পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৭৮

আমাদের দেশে দুর্ভিক্ষ আসেনি, আমাদের দেশ বন্যাপীড়িত নয়, আমাদের দেশে মহামারী দেখা দেয় নাই। কাজেই শুধু অন্নবস্ত্রের এই সাহায্য দিলে চলবে না, আমাদের অস্ত্র দিন যাতে ইয়াহিয়া সরকারের আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারি। এই দুঃখের দিনে আমরা আক্রান্ত হলেও ভারত সরকার নীরব। আজকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে অস্ত্রশস্ত্র দেওয়ার জন্য তার উল্লেখ করে আমি বলতে চাই শুধু অস্ত্রশস্ত্র নয় আমাদের এমন গণআন্দোলন ও জনমত সৃষ্টি করতে হবে যাতে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র স্বাধীন বাংলা সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং সর্বতোভাবে সাহায্য করে তাদের সংগ্রামকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সচেষ্ট হয়। এই প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই ওপার বাংলা থেকে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু এই বাংলায় এসেছে। আমি দেখেছি আমাদের হলদিবাড়ি থানায় প্রায় দু,লক্ষ লোক এসেছে। মাননীয় মন্ত্রী সন্তোষ রায় মহাশয় সেখানে গিয়েছিলেন, কিন্তু আজকে ১৫-১৬ দিন হল লক্ষ লক্ষ লোক যারা গাছতলায় পড়ে রয়েছে, কোন আশ্রয় পাচ্ছে না, কোন খাদ্য পাচ্ছে না, তাদের কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না,আমি মন্ত্রিমহাশয়কে সব কথা জানিয়েছি অথচ এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কাজেই সরকারী দানের কথা উল্লেখ করে বলতে চাই যে, যুদ্ধকালীন ব্যবস্থা যেরকমভাবে নেওয়া হয়, সেইরকমভাবে যেন আতি সত্বর এই ব্যবস্থা করা হয়। এই দাবি রেখে আমার বক্তব্য শেষ করছি।

 শ্রী তিরিবরণ ভাদুড়িঃ মাননীয় স্পীকার মহাশয়, আজকের এই সভায় আমাদের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অজয় কুমার মুখোপাধ্যয় যে প্রস্তাব রেখেছেন, সেই প্রস্তাবের বিশেষ সারমর্ম দেখছি দিল্লীর মসনদে গণতন্ত্রের ধ্বজাধরী কংগ্রেস সরকার সেই মসনদে সুপ্রতিষ্ঠিত। যে কংগ্রেস সরকার গণতন্ত্রের কথা না বলে, প্রগতিবাদের কথা না বলে, সকাল বেলা জল গ্রহন করেন না, সেই সরকারের কাছে আজকে আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীন সরকারের দাবি এবং ইয়াহিয়া সরকারের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র বাংলাদেশের জনগণের উপর যে ব্যবহার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজনের দাবি জানানো হয়েছে। মনে হচ্ছে এই দাবি যেন একটা কাগজে লেখা ছাড়া আর কিছু নয়। কেননা, আজকে দীর্ঘদিন পরে দেখছি প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল নিছক একটা ভাঁওতা দিয়ে ইন্দ্রিরা সরকার সামান্য একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ঘোষণা দেবই, অস্ত্রশস্ত্র দেবই। এই ঘোষনা দিলেই আমাদের অস্ত্রশস্ত্র দিতে বেশী দেরী লাগবে না। কিন্তু দেখছি আজকে প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল এখনও সেই ঘোষণা এল না, অস্ত্রশস্ত্রের কথা তো আলাদা। সেই সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি পূর্ব বাংলার জনগণ ইয়াহিয়া সরকারের অত্যাচারে আমাদের মা বোনেরা যেভাবে আজকে পদ্মা পেরিয়ে এবং বিভিন্ন বর্ডার পেরিয়ে আমাদের এই অঞ্চলে বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছে, তার প্রতি কণামাত্র সাহায্য তো দুরের কথা, সমবেদনা পর্যন্ত দেখাতে পারছে না, এটি দুঃখের বিষয়। যে কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের মুসলীম লীগের সঙ্গে কোয়ালিশন করেছেন, সেই মুসলিম লীগের কোন সদস্যকে আজকে দেখতে পাচ্ছি না। বেলেডাঙ্গায় প্রায় এক মাস আগে মস্ত বড় জনসভা করে, মুসলিম লীগের মন্ত্রিগণ কথা বলেছেন এবং প্রচুর লোক তাঁদের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন যে, আপনারা পূর্ব বাংলায় যে জনযুদ্ধ বা গণমুক্তির যুদ্ধ চলছে, সেই যুদ্ধের ব্যাপারে আপনাদের ভূমিকা কি? বড় দুঃখ, লজ্জা, ক্ষোভের সঙ্গে আজকে আমাকে সভায় বলতে হচ্ছে যে, তাঁদের মুখ দিয়ে একটা কণা কথাও বেরোয়নি। তাঁর কাছে অনেক মুসলমান ছেলে, আমার দলের মুসলমান লোক চিরকুট দিয়ে বলেছিলেন যে মোল্লা সাহেব বলুন পূর্ব পাকিস্তানে যে লড়াই চলছে সেই লড়াই সম্পর্কে আপনাদের ভূমিকা কি? সেই ভূমিকা আমরা গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী কংগ্রেসীরা যে কোয়ালিশন সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে তাদের কাছে কতখানি আশা করব। ওরা আবার গতন্ত্রের কথা বলেন। ভাঁওতা দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রেখেছেন। আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি অবিলম্বে কথাটা তাঁরা ব্যবহার করেছেন। আমরা পূর্বেই দেখেছি এই সমস্ত কথা ব্যবহার করা হয় সাধারণ মানুষকে ধোঁকা বা ভাঁওতা দেবারে জন্য। আমরা তাই বলতে চাই অবিলম্বে কথাটা বাদ দিয়ে একটা সময় বেঁধে দেওয়া হোক দশ দিন কি সাত দিন কি পনের দিন সেই সময়ের ভেতর যদি ইণ্ডিয়া সরকার আমাদের দাবি মেনে না নেন, তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা আমাদের আদায় করে নিতে হবে এই কথা এই সভায় সমস্ত সদস্যের বিবেক বুদ্ধির প্রশ্ন নিয়ে বলা উচিত। জয়নাল আবেদিন মহাশয় অনেক বড় বড় সুন্দর সুন্দর কথা বললেন। কিন্তু তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন তাঁরা তো বলেছিলেন আকারে ইঙ্গিতে যে আমরা স্বাধীনতা ঘোষনা করে দিচ্ছি, অস্ত্রশস্ত্র দিচ্ছি। কিন্তু কোথায় দিচ্ছেন? কই তাঁদের ইন্দ্রিরা সরকার তো এখনও