পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩০২
শিরোনাম সূত্র তারিখ
কোলকাতায় মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির জনসমাবেশে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের দাবী দৈনিক আনন্দবাজার ২৯ মার্চ, ১৯৭১

বাংলাদেশে অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি দানের দাবী

(স্টাফ রিপোর্টার)

 কলকাতা, ২৯ শে মার্চ, -দুই বাংলার বেড়া ভেঙ্গে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেবার জন্য মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শ্রী জ্যোতি বসু আজ শহীদ মিনার ময়দানে এক বিশাল জনসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন।

 শ্রী বসু বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের লড়াইয়ের জন্য সরবরাহেরও দাবী জানিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় কংগ্রেসী সরকারের “মিষ্টি মিষ্টি” কথার সমর্থনের বদলে বাংলাদেশকে সর্বপ্রকার সাহায্যের দাবী জানান। শ্রী বসু অবশ্য বলেন, এ সাহায্য কেন্দ্রের কংগ্রেসী সরকার দেবেন না। কেন্দ্রীয় সরকারের আচরণকে তিনি ‘ভণ্ডামি’ বলে বর্ণনা করেন।

 সভায় আর এক বক্তা শ্রী হরেকৃষ্ণ কোঙার তথ্য ও তত্ত্ব উপস্থিত করে বলেন, নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়েও মুজিবর রহমানকে সরকার গড়তে দেওয়া হয়নি। তাই পশ্চিমবঙ্গের সামান্য ক’টি বেশী আসন পেলে সংযুক্ত বামপন্থী ফ্রণ্টকেও সরকার করতে দেওয়া হতো কি না সন্দেহ। তিনি বলেন, ইয়াহিয়া খাঁ আর ইন্দিরা গান্ধী এই প্রসঙ্গে এক এবং অভিন্ন। বিচ্ছিন্ন তার অভিযোগ ইন্দিরা গান্ধীও তার লেজুড় ডান কমিউনিস্টরা তুলেছে আমার পার্টির বিরুদ্ধে এবং একই অভিযোগ তুলেছে ইয়াহিয়া খাঁ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে।

 সংযুক্ত বামপন্থী ফ্রণ্টের ডাকে আজকের এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রী জ্যোতি বসু। শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মিছিল করে বহু নরনারী জনসভায় যোগ দেন।

 শ্রী জ্যোতি বসু বলেন, পূর্ব বাংলার মানুষ যে সংগ্রাম করছে, তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আজ তারা অস্থায়ী সরকার গঠন করেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। নির্বাচনে ওরা অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছে। দীর্ঘ এগারো বছর সামরিক শাসনের অধীনে থেকেছে পূর্ব বাংলার মানুষ। তবু সমস্ত সাম্প্রদায়িকতা ভুলে ঐক্যবদ্ধ এই অভিযান বিস্ময়কর। তিনি অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমরা ওঁদের পাশে আছি। পূর্ব বাংলার লড়াই আমাদেরও লড়াই, ওঁদের পরাজয় আমাদেরও পরাজয়।

 শ্রী বসু বলেন, আমার বিশ্বাস আমরা ওঁদের সাহায্য করতে পারব। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে কংগ্রেস সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ওঁদের অস্ত্রের প্রয়োজন। অস্ত্র ওঁরা কেড়ে নিচ্ছেন এটাই মুক্তিযুদ্ধের নিয়ম। এমনকি মেয়েরাও লড়াই করছেন। ওষুধ-ডাক্তার দরকার। কমপক্ষে ওয়াটার বটলও আমরা পাঠাতে পারি।

 তিনি এ প্রসঙ্গে টাকার দরকারের কথা বলেন। তাই একদিনের মাইনে বা দু-এক ঘণ্টা বেশী কাজ করে মজুরী দানের কথা বলেন।