পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৭২

অন্য কোন রাষ্ট্র আমাদের আক্রমণ করবে- এই ভয়ই ইন্দিরা সরকারের প্রধান বাধা। কিন্তু তাঁরা দেখেছেন যে, ১৯৬২ সালে যখন চীনের দ্বারা আমাদের দেশ আক্রান্ত হয়, যখন ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান আমাদের আমাদের দেশ আক্রামণ করে তখন এটা প্রমাণ হয়ে গেছে যে, ভারতবর্ষের মানুষ তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, তারা দেখিয়েছে যে, ঐরকমভাবে নিজেদের আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য যে কোন সংগ্রামের পেছনে তারা রয়েছে, তার জন্য নিজেদের শক্তি, নিজেদের রক্ত, নিজেদের সমস্ত অধিকারকে তারা বিলিয়ে দিয়েছে। যে কোন আন্তর্জাতিক শক্তি, যে কোন রাষ্ট্র যদি আমাদের ভারতকে আক্রমণ করে আমরা একতাবদ্ধ হয়ে সমস্ত জাতি যদি রুখে দাঁড়াই তাহলে কোন শত্রু আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে না এই বিষয়ে আমরা সুনিশ্চিত। তাই আমি বলতে চাই, পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য ভারত সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দিতে হবে, শুধু ঐ প্রস্তাবের ভেতর সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের জনমত সংগ্রহ করতে হবে, আমাদের এখানে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, যে আন্দোলনের ফলে বাধ্য হয়ে ভারত সরকার এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রগুলি তাদের স্বীকৃতি দেবে এবং বাঙ্গালী জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে তারা মেনে নেবে এই বলেই আমি শেষ করছি। জয় হিন্দ।

'শ্রী প্রয়াগ মণ্ডল ঃ মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যে প্রস্তাব বাংলাদেশ সম্বন্ধে রেখেছেন সেই প্রস্তাব আমি সমর্থন করছি এবং সমর্থন করার সঙ্গে সঙ্গে বলছি যে, এই প্রস্তাব সম্বন্ধে কোন আন্তরিকতা আছে কিনা সেই প্রশ্ন বিভিন্ন দিক থেকে উঠেছে এবং এটা ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা জানি অনেক সময় অনেক প্রস্তাব নেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু সেই প্রস্তাবগুলি ঠিকভাবে কার্যকরী হয় না প্রস্তাব বা চুক্তিগুলি নেওয়া এক কথা এবং এগুলিকে কার্যে পরিণত করা আর এক কথা। সুতরাং আমি একমত যে এটার মধ্যে আন্তরিকতা আছে কিনা। নেহেরু লিয়াকৎ যে চুক্তি ছিল সেই চুক্তি মানা হয় নি। তাছাড়া জেনেভা এগ্রিমেণ্ট যেটা আছে এটাও হয়ত মানা হয়নি এবং আমাদের পূর্ব বাংলা থেকে ইয়াহিয়ার জঙ্গীশাহী আক্রমণ সেটা আমাদের পশ্চিম বাংলার ৪-৫ কিলোমিটারের মধ্যে হয়ত এসে পড়েছে এবং অনেক লোক সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি আরও বলতে চাই যে, আমাদের এই সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পূর্ব বাংলার ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের মত গণ্য করতে হবে। আমি বলতে চাই সরকার পক্ষকে যে, এই প্রস্তাব শুধু কাগজে না লিখে মুখ্যমন্ত্রী তো দিল্লী যাচ্ছেন, তিনি বলুন কেন্দ্রীয় সরকারকে যে এদের স্বীকৃতি দিতে হবে। আমি আনন্দিত যে, এই প্রস্তাবের মধ্যে অস্ত্রশস্ত্র কথাটি আছে এবং তার সঙ্গে আছে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এখানে আমি একটু বলতে চাই, অস্ত্রশস্ত্র কথাটাকে গৌণ করে মুখ্য হিসাবে যদি চাল, মুড়ি, বিড়ি এগুলিকে ধরা হয় তাহলে খারাপ হবে এবং এই প্রস্তাবের কোন অর্থ থাকবে না। তাই আমি বলছি এক মাস বারো দিন পরে কেন এই প্রস্তাব নিতে হবে, এটা আপনারা তো ইচ্ছা করলেই করতে পারেন। আপনার দিল্লীতে গিয়ে বলুন বা সমস্ত জায়গা থেকে দিল্লীতে গিয়ে আবেদন করুন যে, সেই সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক বা অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া হোক। যাই হোক এছাড়া এই প্রস্তাবের মধ্যে অন্যান্য যে সমস্ত কথা রয়েছে যে, ইয়াহিয়া খান খারাপ লোক বা তার গণহত্যা অভিযানকে ধিক্কার জানানো হোক- এগুলি জানিয়ে লাভ নেই কারণ এক একটা শ্রেণীর এক একটা চরিত্র থাকে এবং সেই চরিত্র মত সে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিক্রিয়াশীলদের পায়ের তলা থেকে যখন মাটি সরে যায় তখন তারা সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে এবং শেষ কামড় দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং সেটাই পূর্ব বাংলায় হচ্ছে এবং তার ঢেউ এখানে এসেছে। ঠিক ইলেকশনের আগে প্রেসিডেণ্ট রুলের সময় আমরা দেখেছি যে, বিভিন্ন জায়গাতে গ্রামে সি আর পি মিলিটারী পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের সীমান্তে চীন আছে, যে কোন সময় তারা আক্রমণ করতে পারে। এগুলি প্রতিক্রিয়াশীলদের পয়েণ্ট, এক ঠেকা দেওয়ার জন্য তাঁরা অনেক কথা বলেনে। এগুলি যাঁরা করেন সেই সরকার কি করে পূর্ব বাংলার অন্দোলনকে সমর্থন জানাবেন? যা হোক সরকার পক্ষ থেকে শুনলাম যে, তাঁদের নাকি আন্তরিকতা আছে। ভাল কথা আনন্দের কথা। আমাদের এই পশ্চিম বাংলার মানুষ যখন জাগবে, যারা অত্যাচারিত, নিষ্পেষিত তারা একদিন না একদিন জাগবে এটা খুব পরিষ্কার। তখন তাঁরা মন্ত্রিসভায় থাকুন আর নাই থাকুন, পশ্চিম বাংলার নাগরিক হিসাবে তাদের যে আন্দোলন হবে তাকে অন্ততঃ অন্তর থেকে সমর্থন জানাব এই বলে আমি শেষ করছি।