পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩০৩

প্রস্তাব

 সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে ঐতিহাসিক সংগ্রামে পূর্ব বাংলার মানুষের পাশে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে পশ্চিম বাংলার মানুষেরা দাঁড়াবে। শুধু নৈতিক কর্তব্যবোধেই নয় গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বাস্তব প্রয়োজনে ভারতের জনসাধারণ বাংলাদেশের জঙ্গী আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য ঐ দেশের মানুষকে সাহায্য করবে।

 প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে শুধু মৌখিক সমর্থনই বাংলাদেশের মানুষের কিছু উপকার করবে না। প্রস্তাবে তাই প্রকৃত সাহায্য দেবার জন্য এবং অবিলম্বে বাংলাদেশের সার্বভৌম স্বাধীন প্রজাতন্ত্রকে ভারত সরকার যাতে স্বীকৃতি দেন তার জন্য দাবী তোলা হয়েছে।

 সংযুক্ত বামপন্থী ফ্রণ্টের আহ্বায়ক শ্রী সুধীন কুমার সভায় প্রস্তাবটি পেশ করেন।

 শ্রী হরেকৃষ্ণ কোঙার বলেন, জনগণের রায়ে পূর্ব বাংলার মানুষেরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাধা পেল কায়েমী স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে। তাই তাঁদের কাছে খোলা ছিল গোলামীর পথ অথবা মুক্তির পথ। গর্বের বিষয় যে, তাঁরা মুক্তির পথই বেছে নিয়েছেন। সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তাঁরা বেছে নিয়েছেন মুক্তির পথ। তাই তাঁদের সঙ্গে আমরা আছি। পূর্ব বাংলার মানুষকে আজ অস্ত্র, রসদ, ওষুধপত্র প্রভৃতি দিয়ে সাহায্য করা উচিত। তিনি সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে আরো বলেন, পূর্ব বাংলার সংগ্রামকে নিয়ে স্বার্থসিদ্ধির কাজে লাগাবার জন্য প্রতিক্রিয়াশীলরা বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছে। তাতে যেন কেউ সায় না দেয়।

 সর্বশ্রী জ্যোতি ভট্টাচার্য, সুকুমার রায়, রাম চ্যাটার্জি, নেপাল ভট্টাচার্য প্রমুখও বক্তৃতা করেন।

হাওড়ার নাগরিকদের সভা

 যুগান্তরের হাওড়া অফিস থেকে জানান হয়েছে যে, সোমবার হাওড়া টাউন হলে নাগরিকদের এক সভায় স্বাধীন বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষদের অভিনন্দন জানিয়ে তাঁদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়েছে। কেবল মাত্র সি-পি-এম ব্যতীত প্রায় সব দলই এই সভার উদ্যোক্তা ছিল। শ্রী সুরেশ্বর দত্তের পৌরোহিত্যে সম্পন্ন এই সভায় ইয়াহিয়ার বর্বর অত্যাচারের প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের যুবশক্তির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

 সর্বশ্রী অরবিন্দ ঘোষাল-ফঃ বঃ, সরদিন্দু শেঠ-কংগ্রেস সংগঠন, সর্দার আমজাদ আলী-বাং কং, প্রফুল্ল রায়-কং, অমর মজুমদার-সি, পি, আই শংকর বন্দোপাধ্যায়-কংগ্রেস সং, রামপ্রসাদ শর্মা-পি-এস-পি, কৃষ্ণপদ রায়-কং-শা, দিলীপ দাশ ও সুবোধ কর প্রভৃতি এই সভায় বক্তৃতা করেন।

হাওড়া ছাত্র মিছিল

 আজ হাওড়া শহরের সব স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা কালো ব্যাজ পরেন। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বিরাট এক ছাত্র মিছিল হাওড়া শহর পরিক্রম করে স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিফৌজকে অভিনন্দন জানায়। নরসিংহ দত্ত কলেজ, ব্যাঁটরা মধুসূদন পাল চৌধুরী বিদ্যালয়, ব্যাঁটরা শিক্ষায়তন, রামকৃষ্ণ ইনষ্টিটিউট মিছিলের আয়োজন করে।

 ছাত্ররা ব্যাঁটরা থানার সামনে পাক প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খাঁয়ের একটি কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।