পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৭৭

সামরিক একনায়কতন্ত্রের কবল থেকে ছিনিয়ে আনবার জন্য আমাদের সর্বপ্রকার সাহায্য দান করা প্রয়োজন। যদি অস্ত্রসাহায্যের প্রয়োজন হয় সেই সাহায্য আমাদের করতে হবে। আমি সঙ্গে সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, আজকে বিরোধী দলের মাননীয় নেতা তাঁর বক্তব্যের সময় মুসলিগ লীগ সম্পর্কে কটাক্ষ করেছেন, এখন এই কটাক্ষের সময় নয়। আর একটি কথা আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, সীমান্তের ওপার থেকে দশ লক্ষের বেশী লোক এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে এবং তারা সম্পূর্ণ নিরাশ্রয় এবং আরও বহুসংখ্যক লোক আমাদের এখানে এসে উপস্থিত হবে। আমি মুর্শিদাবাদের সীমান্ত থেকে এসেছি। আমাদের এলাকা থেকে সংবাদ পেয়েছি যে, প্রতিদিন ১০ হাজার করে লোক একমাত্র জলঙ্গী সীমান্ত অতিক্রম করে উপস্থিত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তার উপর অবস্থান করছেন এবং হাজার হাজার মানুষের কোনরকম আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। মাননীয় স্পীকার মহাশয়, আপনি সরকারের কাছে অনুরোধ রাখবেন যেন এই সমস্ত লোকদের জন্য উপযুক্ত আশ্রয়ের অবলম্বন করা হয়। কথা বলে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।

 শ্রী গোপাল বসুঃ মিঃ স্পীকার, স্যার লবীর বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা অধিকার আপনি খর্ব করতে চান? আপনি কে এস বি-র লোকদের এখানে থাকতে অনুমতি দিয়েছেন, তা না হলে তারা এখানে কি করে আসে? সেদিনও এই নিয়ে গোলমাল হয়েছে, আজকে আবার তারা এখানে এসে ঘোরাফেরা করছে। আমি জানি আপনি পারমিশন দেননি, অথচ তারা এখানে ঘোরাফেরা করছে। আমাদের মেম্বারদের অসুবিধা সৃষ্টি করছে। এটা যদি এইভাবে চালান তাহলে আপনি আমাদের বলে দিন যে, পারমিশন দিয়েছি — তাহলে আমরা বুঝতে পারছি আপনার অনুমতি আছে, আর যদি না হয় সেটা খুলে বলুন। আর যদি না হয় -সেটা আপনি পারমিশন দেবেন না- আমাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করবার জন্য নয়, অধিকার রক্ষা করবার জন্য। কাজেই ওটা যাতে বন্ধ হয়- তার জন্য স্ট্রিক্টলি আপনার অফিসে বলুন।

 মিঃ স্পীকারঃ এর আগেও আপনাদের অভিযোগ আমি লক্ষ্য করেছিলাম। আজও আপনি অভিযোগ করলেন। আমি দেখব যাতে কোন মাননীয় সদস্যের অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়।

 শ্রী দিলীপ কুমার রায়: মাননীয় স্পীকার মহাশয়, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহাশয় এখানে যে প্রস্তাব রেখেছেন, তাঁর প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আমার বক্তব্য রাখতে চাই। তার সাথে সাথে ওপার বালার যারা শোষণ থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করছে, তাদের জানাই আমার অভিনন্দন।

 মাননীয় স্পীকার মহাশয়, আপনি জানেন ১৯৪৭ সালে হিন্দু-মুসলমান এর দুই জাতি- এই ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করা হয়েছিল। সেদিন আমরা ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফ থেকে তীব্র করেছিলাম। আজকে অনেক মাননীয় সদস্য এখানে উপস্থিত আছেন, তাঁরা সেদিন তাদের দ্বিজাতিতত্ত্বকে মেনে নিয়ে এই দেশ বিভাগকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আজ ওপার বাংলায় যা ঘটছে তা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, দ্বিজাতিত্ত্ব ভ্রান্ত এবং তাঁদের বক্তব্যও ভ্রান্ত।

 মাননীয় স্পীকার, স্যার, আমি এই প্রসঙ্গে বলতে চাই যে, ওপার বাংলায় ইয়াহিয়া সরকার যে বর্বর আক্রমণ চালাচ্ছে, সেই ঘটনার বিবরন দেওয়ার ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছি না। তবু আমি বলতে চাই- ওপারের যে আন্দোলন, যে আন্দোলন জাতীয়তাবাদের আন্দোলন দেশপ্রেমের সংগ্রাম গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম। কিন্তু আমরা কি দেখছি! ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে,আজকে অনেক প্রগতিশীল রাষ্ট্র যারা সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তারা নীরব হয়ে আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, রোডেশিয়া, আরব এদের প্রশ্নে যারা সোচ্চার, ভিয়েৎনামের নামে যারা মুখরিত, আজকে তাদের নীরবতা কি কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। আমি মনে করি, এই হাউসের পক্ষ থেকে এই নীরবতা বিরুদ্ধে ধিক্কার জানানো হোক।

 আমি সীমান্ত কোচবিহার জেলার প্রতিনিধি। আমি সেখানে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, মুক্তিফৌজের অনেকের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। আমি তাঁদের অটুট মনোবল লক্ষ্য করছি। তাঁরা আমায় এই কথা বলেছেন,