা আর একটি জাতীয় সংগ্রামের জন্য পিছপা হবেন। ঝুঁকি আছে জানি। কিন্তু সেটা না নিয়ে অন্য দেশের অনুকরণ করা উচিত নয়। আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবী করছি আমাদের পথ অন্যান্য দেশ অনুসরণ করুন এবং সেটা করাতে হলে অবিলম্বে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া দরকার এবং তার সঙ্গে সঙ্গে যা কিছু প্রয়োজন তা পৌঁছে দেওয়া দরকার। এক প্রাণ, এক জাতি তারা গঠন করতে পেরেছি। সেটা আমরা পারিনি। তারা ভাষা আন্দোলন করেছিল এবং বাংলাদেশের মাটিকে, বাংলাদেশের গানকে জাতীয়কে তারা যেভাবে গ্রহন করেছে আমরা তা পারিনি। আমাদের সরকারী দপ্তরে আজকেও বাংলা ভাষা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়নি। আমরা বিধানসভায় সিদ্ধান্ত করেছিলাম, কিন্তু তা পারিনি। কিন্তু ওখানে গাড়ির নম্বর ইংরেজী বা উর্দু ভাষার নয়, বাংলায় লেখা। কাজেই দেখা হচ্ছে এঁরা যা পেরেছেন আমরা তা পারিনি। ওখানকার মানুষ হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান প্রভৃতি সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে চলে গেছে। কিন্তু এখানে দেখছি এখনও সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলা হচ্ছে। যা হোক, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার জন্য এবং সর্বপ্রকার সাহায্য করবার যে পথ আমরা নিতে চলেছি এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে তাকে অভিন্দন জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।

 শ্রী শ্যামাচরণ মূর্মূঃ মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়, আজকে মুখ্যমন্ত্রী মহাশয় পূর্ববাংলা সম্বন্ধে যে প্রস্তাব এনেছেন আমি তাকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করছি। আজকে হাউসে যে সমস্ত আলোচনা হল তা আমি সবই শুনলাম। আমি আজকে সমস্ত সদস্যের কাছে আবেদন জানাচ্ছি আমরা আমাদের নিজেদের সমস্ত রাজনীতি ভুলে গিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষরা খেয়ে পরে বাঁচার জন্য জঙ্গীশাহীর সঙ্গে যে লড়াই করছে তাতে তাদের সাহায্য করবার জন্য আমাদের প্রত্যক্ষভাবে নামতে হবে। এখন যদি আমরা কোন রকম