পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩৮৯
শিরোনাম সূত্র তারিখ
‘স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বাকৃতি দিন’- একটি সম্পাদকীয় দৈনিক যুগান্তর ৫ জুন, ১৯৭১

স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিন

 আজ শনিবার পাঁচই জুন। প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আসবেন কলকাতায়। কি দেখবেন তিনি? সীমান্তে নেই তিল ধারনের স্থান। কলকাতার উপকণ্ঠে এসে পৌঁছেছে শরণার্থীর ঢেউ। পাক লুটেরা রাস্তায় কেড়ে নিয়েছে তাদের সর্বস্ব। প্রাণে মরেছে অনেকে। নিখোঁজ হয়েছে স্ত্রী- কণ্যা। এপারে এসেও স্বস্তি নেই। মহামারীরূপে দেখা দিয়েছে কলেরা। রাজ্য সরকার দিশাহারা। শরণার্থীর সংখ্যা চার লক্ষ ছাপিয়ে উঠেছে। অন্যান্য রাজ্যে না পাঠালে বাঁচবে না এই হতভাগ্যের দল। দু মাস অপেক্ষা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কি পেয়েছেন তারা? বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর চরম ঔদাসীন্য এবং রাষ্ট্রসংঘের অসহনীয় নীরবতা। ইয়াহিয়া আগের চেয়ে বেশী বেপরোয়া বাংলাদেশে জ্বালাচ্ছে তিনি সম্প্রাদায়িকতার আগুন। পুড়েছে অনেকে। যারা কোনমতে বেঁচেছে তারা আশ্রয় নিচ্ছে ভারতে। যতদিন যাবে শরণার্থীর সংখ্যা তত বাড়বে। ওদের ফেরার পথ বন্ধ। বন্দুক উঁচিয়ে আছে ইয়াহিয়ার বাহিনী। তাদের ইন্ধন জোগাচ্ছে স্থানীয় ধর্মান্ধের দল। গোড়ার দিকে বাংলাদেশ সরকারকে যদি স্বীকৃতি দিতেন নয়াদিল্লী তবে ঘঠত না অবস্থার এমনিতর অবনতি। মুক্তিযোদ্ধারা পেতেন দ্বিগুন মানসিক বল। বাড়ত সংগ্রামের তীব্রতা। গ্রামাঞ্চলে গড়ে উঠত প্রতিরোধ ব্যূহ। সাম্প্রদায়িক নেতাদের মধ্যে দেখা দিত সন্ত্রাস। কমত লুটপাটের ব্যাপকতা। বিপুল সংখ্যায় শরণার্থীরা হয়ত ভিড় করত না। ভারতের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে কেন্দ্রীয় সরকারের “দেখি কি হয় নীতি” এনেছে নৈরাশ্য। বাড়িয়েছে ইয়াহিয়ার স্পর্ধা এবং ভারতকে নিয়েছে আর্থিক সঙ্কটের মুখে।

 বন্ধ হবে না শরণার্থীর স্রোত। পূর্ব বাংলা থাকতে পারবে না অসাম্প্রদায়িক সাধারন মানুষ। কিসের আশায় দিন গুনছেন প্রধানমন্ত্রী? বৃহৎ শক্তিগুলো কি লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর হাত ধরে তাদের নিজেদের বাড়ীঘরে বসিয়ে দিয়ে আসবে? তারা কি এদের নিরাপত্তার গ্যারাণ্টি দেবে? আর্থিক চাপে ইয়াহিয়ার নাকে খত আদায় করবে? গত দুমাসের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি কি বুঝতে পারেনি জল কোয়ায় গড়াচ্ছে? জিইয়ে রাখবে তারা ইসলামাবাদকে। শক্তিসাম্য ভাঙ্গতে দেবে না। এশিয়ার এ অঞ্চলে কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ বাস্তব। অখণ্ড পাকিস্তানের অপমৃত্যু ঘটছে। পূর্ব এবং পশ্চিমের বোঝাপড়া অসম্ভব। স্বাধীন বাংলাদেশ ছাড়া শরণার্থীরা ফিরতে পারবে না নিজেদের বাড়ী-ঘরে। এই সহজ সত্য মেনে নিতে কর্তৃপক্ষের দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাবই সৃষ্টি করছে যত জটিলতা। শ্রীমতি গান্ধী আশায় আশায় অনর্থক সময় কাটাচ্ছেন। এখন যে অবস্থা চলছে তার ব্যতিক্রম না ঘটলে ছ মাস কেন, ছ বছরেও শরণার্থীরা ছাড়বেন না ভারতের মাটি। পূর্ব বাংলায় শক্তি সংহত করবেন ইসলামাবাদ। মুক্তিসংগ্রামীরা পাবেন প্রচণ্ড বাধা আর ক্রমবর্ধমান শরণার্থীর বোঝা নিয়ে ভারত খাবে হাবুডুবু। সমূহ বিপদ সামনে দেখেও মন স্থির করতে পারছেন না কেন্দ্রী সরকার। গোটা জাতিকে কোন অন্ধকার গুহায় টেনে নিচ্ছেন তাঁরা।

 বিভিন্ন রাজ্যে শরণার্থীদের অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া খুবই দরকার-সন্দেহ নেই। এ ব্যবস্থা অবশ্যই সাময়িক। তাতে পাওয়া যাবে না সমস্যার স্থায়ী সমাধান। গোঁজামিল দিয়ে সময় কাটাবার পালা শেষ হয়েছে? দেশবাসীর ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জবাব দিন নয়াদিল্লিী-শরণার্থীদের নিয়ে তাঁরা কি করবেন? কি করে থামাবেন বন্যার স্রোত? কিভাবে পাঠাবেন, তাঁদের বাংলাদেশে? বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর কাছে নয়াদিলীর আকুতি-মিনিত ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পত্রে এবং কূটনৈতিক তৎপরতায় যাঁদের টনক নড়েনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিংয়ের