পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩১১

হৃদয়াবেগের বান ডাকিয়াছে ঠিকই কিন্তু ওদেশে যে বান ডাকিয়াছে রক্তের। অতীতে এই ভারতই আফ্রো-এশিয়ার হইয়া পিসীমার ভূমিকা অনেক লইয়াছে, কিন্তু বিনিময়ে পাইয়াছে গলাধাক্কা-অনন্তঃ কোনায়। আরবদের হইয়া গলা ফাটাইয়া ইজরাইলকে আসামী বানাইয়াছে, অথচ কাশ্মীরের ব্যাপারে এ ছটাক আরব নেক নজরও কুড়াইতে পারে নাই। এবার যাহা ঘটিতেছে, তাহা কিন্তু ভারতেরই দ্বারপ্রান্তে। ঝাপটা ঝটকা সব এই দেশের গায়েই লাগিবে। যদি-যদির কথা বলিতেছি-‘বাংলাদেশের প্রজ্বলিত প্রাণাগ্নি নিবু নিবু হয় তবে দলে দলে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বিপন্ন বিতাড়িত মানুষের জোয়ার এ দেশের তটে আছড়াইয়া পড়ে ঠেকাইবে কে? প্রশ্নটা তাই ভারতের পক্ষে শুধু মানবতার নয়-আত্মরক্ষার। ওখানকার সংগ্রাম আমাদেরও সংগ্রাম।

 ওই দেশের অগণিত মানুষ আজ বড় আশায় এ দেশের দিকে চাহিয়া আছে। আমরা কী দিব তাহাদের কি দিতে পারি? শুধু মামুলী রিলিফ নয়। সেটা এই পরিস্থিতিতে যাহারা রুটি চায় তাহাদের পাথর মারিয়া ফিরাইয়া দেওয়ার মন। এমনকি শুধু হালকা হাতিয়ারে কুলাইবে না। রণাংগনের শেষের দিকটার রিপোর্টে ক্রমশঃ স্পষ্ট হইয়া উঠিতেছে যে, ‘বাংলাদেশের’ মুক্তিফৌজের সব আছে-বীরত্ব সাহস ইত্যাদি সবকিছু-কিন্তু শুধু সাহস, এমন কি শুধু শত-সহস্র-লক্ষ শির ডালি দিয়াও এ যুগের যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত হয়তো জেতা যায় না। ভারী অস্ত্র এবং মাথার উপর ‘বিমানছত্র’ চাই। ওই একটি বিষয় বাংলার মুক্তিফৌজ আজও অসহায় হইয়া আছে, বিপক্ষ তাহার পূর্ণ সুযোগ লইতেছে। ‘জনারেল মনসুন কবে দেখা দিবেন কে জানে, তাহার আগে বাংলাকে বাঁচানো চাই-বাঁচানোর উপকরণ সরবরাহ একান্ত জরুরী। যতটা তাহাদের স্বার্থে ততটা আমাদেরও যদি কূটনৈতিক কলংকের ভয়টাই বাধা হইয়া থাকে তবে সেটাকেও দুর করার সোজা রাস্তা আছে-সে রাস্তা লওয়ার বিস্তর ঐতিহাসিক নজিরও বর্তমান ও বিদ্যমান-অস্থায়ী ‘বাংলাদেশ’ সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি।