পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩৭০

করার যাহার গণতান্ত্রিক অধিকার। এই সরকারের পিছনে জনতা আছে, আছে বিপুল জনসমর্থন, শুধু ভৌগোলিক ভাগটা বিরূপ বলিয়াই সে অসিদ্ধ হইয়া যায়? এইভাবে বোধ হয় স্বয়ং ঈশ্বরও অসিদ্ধ হইয়া যান প্রমাণাভাৎ।

 ইহার পর কেহ যেন গণতন্ত্রের নামে কথায় কথায় শপথবাক্য উচ্চারণ না করেন। শক্তই একমাত্র শর্ত - গণতন্ত্রের এই তো অর্থ দাঁড়াইতেছে। পিণ্ডি সরকারও যে পাকিস্তানকে আজ এক জাতি বলিয়া মনে করে না তাহার স্বীকৃতি পিণ্ডি-ফোমের আচরণেই আছে। বিশেষ করিয়া পশ্চিম পাকিস্তানী সরকার বাঙালী জাতির নিধন-উৎসাদনে যখন মাতিয়াছে তখন ধরিয়া লইতে হইবে ওই দেশে জাতি আসলে দুইটা, দুইটা জাতিকে এক রাষ্ট্রের অন্তরালে বাঁধিয়া রাখিতে হইবে ইহা কোন দেশী জরবদস্তি?

 কুটনৈতিক বিধিবিধান ছাড়াও এই প্রসংগে অন্তত ভারতের আরও কয়েকটি দিক ভাবিবার আছে। নানা রাজ্য আর নানা দল সমস্বরে যে দাবী তুলিয়াছে, যে আহ্বান জানাইয়াছে তাহাকে উড়াইয়া দেওয়া সরকারের পক্ষে প্রাজ্ঞজনোচিত হইবে না, ন্যায়সংগতও না। কেননা পত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গনতন্ত্র মানে সকল দল। ইহা ছাড়া আজ বাংলাদেশের বিপুল প্রত্যাশা ভারতের প্রতি যে শুভেচ্ছা জাগাইয়া অতিমাত্রার বিলম্ব ঘটিলে তাহা ধীরে ধীরে লয় পাওয়ারও বিলক্ষন ভয়। সেই হতাশা আর তিক্তাতার পটুভূমিতে চীনের ছায়াটি দীর্ঘ হইতে ধীর্ঘতর হইয়া যাইতে কতক্ষণ? আর আগানো কঠিন ভারত হয়তো শুধু এইটুকুই তাকাইয়া দেখিয়াছে? কিন্তু এখনও খেয়াল করিতে পারে নাই যে পিছানো অসম্ভব। সময় আর স্রোত কাহারও জন্য অপেক্ষা করে না কথায় বলে। অপেক্ষায় অপেক্ষায় ক্লান্ত বাংলাদেশের আক্রান্ত জনগণের আহত মুখচ্ছবি হয়তো একদিন নীরস তিরস্কারে ভারতকে বলিয়া দিবে-চিরতরে অপেক্ষা করিয়া রহে যার প্রত্যাশী একটি জাতির ভালবাসা একটি শুভেচ্ছাও।