পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩৭৮

সবারই এক রা

 ৫। একথা আজ সুস্পষ্ট যে রুশ, মার্কিন, বৃটেন বা ফ্রান্স পাকিস্তানের বিখণ্ডন চায় না, পাকিস্তানের সংহতি রক্ষায় এই রাষ্ট্রগুলি উদগ্রীব তাই এই রাষ্ট্রগুলি বাংলাদেশের জাতীয় অভ্যুত্থানকে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ সমস্যার অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে রাজী নয়। সে জন্যে পাক বর্বরতার বিরুদ্ধে মানবিক অধিকারের প্রশ্নটি রাষ্ট্রসংঘ পরিষদে উত্থাপন করে পাকিস্তানকে বিব্রত করতে পর্যন্ত এই রাষ্ট্রগুলি রাজী নয়। পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার উদ্দেশ্যেই রাশিয়া ও বৃটেন বাংলাদেশের স্বাধিকারের একটি রাজনৈতিক সমাধানের প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি সিথিল কনফেডারেশন গঠন করে পাকিস্তানের সংহতি রক্ষা করা। শোনা যাচ্ছে যে পিণ্ডিশাহীও এই প্রস্তাবে রাজী এবং এরূপ প্রচেষ্টায় রুশ উদ্যম গ্রহণেও অসম্মত নয়।

জনতার রায়

 ৬। রুশ মার্কিন-বৃটেন- এই রাষ্ট্রত্রয় এই ঘটনাকে স্বীকার করতে রাজী নয়। যে বাংলাদেশের স্বাধিকারের প্রশ্নে রাজনৈতিক সমাধান বাংলাদেশের সার্বভৌম সত্তায় অধিকারী জন সাধারণই করে দিয়েছে। ৯৯.৬ শতাংশ গণভোটে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বন্ধন থেকে নিজেদের মুক্ত করে নিজেদের সার্বভৌম স্বাধীনতা ঘোষনা করে একটি নিজস্ব প্রজাতন্ত্রী সরকার গঠন করেছে। বাংলাদেশের সমগ্র জনতা এই সরকারের প্রতি কিরূপ সক্রিয় আনুগত্য জ্ঞাপন করেছে বাঙালীর বর্তমান সামগ্রিক গণঅভ্যুত্থান তার সুস্পষ্ট ও তাথ্যিক স্বাক্ষর। কিন্তু জাতীয় স্বার্থান্ধ আন্তর্জাতীয় রাষ্ট্রগোষ্ঠীয় কাছে এই প্রমাণ ও বাস্তব ঘটনার কোন মূল্য নেই।

 ৭। বাংলাদেশ সার্বভৌমিকতার যে শর্ত গুলি পূরণ করেছে তার চেয়ে অনেক কম শর্ত পূর্ণ করেও বিশ্বের বহু বিদ্রোহী জাতি বহু বিশ্বরাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের নিজস্ব নাম, নিজস্ব পতাকা, নিজস্ব জাতীয় সংগীত এবং স্বদেশের জাতীয় ভাষার প্রবর্তন ছাড়াও গণভোটে নির্বাচিত প্রায় সমগ্র প্রতিনিধির সমর্থন, বে-সরকারী ও বাঙালী সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর আনুগত্যলাভ এবং এই দেশের মুক্ত অঞ্চল স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের নৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাএই শর্তগুলি বাংলাদেশের সার্বভৌম সত্তার স্বীকৃতির পক্ষে শুধু যথার্থই নয় পর্যাপ্তও বটে। তাই সার্বভৌমিকতার শর্ত পূর্তির প্রশ্ন ভারত সরকারের পক্ষে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের পক্ষে বিশেষ কোন যুক্তিযুক্ত বাধা নেই। রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামান্য শর্ত পূরণের ক্ষেত্রেও অনেক স্বাধীনতাকামী রাষ্ট্রকে যে স্বীকৃতি দিয়েছে তার অনেক নজীর রয়েছে আন্তর্জাতিক ইতিহাসে।

জাতীয় স্বার্থ

 ৮। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে পাক-ভারত সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটবে কিনা এবং পরবর্তী অধ্যায়ে এই সংঘর্ষ ভারত ও পিণ্ডি -পিকিং চক্রের প্রত্যক্ষ সামরিক দ্বন্দ্বে পরিণত হবে কিনা- সেই প্রশ্নের বাস্তব বিশ্লেষণের আগে এ কথাটি বিচার করে দেখা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ভারতের জাতীয় স্বার্থ কতখানি জড়িত।

 ৯। এ কথা আজ পরিস্কার যে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের দায়িত্ব শুধু এ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতি আদলনৈতিক সমর্থনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের ভাগ্যের সঙ্গে পূর্বাঞ্চল ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক আর্থিক রাজনৈতিক এবং দেশরক্ষার ভবিষ্যৎ সমস্যাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু পূর্বাঞ্চল ভারতের স্বার্থেই নয়- সমগ্র ভারতের ভবিষ্যৎ প্রগতির জন্যও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে।

 ১০। এ কথা বিশ্লেষণের আজ আর প্রয়োজন নেই যে, পশ্চিম পাকিস্তানের আর্থিক ও সামরিক সংগঠন এবং পিণ্ডি জংগী শাসনের স্থায়িত্ব বাংলাদেশের শাসন ও শোষনের উপরে একান্তভাবে নির্ভরশীল। বাংলাদেশ পশ্চিম