পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৬৩

আজকে ইয়াহিয়া খাঁনের যে পরোক্ষভাবে চীনেরই শক্তি সে কথা কি করে অস্বীকার করবেন? মাননীয় ডেপুটি স্পীকার মহাশয়, আমি আমেরিকার প্রশস্তি গাইছি না। আমেরিকানরা ব্রিটিশ ইম্পিরিয়ালিজম-এর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন করে স্বাধীন হোল অথচ আজকে যখন ওখানকার মানুষরা সেই একইভাবে সংগ্রাম করছে তখন তাদের মুখে টুঁ শব্দটি নেই। তারা যখন এইভাবে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করছে তখন তোমাদের কি বিবেক! মাননীয় ডেপুটি স্পীকার মহাশয়, আমি যে সম্ভাব্য পরিণতির কথা বলছিলুম সেই প্রসঙ্গে আর একটা কথা হচ্ছে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি চেষ্টা করবে এই যুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী হোক যাতে করে এখান থেকে স্বার্থ লুট করা যায়। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে, ভারতীয় হিসেবে আমাদের প্রথান কর্তব্য হবে বাংলাদেশের লোক শক্তিশালী হয়ে ইয়াহিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে এগিয়ে যাক এবং এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটুক। আজকে এই জন্যেই প্রয়োজন আমাদের যে-কোন প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেওয়া। যদি প্রয়োজন হয়, অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে নয়অস্ত্রশস্ত্র ব্যতিরেকে শুধু স্বীকৃতি দিয়ে নয়, যে যে কার্যকরী পন্থা নিলে বাংলাদেশ জয়যুক্ত হয়, তা করা উচিত। আজকে এদের নিশ্চিত করুন এবং এটা ভারত সরকারের কর্তব্য। এ কথাও টিক, এ বিষয়ে ভারত সরকারের দায়িত্ব রহিয়াছে। বিরোধী দলের নেতা শ্রী জ্যোতি বসু বলেছেন যে, কাগজের প্রস্তাব না হয়ে দাঁড়ায়। নিশ্চয়ই আমরা স্বীকার করেছি এবং প্রতম দিন যেদিন স্বীকৃতি দেবার দাবী এই বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে তোলা হয়েছে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যে প্রস্তাব এনেছেন, তাতে আমরা সকলে একমত হয়েছি। শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নয়, শুধু পশ্চিম বাংলা নয়, বাংরাদেশের আশেপাশে যারা রয়েছেন তাঁদেরও এ বিষয়ে দেখা দরকার এবং ভারতবর্ষের মধ্যে আর যে রাষ্ট্রগুলি রয়েছে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীরা একজোট হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবী তোলা উচিত যে, বাংলাদেশের সংগ্রামকে এইভাবে শক্তিশালী মদদ করা উচিত যাতে বাংলাদেশবাসী জয়ী হয়।কিন্তু মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, আপনি জানেন যে, আমরা অহিংসা নীতিতে বিশ্বাস করি। সেইজন্যে আমাদের প্রয়োজন কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির শুভ উদ্রেগ করা। আমরা এই প্রশ্নকে যেন রাজনৈতিক দিক তেকে বিচার না করি, এটা সামরিক প্রশ্ন। সুতরাং, এত বড় একটা ঝুঁকি নেবার আগে নিশ্চয়ই ভারত সরকারের কর্তব্য রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বৃহৎ শক্তি এবং ক্ষুদ্র শক্তির শুভ বুদ্ধিকে জাগ্রত করা। এই কাজ করলেই বাংলাদেশকে সাহায্য করা হবে যাতে করে তারা ঐ বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে এবং সেই তৎপরতা ভারত সরকার চালিয়ে যাচ্ছে নানা প্রচেষ্টায় এবং আমরা মনে করি ভারত সরকার তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে। মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, আপনি জানেন যে, আজকে বাংলাদেশবাসী কি দুর্দশায়, দুর্গতি ও লুণ্ঠনের সম্মুখীন হয়েছে। এই অবস্থায় বিরোধী দলের বন্ধুরা সেখানে কিছু রাজনৈতিক স্বার্থ আদায় করার চেষ্টা করে চলেছে। আজকে হরেকৃষ্ণবাবু বলেই গেলেন ভারতের এই সাহায্য করা প্রথম দায়িত্ব এবং কর্তব্য। কিন্তু আসল কথার কাছাকাছি যেতে চাইলেন না। মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, এই দাবী আজকের দাবী নয়। এই দাবী বিগত নির্বাচনের আগের দাবী এতে শুধু কংগ্রেসের দায়িত্ব আছে বলে আমরা মনে করি না। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ দিয়ে যে কথা বলেছেন তার বেশি তাঁর আর কিছু বলার নেই, কারণ দেশের জনগণ কেন্দ্রীয় সরকারের সিলেণ্ডার মেজরিটি দিয়ে দিয়েছেন- দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি দিয়ে তাঁরা দিল্লীর পার্লামেণ্ট করে দিয়েছে। মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, ওরা মাঠে ঘাটে এই কথা বলেছিলেন যে, ইন্দিরা হঠাও। কিন্তু আজকে ওদের নাগলে বাহিরে চলে গেছে- ভারতবর্ষের মানুষ ইন্দিরাজীকে যে সংখ্যায় বসিয়ে দিল, তা এখন ওদের নাগালের বাহিরে। কিছুতেই নড়ান যায় না। ওদের কিছু উষ্মা হয়েছে। সি আর পি, মিলিটারি কেন এখানে আছে-সম্পূর্ণ নিরাপদজনক অবস্থা। কিন্তু এ কথা কি ঠিক? পশ্চিম বাংলা সীমান্তবর্তী রাজ্য।

(গোলমাল)

 মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, পশ্চিম বাংলা যে সীমান্তবর্তী রাজ্য একথা অস্বীকার করলে চলবে না। এর অপর প্রান্তে রয়েছে চীন। এই কিছুদিন আগে চীনের রেসিয়াজিলম এমন কি তিব্বতকে গ্রাস করে নিল। আজকে বাংলাদেশের জন্য যে বন্ধুরা চোখের জল ফেলছেন, আমি তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু এই তিব্বতকে চীন