পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩২০

হইতেছে। এই নুইসেন্স এবং এই সামরিক বিপদ হইতে উদ্ধার পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় স্বাধীন বাংলাদেশের নিজের পায়ে দাঁড়াইতে সাহায্য দেওয়া-যে সাহায্য কূটনৈতিক এবং সামরিক উভয় প্রকার।

 সুতরাং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরণ সিং এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রামের উদ্দেশ্যে জনসাধারণের পক্ষ থেকে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার নামে যে গণতন্ত্র স্বাধীনতাকে বর্বরেরা আজ নির্মমভাবে হত্যা করিতেছে আমরা আবেদন জানাইতেছি অবিলম্বে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। ভারতবর্ষের সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত আইনসভা এবং সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমস্বরে ওই দাবি উত্থাপন করিতেছেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের নামে ভারতীয় জনতার নিকট শপথ গ্রহণ করিয়াছেন এবং ভারতীয় জনতা তাহাকে বিশ্বাস করিয়া নির্বাচনে জয়মাল্য অর্পণ করিয়াছেন। ইন্দিরাজী কি সেই শপথ পালন করিবেন না? তিনি যেন মনে রাখেন রাষ্ট্রচালনা ও রক্ষা করতে হইলে কূটনৈতিক বুদ্ধি ও চাতুর্থ যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সাহসের এবং কঠিন সংকল্পের। সেই কূটনৈতিক বুদ্ধি ও সাহস মুহূর্ত আজ উপস্থিত। এক শতাব্দীর মধ্যেও এমন সুযোগ আর আসিবে না- রাওয়ালপিণ্ডির ফ্যাসিস্ট দুশমনদিগকে ঘায়েল করিতে হইবে। শত্রুর শেষ রাখিতে নাই, প্রাচীন কূটনৈতিক মন্ত্রী মহোদয় যেন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে ভুলিয়া না যান। সুতরাং ভীতি ও সংকোচ তারা কাটাইয়া উঠেন।

 নয়াদিল্লী প্রভুদের উদ্দেশ্যে আর একটি কথাও সবিনয়ে নিবেদন করিতে পারি। চীন ইয়াহিয়া খানের পক্ষ হইয়া যত তর্জন-গর্জনই করুক না কেন শেষ পর্যন্ত বাঙালি জাতির স্বাধীনতাকে হাতে-কলমে দমন করিবার জন্য তারা হিমালয় পার হইয়া সমতল ভূমিতে নামিয়া অস্ত্র ধারণ করিবে না।