পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩৭৭
শিরোনাম সূত্র তারিখ
‘অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃত দিতে হবে’-অধ্যাপক সমর গুহ এমপির নিবন্ধ যুগান্তর ২৩ মে, ১৯৭১

 ১। বাংলাদেশের জাতীয় অভ্যুত্থান ভারতের জনমতকে যে কী প্রবলভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে তার জাতীয় প্রতিফল ঘটেছে ভারতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত সর্বসম্মত ঐতিহাসিক প্রস্তাবে। সমগ্র ভারতীয় জনতা এই আশা করেছিল যে এই প্রস্তাবকে যথার্থভাবে কার্যকরী করা হবে বাংলাদেশের স্বাধীন প্রজাতন্ত্রী সরকারকে আশু স্বীকৃতি দিয়ে। কিন্তু ৭ই মে বিরোধী দলের বেঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এরূপ স্বীকৃতি দানে অক্ষমতা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু সমগ্র বিরোধী পক্ষ ঐক্যবদ্ধভাবে এই মত প্রকাশ করেছেন যা সংসদ গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে কার্যকর সাহায্য দেওয়ার জন্য অবিলম্বে এই দেশের স্বীকৃতিদান ভারত সরকারের পক্ষে এক অপরিহার্য জাতীয় কর্তব্য।

 ২। সরকার পক্ষ মনে করেন যে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে এখনও যথাযোগ্য সময় আসেনি এবং এরূপ স্বীকৃতিদান বর্তমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে সহায়কও হবে না। পক্ষান্তরে বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে প্রায় ঐক্যবদ্ধভাবে এই অভিমত ব্যক্ত করেছে যে, বাংলাদেশের আশু স্বীকৃতিদান একান্ত আবশ্যক এবং এরূপ স্বীকৃতি দানের পন্থায়ই বাংলাদেশের সংগ্রামীদের কার্যকর সহায়তা দিয়ে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এই সংগ্রামকে সম্পূর্ণ করা সম্ভব।

 ৩। শুধু বিরোধী পক্ষই নয়-বহু রাজ্যের বিধানসভা, ভারতের অগণিত গণ-প্রতিষ্ঠান এবং শাসক কংগ্রেসের বহু প্রতিষ্ঠিত নেতা বাংলাদেশকে আশু স্বীকৃতিদানের দাবী জানিয়েছেন। এখনই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার সরকারী নীতি শুধু অস্পষ্ট, অসঙ্গতিপূর্ণ এবং অযৌক্তিকতাই নয়-গণতান্ত্রিক দিক দিয়েও সরকার আজ ভারতের জনমত থেকে বিচ্ছিন্ন। কেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া এখন সে দেশের পক্ষে সহায়ক নয়, কারণ যুক্তিসঙ্গত বিশ্লেষণ প্রকাশ্যে বা নেতৃবর্গের বৈঠকে ভারত সরকার উপস্থিত করতে সক্ষম হন নি। অথচ, বাংলাদেশের প্রতিটি দেশ-প্রেমিক বাঙ্গালী প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং তাদের সদ্যগঠিত জাতীয় সরকার সর্বসম্মতভাবে শুধু ভারত সরকারের কাছেই নয়, বিশ্বের প্রতিটি সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন তাঁদের সরকারের আশু স্বীকৃতিদানের জন্যে।

...নীরব কেন?

 ৪। তবু বিশ্বের ছোট-বড় রাষ্ট্র আজ বাংলাদেশের প্রশ্নে এরূপ নীরব ও নিস্ক্রিয় কেন? একথা বহুবার নগ্নভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিশ্বের কোন রাষ্ট্রেরই আজ আন্তজার্তিক স্বাধীনতা বা গণতন্ত্র রক্ষার দিকে দৃষ্টি নেই- বড় রাষ্ট্রগুলি তো বটেই, ছোট রাষ্ট্রগুলিও আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারন করে সম্পূর্ণরূপে জাতীয় স্বার্থের সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গীতে। তাছাড়া বিশ্বের কোন রাষ্ট্রই চায় না যে পাক-ভারত সমস্যায় সমাধান হোক এবং তার ফলে ভারত একটি শক্তিশালী ও প্রধান রাষ্ট্ররূপে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হোক এবং পাক ভারতের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে সব কয়টি বৃহৎ রাষ্ট্রকেই ভারতীয় উপ-মহাদেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য সদা- সচেষ্ট হতে দেখা গিয়েছে।