পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৬৭

 চীৎকার করে আমাকে বসাতে পারবেন না। আপনারা যদি আমাকে বলতে না দেন তাহলে জ্যোতিবাবুকে আমি কোনদিনও বরতে দেব না। তাই আমি অনুরোধ করছি যে, ইয়াহিয়ার সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে এক করে দেখবেন না। আমি আপনাদের কাছে উদাহরণ দিয়ে বলছি যে, ইয়াহিয়া মুজিবর রহমানের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার এবং ব্যক্তি-স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে। মুজিবুর রহমান মানুষের দ্বারা নির্বাচিত ইলেক্টেড প্রতিনিধি হওয়া অ্যাসেম্বলি বসিয়ে তাদের বক্তব্য রাখবার যে অধিকার সেদিন ইয়াহিয়া দেয়নি। কিন্তু আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, আপনাদের সরকার সে অধিকার ছিনিয়ে নেয়নি। তাহলে আপনারা কি করে বললেন যে, আপনাদের প্রধানমন্ত্রী আর ইয়াহিয়া এক? আজকে মুজিব যেভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন, আপনারা কি সেইভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন? সুতরাং আমি আর অধিক কথা বলব না। আমি শুধু একটি কথা বলছি যে, ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে সমস্ত ব্যক্তিস্বার্থের দলীয় স্বার্থের সমস্ত রকম রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আসুন দলে দলে তীর্থযাত্রীর মত সত্যিকারের সক্রিয় সহযোগিতা নিয়ে, একটি শব্দ বা দুটি শব্দ বড় করে না দেখে ‘অর্থ’, ‘ইন্দিরা গান্ধী’ অন্য জায়গায় দেখব, প্রয়োজনে সমালোচনা করব। আজকে অন্তত আমরা একটি প্ল্যাটফর্মে সকলে এক হয়ে একে সমর্থন জানাই।

 শ্রী মহঃ ইলিয়াস রাজীঃ মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, মাননীয় মন্ত্রী মহাশয় যে প্রস্তাব নিয়ে আজকে এসেছেন, আমি সেই প্রস্তাব সমর্থন করছি। আজ আমরা যে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছি, তা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমরা সবাই জানি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করছেন, এই সংগ্রাম দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত অন্যায় অত্যাচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে এই সংগ্রাম। এই সংগ্রাম যারা আজকে পূর্ব বাংলার মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছে ইয়াহিয়া এবং তার সামরিক শাসকগোষ্ঠী, তারা পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ মানুষকে বোঝাবার চেষ্টা করছে এবং বোঝাচ্ছে যে, পূর্ব বাংলার মানুষ এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করতে চাচ্ছে। এটা অত্যন্ত ভুল কথা, মিথ্যা কথা। আমরা জানি পূর্ব বাংলার মানুষ শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে যখন আওয়াজ তুলেছিলেন তখন তো তারা একথা কোনদিন বলেননি যে, এরা পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চায়। আজ যে ছয়-দফা দাবির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, সেই ছয়-দফা দাবির ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসনের দাবি ইয়াহিয়া খাঁ পদদলিত করেছে, উপেক্ষা করেছে, তার ফলে এখন যে সংগ্রাম চলেছে এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সামরিক বাহিনী পূর্ব বাংলার অগণিত মানুষকে হত্যা করছে-ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে এবং আগামী দিনেও আরও অনেক শহরকে ধ্বংস করেছে, অনেক শিক্ষাকেন্দ্র, বাড়িও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। এইসব ধ্বংসলীলা, অত্যাচার ও নিষ্পেষণ কেন? এটা শুধু এই জন্য যে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাদের যে অধিকার, বাঁচবার যে অধিকার, সেই অধিকারকে তারা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল, যার জন্য ইয়াহিয়া শাসকগোষ্ঠী ঐ রকম অন্যায় অত্যাচার করে যাচ্ছে। আমাদের কাছে অর্থাৎ ভারত সরকারের কাছে পূর্ব বাংলার সংগ্রামী মানুষ সাহায্য ও সহানুভূতি চাচ্ছে। যদিও সাহায্য ও সহানুভূতি আমরা তাদের কিছু কিছু দিচ্ছি। কিন্তু তাদের রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার যে ব্যাপার-ভারত সরকার যদি সেই স্বীকৃতি দিতে দেরি করেন, তাহলে সেখানকার মানুষের দুঃখকষ্ট দুর্গতি যা হয়েছে ও হচ্ছে, সেই দুঃখ- দুর্গতি আরও বাড়বে, বেশি হবে। সেইজন্য আজকে তাদের স্বীকৃতি দেওয়াটা বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়াটাই হচ্ছে জরুরী ব্যাপার আমাদের ভারত সরকারের কাছে। এটাই সমধিক গুরত্বপূর্ণ কাজ। এবং এই আশা এবং ভরসা আমরা করছি যে, পূর্ব বাংলা জয়ী হবে সেখানে এমন একটা সরকার কায়েম করবে যেখানে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ বাঁচবার মত সুযোগ পাবে, এই আশা এবং ভরসা নিয়ে আজকের এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।

 শ্রী কাশীকান্ত মৈত্র: মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, আজকের এই ঐতিহাসিক এবং স্বরনীয় যে প্রস্তাবটি এসেছে, সেই প্রস্তাবটি আমি সমর্থন জানাচ্ছি। এবং বিরোধী দলের যেসব নেতারা এই হাউস-এ একটা