পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৫৯

 মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, আমার যা তৃতীয় বক্তব্য তা এবার আমি বলবো। তবে তার আগে বলি কংগ্রেস বেঞ্চের সদস্যরা হয়ত মনে করবেন এটা আমি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছি। কিন্তু আমি তার জন্য বলছি না। এখানে শাসকগোষ্ঠীর সন্তানের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করতে জানি। ভারতবর্ষের সঙ্গে চীনার লড়াই চল, আর আমাদের জেল পুরে দেওয়া হল। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের লড়াই হল, আমাদের জেলে পুরে দেওয়া হল। আমরা মার্কবাদীরা শান্তিপূর্ণ মীমাংসা চেয়েছিলাম বলে। আমরা আমাদের নিজেদের সংগ্রাম করতে জানি। তার জন্য বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের সংগ্রামকে ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা জানি পশ্চিম বাংলায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করতে হয়। সি আর পি মিলিটারি দিয়ে, পিভিএ বা পিডি দিয়ে আমাদের দাবান যায় না। তার জন্য আমাদের কারো উপর নির্ভর করতে হয় না। যদি আমাদের নিজেদের সংগঠনের ক্ষমতা থাকে, যদি পশ্চিম বাংলার সাড়ে চার কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি তাহলে এই সন্ত্রাসমূলক আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। আপনারা ভুল বুঝবেন না। আমি অন্য কোন উদ্দেশ্যে বলছি না। ধরুন, আপনারা সন্ত্রাসমূলক আক্রমণের সাফাই দিচ্ছেন শান্তি-শৃঙ্খলার কথা বলে। পাকিস্তানের শাসক ইয়াহিয়া খাঁ বলেছেন, ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় মিলিটারি দিয়ে অত্যাচার চালান হচ্ছে। এটা কিন্তু আমাদের জন্য বলছে না। ওরা বলছে বাংলাদেশের যে মানুষ লড়ছে তাদের ভুল বোঝাবার জন্য। তোমরা বাংলাদেশে মিলিটারির বিরোধিতা করছে, তাহলে পশ্চিম বাংলায় শান্তির সময় কেন মিলিটারি আছে? তাহলে কি এই পশ্চিম বাংলা ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে? আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য তো পুলিশ আছে। কিন্তু কেন চার ডিভিশন, তার মানে প্রায় ৫০ হাজার মিলিটারি আছে? বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের বিরুদ্ধে পাক সেনারা ব্যবহার করছে ৭০ হাজার। মিলিটারি, এখন হয়ত এক লক্ষ হবে। কিন্তু পশ্চিম বাংলায় সাড়ে চার কোটি মানুষের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার। এখানে চার ডিভিশন মিলিটারি আছে, এই চার ডিভিসন মানে ৫০ হাজার। এই প্রচার যদি ওরা করে? তাহলে পশ্চিমবঙ্গে সিআরপি ব্যবহার দ্বারা কি ইয়াহিয়ার হাতকে শক্তিশালী করা হচ্ছে না? আপনারা ভুল বুঝবেন না। ৫০ হাজার মিলিটারি সাড়ে চার কোটি মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে পাক সামরিক চক্রের আক্রমণের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশকে কিছু রাইফেলের সাহায্য দেওয়ার চেয়ে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হবে যদি আমরা দেখাতে পারি, ইয়াহিয়ার কেনা কুৎসা করার সুযোগ নেই। এখানে সবাই জানেন, বিশেষ করে যাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন তাঁরা জানেন, আমার মার্কবাদীরা সরকারের আক্রমণ হতে রক্ষার জন্য ওইসবের উপর নির্ভর করি না, নিজেদের ক্ষমতার উপর নির্ভর করি। ক্ষমতা থাকলে লড়াই করবো একথা জানি কিন্তু পাকিস্তানের শাসকচক্র যখন লোককে বোঝায় যে, ভারতবর্ষের সমর্থন হল একটা চালাকি, বাংলাদেশকে ভারতের একটা অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা-তখন এর কি জবাব দেবেন এটা বিপজ্জনক। মিলিটারি পশ্চিমবঙ্গে থাকলে আমি আতঙ্কিত নই। মানুষের অভ্যাস হওয়া ভাল। ১৩ বছর ধরে পূর্ববাংলার লোকেদের মিলিটারি দেখতে দেখতে অভ্যেস হয়ে গেছে, এবং তার জন্য তারা মিলিটারির বিরুদ্ধে রাইফেল ধরতে শিখেছে। সেজন্য দেখবেন, কোন দেশের যারা বুদ্ধিমান গভর্নমেণ্ট তারা সাধারণ অবস্থায় মিলিটারি ব্যবহার করে না। আমাদের ভারতবর্ষের শাসকরা কেন তা বুঝছেন না, তা জানি না। আমি বলছি পশ্চিমবঙ্গে মিলিটারির ব্যবহার বাংলাদেশের লড়াইকে কি দুর্বল করে না? আমি যে দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বলছি সেটা বোঝার প্রয়োজন আছে। জ্যোতিবাবু তাই বলছিলেন আনাদের দরদ কোথায় আছে? কথায় বলে যে, ‘আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখাও’। পূর্ববাংলার মানুষ স্বায়ত্ত্বশাসন চেয়েছিল বলে ইয়াহিয়া তার জবা বুলেটে দিয়েছেন। ভারতবর্ষের বহু জাতির দেশ। এখানে “স্বায়ত্ত্বশাসন” শব্দটি এখনও ওঠেনি। শুধু এইটুকু দাবী করা হয়েছিল যে, রাজ্যগুলির আরও অধিকার পাওয়া উচিত। কিন্তু তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বললেন যে, রাজ্যগুলির অধিকতর ক্ষমতার দাবীর মানে হল কেন্দ্রকে দুর্বল করা এবং কেন্দ্র দুর্বল হওয়া মানে দেশ দুর্বল হওয়া। কিন্তু যখন ইয়াহিয়া খাঁন বলেন যে, রাজ্যগুলির স্বায়ত্ত্বশাসন চাওয়া-বিশেষ করে ২ হাজার মাইল দূরের একটা রাজ্যের স্বায়ত্ত্বশাসন চাওয়া মানে পাকিস্তানকে দুর্বল করা, তখন শুনতে খারাপ লাগে। মাদ্রাজের মুখ্যমন্ত্রী- আমাদের দলের লোক নন, নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলেন-যখন রাজ্যের ক্ষমতার কথা বলেন তখন কি তিনি তাহলে দেশদ্রোহী? আমি হিন্দু ইত্যাদি পত্রিকায় বড় বড় হেড লাইন-এ দেখেছি, তিনি বলেছেন যে, যদি